রুবেল রেহান
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৫২ পিএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৪ ১৭:২৬ পিএম
কামরুন্নাহার ডানা
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন এসেছে দেশের নানা ক্ষেত্রে। ব্যতিক্রম নয় ক্রীড়াঙ্গনও। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার দায়িত্ব পাওয়ায় নতুন করে আশাবাদী হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ। বিশেষ করে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) জেঁকে বসা দীর্ঘদিনের অনিময়-বিশৃঙ্খলা দূর হবে বলে প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। ক্রীড়াঙ্গনের এসব বিষয় নিয়েই প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন কিংবদন্তি সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক এবং দেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে একই বছরে খেলোয়াড় ও সংগঠক হিসেবে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া কামরুন্নাহার ডানা।
প্রবা : শুরুতে কথা বলি বাফুফেতে আপনার থাকার সময় নিয়ে। ২০০৮ সালে যখন প্রথমবার বাফুফে সভাপতি হিসেবে কাজী সালাউদ্দিন মনোনীত হন, তার সঙ্গে তো আপনারও নির্বাচন করার কথা ছিল।
কামরুন্নাহার ডানা : আমি সালাউদ্দিনের প্যানেলে ছিলাম। সেই সময় সে (সালাউদ্দিন) তো সংগঠক হিসেব জিরো, নিউকামার। আবাহনীতে খেলেছে, কিন্তু কখনও ক্লাবের মেম্বারও হতে পারে নাই, পরবর্তীতে কোচ হিসেবে ছিল। সংগঠক হিসেবে সামর্থ্য ছিল না বলেই আবাহনী তাকে সেই দায়িত্ব দেয়নি। আমি পঁচাশি (১৯৮৫) সাল থেকে মোহামেডানের মতো ক্লাবের উইম্যান্স উইংয়ের চেয়ারম্যান ছিলাম। ব্যাডমিন্টনসহ মেয়েদের অন্যান্য খেলার দায়িত্বও ছিল আমার কাঁধে। আমি যেহেতু কাউন্সিলর, হেলাল ভাইদের (আনোয়ারুল হক হেলাল) সঙ্গে বাফুফেতে পাঁচ বছর ধরে কাজ করে আসছিলাম। পাঁচ বছর ধরে নির্বাচনেরও একটি প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল আমাকে প্যানেলে রাখা হলো না। পরবর্তীতে এএফসিতে পাঠানোর কথা বলে আমাকে বোঝানো হলো। কিন্তু সেটাও শেষ পর্যন্ত হলো না। ঘটে গেল নানা ঘটনা, উত্থান হলো এখনকার কিরনের (বর্তমান নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরন)।
খেলা ছাড়ার পর ও (সালাউদ্দিন) তো সিনেও ছিল না। খোকা (সাদেক হোসেন) ভাই যখন মন্ত্রী সেই আমলে ও দুস্থ ভাতার টাকাও নিয়েছে। তখন তার কিছুই ছিল না। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সে বড়লোক হয়ে গেল! এটা (বাফুফের সভাপতি পদ) তো এখন তার কাছে রুটিরুজি। -কামরুন্নাহার ডানা
প্রবা : তার মানে প্রথম নির্বাচনেই নানা ফন্দি-ফিকির করে সভাপতি হয়েছিলেন সালাউদ্দিন?
কামরুন্নাহারা ডানা : না, সেটা বলব না। ওই নির্বাচনে সে সমর্থন পেয়ে সভাপতি হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা গেল সে কোনো কাজ করতে পারছে না। ফুটবলের সমর্থকসহ ক্রীড়াঙ্গনের মানুষেরা তার ওপর আস্থা হারাল। পরবর্তীতে সবগুলো নির্বাচনেই সে আপার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দোহাই দিয়ে পদে থেকে গেছে।
প্রবা : আপনি সবই অবগত আছেন, বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। সভাপতি ও নারী উইংয়ের প্রধানেরও পদত্যাগ দাবিতে সোচ্ছার সমর্থকরা। ‘বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাস’ নামের একটি সংগঠন তার পদত্যাগের দাবিতে দুই দিন আগে ‘লং মার্চ টু বাফুফে’ কর্মসূচি পালন করেছে।
কামরুন্নাহার ডানা : এবার সময় হয়েছে তারও (সালাউদ্দিন) পদত্যাগ করার। খেলা ছাড়ার পর ও তো সিনেও ছিল না। খোকা (সাদেক হোসেন) ভাই যখন মন্ত্রী সেই আমলে ও দুস্থ ভাতার টাকাও নিয়েছে। তখন তার কিছুই ছিল না। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সে বড়লোক হয়ে গেল! এটা (বাফুফের সভাপতি পদ) তো এখন তার কাছে রুটিরুজি। আমি শুনেছি ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে ফেডারেশনকে দেওয়া টাকা থেকে সে ব্যক্তিগত খরচের জন্য নিত। বলত, এই টাকা আমাকে আপা দিয়েছেন। কিন্তু সে যে ফুটবলটাকে তলানিতে নিয়ে গেছে, ফুটবলকে শেষ করে দিছে, র্যাংকিং কোথায় ছিল আর এখন কোথায় আছে, অন্যান্যরা (দেশ) যখন সামনে চলে আসছে, আমরা সেখানে পিছিয়ে যাচ্ছি, তারপরও সেই ব্যক্তি একজনের দোহাই দিয়ে এই পদ আঁকড়ে ধরে আছে।
প্রবা : কিন্তু সেই একজন (শেখ হাসিনা) তো এখন সরকার ক্ষমতায় নেই, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কঠিন সময় পার করছে ক্রীড়াঙ্গন। তখনকার সরকার দলের পদে থাকার কারণে অনেক ফেডারেশনের কর্তা পলাতক। অভিভাবকহীন সময় পার করছে ফেডারেশনগুলো। আপনার কী মনে হয় রাজনৈতিক পদে থাকা কোনো লোকের ক্রীড়াঙ্গনের এসব পদে থাকা উচিত?
কামরুন্নাহার ডানা : অবশ্যই থাকা উচিত না। যারা খেলার মানুষ, খেলাটাকে যারা হৃদয়ে ধারণ করে এবং স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ, তাদেরই এই পদে রাখা উচিত। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। বিদেশ ভ্রমণ, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের জায়গা বানিয়ে ফেলছে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনকে। এটা এভাবে চলতে পারে না।
প্রবা : সবশেষে, নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে আপনার কী চাওয়া?
কামরুন্নাহার ডানা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেন ছাত্র-জনতা যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তারা ওপারে ভালো থাকুক। আমাদের একটা পথ দেখিয়ে গেছেন তারা। আর নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে বলব, ক্রীড়াঙ্গন থেকে রাজনৈতিক অপছায়া দূর করুন। কোনো সভাপতি যেন দুবারের বেশি পদে নির্বাচন করতে না পারে। আমি আশা করব, তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে নেবে দেশকে। উনার হাত ধরে আমাদের ক্রীড়াও অনেক দূর এগিযে যাবে বলে বিশ্বাস আমার।