প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪ ০১:৩৬ এএম
কিলি হজকিনসন
একটি বাজে অভ্যাস যেন কিছুতেই ছাড়তে পারছিলেন না কিলি হজকিনসন। বলতে গেলে প্রায় সব কাজে বিলম্ব তার হতোই। কিন্তু প্যারিস অলিম্পিকে সোমবার রাতে এ ব্রিটিশ দৌড়বিদ অবশেষে ঝেড়ে ফেললেন পীড়াদায়ক সেই বদভ্যাসটা। এবার কালবিলম্ব করলেন না। মাত্র ১ মিনিট ৫৬.৭২ সেকেন্ডের টাইমিংয়েই স্পর্শ করলেন নারীদের ৮০০ মিটার দৌড়ের ফিনিশিং লাইন।
অবিশ্বাস্য সেই অর্জনের পর তার উদযাপন ছিল বাঁধভাঙা। বিজয় মঞ্চে তো রীতিমতো হেসেই কুটপাট। স্বর্ণের পদক গলায় ঝুলিয়ে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে হজকিনসন হয়তো স্মরণ করেছেন সেইসব কথা। একটা সময় হাঁটতে পারতেন না। ভবিষ্যতে হাঁটতে পারবেন কি না সেই নিয়েই দুশ্চিন্তায় সময় কাটত তার। কিন্তু কথায় আছে না! ভাগ্যে থাকলে ঠেকায় কে? তাই তো করে দেখালেন। হজকিনসন দুই পায়ের গতির ঝড়ে ফলিয়ে ফেললেন সোনা!
২০২১ টোকিও অলিম্পিকে জেতেন রৌপ্যপদক হজকিনসন। ২০২২ ও ২০২৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০২২ কমনওয়েলথ গেমসেও তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় রুপাতে। এবার স্বর্ণপদক জিতেছেন, ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। নতুন ইতিহাসও লিখে ফেলেছেন। ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে কেলি হোমস বিজয়ীর হাসি হেসেছিলেন। তারপর এই প্রথম ব্রিটিশ নারী হিসেবে এ ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলেন হজকিনসন। তার কোচ ট্রেভর পেইন্টার এই খুশির আমেজের মাঝে এখনই প্রিয় শিষ্যের বিলম্ব করার বদভ্যাস করার চিন্তা মাথায় নিচ্ছেন না। পেইন্টারের সহধর্মিণী ও ৮০০ মিটারে সাবেক ব্রিটিশ স্প্রিন্টার জেনি মিডোজও হজকিনসনের মেন্টর। স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবেই তুলেছেন তাকে।
কৈশোরে পা রেখেই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন হজকিনসন। কানে টিউমার ধরা পড়লেও সৌভাগ্যবশত তাতে ক্যানসারের জীবাণু ছিল না। কিন্তু সেই টিউমারের কারণে হাঁটতে পারবেন কি না আর, সেটা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে সেই পুরোনো দিনের কথা বলেন হজকিনসন, ‘১০ বছর ধরে এটা বেড়ে উঠেছিল কিন্তু কেউ ধরতে পারেনি। স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলাম। স্নায়ু আক্রান্ত হলে হলে হয়তো ফেসিয়াল প্যালসি (মুখের প্যারালাইসিস) হতো, তাই এটা নির্মূল করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।’
স্কাই স্পোর্টসকে হজকিনসন এ নিয়ে বলেন, ‘হাঁটতে পারতাম না। এটা একটু অদ্ভুত। কারণ সমস্যাটা ছিল কানে। তবে সৌভাগ্যবশত সব পরিকল্পনা অনুযায়ীই হয়েছে। ওটা নির্মূল করা হয় এবং আমি তাতে কানে কম শোনা শুরু করি। সেটা অবশ্য মন্দ না।’ হজকিনসন কানের ৯৫ শতাংশ শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন। মজা করে এই অ্যাথলেট যোগ করেন, ‘লোকে যখন মাস্ক পরে আমার কষ্টকর উঠে আসার কথা বলে তখন বুঝতে পারি লিপ রিডিংয়ের ওপর আমি কতটা নির্ভরশীল।’
শৈশবে হজকিনসন সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু তার বাবা মেয়ের ভবিষ্যৎ দেখেন অ্যাথলেটিকসে। হজকিনসন জানান, ১২ বছর বয়সে তার বাবা স্কুলের একটি দৌড়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তাকে এক জোড়া জুতো ‘ঘুষ’ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। সেজন্য বাবার কাছে চির কৃতজ্ঞ হজকিনসন।
শিষ্যের অর্জনে যারপরনাই আনন্দিত পেইন্টার বলেন, ‘কখনও কখনও সে হয়তো ২০ থেকে ২৫ মিনিট দেরি করে, তারপর মুচকি হাসি দিয়ে হেঁটে চলে যাবে। কিন্তু আমরা যদি তাকে ধরে রাখি, একটি বক্সে রেখে বলি তাকে এটার আকার নিতে হবে, তাহলে সে ওই মানুষটা হবে না যাকে আমরা ১ মিনিট ৫৪.৬১ সেকেন্ডে দৌড়াতে দেখেছি (গত মাসে ডায়মন্ড লিগে ব্রিটিশ রেকর্ড)। সে এখন যা, সেটা তার মুক্ত চেতনার স্বভাবের জন্য।’
বিয়াট্রিস চেবেতের স্বপ্ন ৫ হাজার ও ১০ হাজার মিটারের ডাবলের স্বর্ণ জেতা। এবারের প্যারিস অলিম্পিকে কেনিয়ার এ দূরপাল্লার দৌড়বিদ নিজের সেই স্বপ্ন অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেললেন। স্তাদ দু ফ্রান্সে সোমবার রাতে মেয়েদের ৫ হাজার মিটারে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিয়েছেন ১৪ মিনিট ২৮.৫৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে।
তার কেনিয়ান সতীর্থ ও অলিম্পিকে দুবারের ১৫০০ মিটারের সোনাজয়ী ফেইথ কিপইয়েগন অন্য প্রতিযোগীকে ধাক্কা দিয়ে হন ডিসকোয়ালিফাইড হন। তাহলে দ্বিতীয় হতেন তিনি। তাই তৃতীয় হয়েও ভাগ্যের ফেরে রুপা পেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের সিফান হাসান। দৌড় শেষ করেন ১৪ মিনিট ৩০.৬১ সেকেন্ডে। ১৪ মিনিট ৩১.৬৪ সেকেন্ডের টাইমিং নিয়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন ইতালির নাদিয়া বাত্তোক্লেত্তি।