সাক্ষাৎকার
হেলাল নিরব
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪ ১৮:২৩ পিএম
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪ ১৮:২৯ পিএম
বিসিবিতে কাজ করতে সবার স্বাধীনতা চান রকিবুল হাসান— সংগৃহীত ছবি
দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে অস্থিরতা ক্রিকেটাঙ্গনেও। বিসিবি প্রধানসহ বেশিরভাগ বোর্ড পরিচালকই কার্যালয়ে আসছেন না। বিসিবিতেও সংস্কারের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। এদিকে সামনে নারী বিশ্বকাপ আয়োজনের চ্যালেঞ্জ। সবকিছু বিষয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান খোলামেলা কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন হেলাল নিরব।
প্রশ্ন : দেশের ক্রিকেটে অস্থির অবস্থা চলছে। উত্তরণের উপায় কী হতে পারে বলে মনে করছেন?
রকিবুল হাসান : বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাধুবাদ জানাই। কেননা আমরা দেখছি, সব জায়গায় বৈষম্য! আমাদের এখনকার ছাত্ররা এমন একটা বাংলাদেশ চাচ্ছে যেখানে কোনো দুর্নীতি থাকবে না। অব্যবস্থাপনা বা বৈষম্য থাকবে না। অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার এখন আছে, সেখানে দুজন তরুণ উপদেষ্টা আছেন। সব অঙ্গনের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও সংস্কার জরুরি। এখানেও ক্ষোভ, দুঃখ সব কিন্তু প্রকাশ পাচ্ছে। আমি ক্রীড়া ব্যক্তি হিসেবে চেয়েছিলাম, এই সেক্টরে যেন রাজনীতিকরণ না হয়। বিসিবির কথা যদি বলি, এখানে এমন লোক দরকার, যারা ক্রিকেটকে ভালোবাসে, নিঃস্বার্থভাবে ক্রিকেটের জন্য কাজ করে। কিন্তু আমি এর ব্যত্যয় দেখেছি।
প্রশ্ন : বিসিবির পরিকল্পনা কেন কাজ করছে না ?
রকিবুল হাসান : বিসিবিতে কিন্তু করপোর্টেট ম্যানেজমেন্ট নেই। মানে প্রোফেশনালসরা কাজ করার সুযোগ পায়নি। একজন বোর্ডপ্রধানের তিনটা কাজ থাকে— পলিসি দেবে, তবে অন্যদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। অধীনদের তারা জানাবে, তিন বছর পর বা কয়েক বছর পর— তাদের লক্ষ্য আসলে কি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বাজেট নির্ধারণ করা। যেটা ঠিকভাবে হয়নি। সবশেষটি হচ্ছে, পলিসি এবং যে বাজেট এসেছে তা বাস্তবায়ন করা। সবকিছু ঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা তদারকি করা। কিন্তু এর কোনোটিই ভালোভাবে হয়নি।
কিউবা যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ফিদেল ক্যাস্ত্রো বয়স কত ছিল? ২২ বছর। তিনি আমেরিকার মতো একটা পরাশক্তির বিপক্ষে যুদ্ধ করে দেশের শাসনভার নিয়েছিলেন। আর আমাদের প্রজন্ম থেকে আজকের প্রজন্ম অনেক মেধাবী
প্রশ্ন : আপনি কি কোনো রূপরেখা দেবেন?
রকিবুল হাসান : আমি রূপরেখা চিনি না, রূপকথাও চিনি না। সাদামাটাভাবে বলি। আমাদের সাবেক ক্রিকেটাররা কিন্তু বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে কাজ করছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিসিবিতে তারা স্বাধীনতা পাচ্ছেন না। কারণ, বোর্ড পরিচালক যারা আছেন বা পর্যবেক্ষণে যারা আছেন দেখা যাচ্ছে তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। এখান থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে, তাদের সুযোগ দিতে হবে। অবশ্যই তারা বোর্ডের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। কিন্তু তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে, তারা দ্বিধায় ভুগবে, ভয়ে থাকবে। ঊর্ধ্বতনকে মন জুগিয়ে চলতে হবে। ওপর থেকে কিছু একটা চাপিয়ে দিলে সে মেনে নিচ্ছে। তাই পলিসি, বাজেট এবং বাস্তবায়ন আলাদা করতে হবে। তবে তাদেরও দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।
প্রশ্ন : বিসিবির পাইপলাইন কেন মজবুত হচ্ছে না?
রকিবুল হাসান : প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট যদি ঠিকভাবে পরিচালিত করতে না পারি, তাহলে এটা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে চলবে না। দেখেন, আফগানিস্তান কীভাবে ক্রিকেট খেলছে। কত ভালো খেলোয়াড় বেরিয়ে আসছে। তারা সেমিফাইনালও খেলছে। আয়ারল্যান্ড, হলান্ড (নেদারল্যান্ডস) এরাও ভালো করছে। তারা এগিয়ে আসছে কেন? কারণ তাদের একটি প্রোফেশনাল করপোরেট ম্যানেজমেন্ট আছে। যারা কি না ক্রিকেটটা বোঝেন না, কখনও খেলেননি এমন কেউ কি ক্রিকেটটা ভালো বুঝতে পারবে! কিন্তু ইন্টারফেয়ারটা এখানে হচ্ছে। নির্বাচকরা দল দিতে শুধু অপেক্ষাই করে থাকে। নতুন যারা আসবে বা যদি তারাই থাকে তবে এই জায়গাটিতে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে নারী বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে সংশয়ের কথা বলছেন অনেকেই? এই চ্যালেঞ্জ কি উতরাতে পারবেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা?
রকিবুল হাসান : কিউবা যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ফিদেল ক্যাস্ত্রো বয়স কত ছিল? ২২ বছর। তিনি আমেরিকার মতো একটা পরাশক্তির বিপক্ষে যুদ্ধ করে দেশের শাসনভার নিয়েছিলেন। আমরা এখন ভার্চুয়াল বিশ্বে আছি। আমাদের প্রজন্ম থেকে আজকের প্রজন্ম অনেক মেধাবী। তারা অনেক এগিয়ে। তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। আমি মনে করি, ক্রীড়া উপদেষ্টার মাঝে আগুন আছে। তিনি যদি ভালো লোকগুলোকে বিসিবি বা বিভিন্ন সংস্থায় বসাতে পারেন, তবে সবকিছু সহজ হবে। আমি তাকে নিয়ে খুব আশাবাদী।
প্রশ্ন : রাজনৈতিক পরিচয় কি ক্রিকেটারদের খেলায় প্রভাব ফেলে?
রকিবুল হাসান : রানিং ক্রিকেটার কখনও রাজনীতিবিদ হওয়া উচিত না। সাকিব, মাশরাফি তারা যদি এমপি হন, আমার তো আপত্তি নেই। কিন্তু ভাবতে হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন ত্রিশ বছর আগের নেই। এখানে আপনি খেলবেন আবার একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি হবেন, তা কিন্তু হতে পারে না। তাহলে ক্রিকেটের প্রতি ফোকাস নষ্ট হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : আগামীতে যারা ক্রিকেট নিয়ে কাজ করবেন তাদের সবচেয়ে বেশি কোন গুণগুলো দরকার?
রকিবুল হাসান : নতুন যারা আসবে বা এরাই যদি থাকে তবে তাদের পলিসি পরিবর্তন করতে হবে। কোচের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় কোচের কাজ তিনটি। কিন্তু আমাদের কোচ পুরোপুরি দল গঠনে হস্তক্ষেপ করে। একে বাদ দেয়, ওকে নেয়। এসব ঠিক না। খেলোয়াড়রা কথা না বললেও ভেতরে ভেতরে বেজার হবে। শুধু কোচ না, সব জায়গায় হস্তক্ষেপ রুখতে হবে। যার যার কাজ করতে হবে। নিষ্ঠাবান, ক্রিকেট-লাভার এবং দায়িত্বশীল মানুষকে দায়িত্ব নিতে হবে।