প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ ২১:২০ পিএম
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৪ ২১:৩৮ পিএম
সোনা জয়ের পর নোয়াহ লাইলসের উল্লাস
প্যারিস অলিম্পিক একটু স্পেশাল নোয়াহ লাইলসের জন্য। সবশেষ টোকিও অলিম্পিকে
ভূত তাড়ানোর লক্ষ্যে ট্র্যাকে নেমেছিলেন আমেরিকার এই কিংবদন্তি দৌড়বিদ। এ যাত্রায় তিনি
শতভাগ সফল। গত রবিবার স্তাদে দে ফ্রান্সে ১০০ মিটার দৌড়ে সোনার পদক জিতেছেন লাইলস। সময় নেন ৯.৭৯ সেকেন্ড। রৌপ্যজয়ী কিশানে থম্পসনকে ০.০০৫
সেকেন্ডের ব্যবধান পেছনে ফেলেছেন। গায়ে জড়িয়েছেন দ্রুততম মানবের তকমা।
লাইলস সাধারণত ২০০ মিটারে দৌড়ান। এবার
১০০ মিটারেও নিজেকে চেনালেন। এদিন ফটো ফিনিশে বিজয়ী ঘোষণার পর দেখা যায় লাইলস
দৌড়াতে সময় নিয়েছেন ৯.৭৮৪ সেকেন্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জ্যামাইকান থম্পসনের
লেগেছে ৯.৭৮৯ সেকেন্ড। ফ্রেড কার্লির ৯.৮১ সেকেন্ড। ১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিকের
পর প্যারিসেই সবচেয়ে কম ব্যবধানে নিষ্পত্তি হয়েছে ছেলেদের ১০০ মিটারের সোনার।
বুদাপেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে
সর্বকালের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টের কীর্তি ছোঁয়া লাইলসের সামনে এবার জ্যামাইকান
তারকার অলিম্পিক কীর্তি ছোঁয়ার সুযোগ। নিজের প্রিয় ইভেন্ট ২০০ মিটার স্প্রিন্টটা
তার এখনও বাকি। সেটিতেও সোনা জিতলে বোল্টের পর প্রথম পুরুষ স্প্রিন্টার হিসেবে
‘ডাবলস’ জিতবেন তিনি। অলিম্পিকের দ্রুততম মানব হওয়ার তাড়না তাকে যেভাবে
তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, সেটি নোয়াহর কথাতে স্পষ্ট। সোনা পেতে ক্ষুধার্ত ছিলেন তিনি, ‘এই পদকটা
আমি চেয়েছি, কী কঠিন লড়াই হলো, প্রতিদ্বন্দ্বীরাও অবিশ্বাস্য ছিল। সবাই প্রস্তুত হয়েই
এসেছিল। আমি শুধু এটিই প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম তাদের সবার মধ্যে আমি সেই মানুষ, নেকড়ের
মধ্যে আমিই সেই নেকড়ে।’ তবে লাইলস এও জানিয়েছেন, তিনি কিছুটা হতাশ ছিলেন। মনোযোগ বিঘ্ন
ঘটছিল প্রথম রাউন্ডে। এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমি প্রথম রাউন্ড নিয়ে কিছুটা হতাশ ছিলাম। তবে
শেষের দিকে ভালোভাবেই কামব্যাক করি। আশা করি আপনারা নোয়াহকে পছন্দ করবেন। কারণ আমি
অনেক কিছুই জিতেছি।’
প্যারিসে নামার আগে নোয়াহ অবশ্য জানিয়েছিলেন, চারটি সোনা জিতে ফিরতে
চান তিনি। ব্যক্তিগতভাবে দুটি সোনার পাশাপাশি দলগত প্রতিযোগিতাতেও জোড়া সোনার দিকে
নজর ছিল তার।আমি ১০০ ও ২০০ মিটারে সোনা জিতব। তার পরে দুটো রিলে রেসেও সোনা জিততে চাই।
রেকর্ড ভাঙতে চাই। এমনটা ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তারই প্রথম ধাপ করে দেখালেন। এবার বাকিগুলোর
দিকে নজর দেবেন তিনি।
নোয়াহ রয়েছে ঈশ্বরের মানসিকতা। বিশ্বের
সেরা স্প্রিন্টারদের নিয়ে নেটফ্লিক্সের বানানো স্প্রিন্ট নামে ডকু সিরিজেও
বুদাপেস্টে বলা লাইলসের ওই প্রসঙ্গটা বেশ আলোচনা হচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন লাইলসকে কিছুটা
চেনা যায় সেই সিরিজে বলা তার একটা কথা থেকে, ‘আপনার থাকতে হবে ঈশ্বরের মানসিকতা।
আমি বিশ্বাস করি, কোনো মুহূর্ত আমার চেয়ে বড় নয়। মুহূর্ত তৈরিই হয় আমার জন্য।’ অথচ
গতবারে আমার বুকে এখনও আগুন ধরায় ওই ব্রোঞ্জ। আমি প্যারিসে এটি নিয়েই ঘুরব। নিজেকে
মনে করিয়ে দিতে যে, এবার আর এই রং নিয়ে ফিরছি না।’
নোয়াহর হাত ধরে দীর্ঘদিন পর আমেরিকা ১০০ মিটারে পেল সোনার পদক। ২০০৪
সালে জাস্টিন গ্যাটলিন শেষবার সোনা জিতেছিলেন। তার পরে পেলেন নোয়াহ। ১৮৯৬ সালে অলিম্পিক
শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথম তিনবার সোনা জিতেছিল আমেরিকাই। ১০০ মিটারে ১৬টি সোনা রয়েছে
আমেরিকার। এই দাপট বিশ্বের আর কোনো দেশের নেই। মাঝে জ্যামাইকার কাছে পিছিয়ে পড়েছিল
তারা। সেই দাপট আবার ফেরালেন নোয়াহ। এই নোয়াহ যে দেশকে আরও বড় সফলতা এনে দেবেন সেটি
দৃঢ়তায় স্পষ্ট। কারণ ট্র্যাকে তিনি যাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাদের কাউকেই
আসলে প্রতিপক্ষ মনে করেন না, তার প্রতিপক্ষ সময়। সময়ের সঙ্গে যারা লড়েন, তাদের একটু
সাহসী হতে হয় বৈকি! বুকভরা সাহস নোয়াহর বড় শক্তি।