প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ ২০:১৪ পিএম
নোভাক জোকোভিচের সামনে ছিল শুধু একটাই বাধা। কার্লোস আলকারাজ। উইম্বলডনের ফাইনালে স্ট্রেইট সেটে এ স্প্যানিশ তরুণের কাছেই হেরেছিলেন জোকার। সে হারের এক মাসও পার হয়নি। তবে এবার আলকারাজ হার মানলেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সব টুর্নামেন্টের শিরোপাই জিতেছিলেন জোকোভিচ। বাকি ছিল অলিম্পিকে সোনা জেতা। এবার তাও আর অধরা থাকল না সার্বিয়ান তারকার। টানা পাঁচবারের চেষ্টায় নিজের শেষ অলিম্পিকে এসে সোনা জিতলেন।
রবিবার টেনিসের ফাইনালে স্পেনের কার্লোস আলকারাজকে হারান জোকোভিচ। সার্বিয়ার খেলোয়াড় জিতেছেন ৭-৬, ৭-৬ গেমে। দুটি সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। স্টেফি গ্রাফ, আন্দ্রে আগাসি, রাফায়েল নাদাল এবং রজার ফেদেরারের পর বিশ্বের পঞ্চম টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ‘গোল্ডেন স্ল্যাম’, অর্থাৎ চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামই একবার করে জেতার পাশাপাশি অলিম্পিকে সোনা জিতলেন জোকোভিচ।
রোলা গারোতে ফাইনালের মতেই হয়েছে ফাইনাল। দুই খেলোয়াড়ের কেউ কাউকে এতটুকুও ছাড় দেননি। বছরের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে আলকারাজের বিপক্ষে জিততে হয়েছে জোকোভিচকে। ম্যাচে দুটি সেট টাইব্রেকারে যাওয়া থেকেই বোঝা যায়, কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। প্রথম সেট গড়ায় ৯৪ মিনিট। প্রথম সেটে জোকোভিচ পাঁচটি এবং আলকারাজ আটটি ব্রেক পয়েন্ট পেয়েছিলেন। কেউই কাজে লাগাতে পারেননি। নিজের সার্ভিসে ০-৪০ পিছিয়ে থেকেও তা ধরে রাখেন আলকারাজ। টাইব্রেকারে ৩-৩ অবস্থা থেকে টানা চারটি পয়েন্ট পেয়ে সেট পকেটে পোরেন জোকোভিচ।
প্রথম সেটের তুলনায় দ্বিতীয় সেটে দুই খেলোয়াড়ের কাছে খুব বেশি সুযোগ আসেনি। তা সত্ত্বেও দু’জনের পারফরম্যান্স দেখে কিছু বোঝা যায়নি। জোকোভিচ গতিতে বৈচিত্র আনছিলেন। আলকারাজের শটে বৈচিত্র দেখা যাচ্ছিল। টাইব্রেকারে প্রথম সেটের মতো একই দৃশ্য দেখা গেল দ্বিতীয় সেটেও। ২-২ থেকে ৬-২ করে দিলেন জোকোভিচ। ম্যাচ এবং অলিম্পিকের অধরা সোনাও তখনই তাঁর পকেটে চলে আসে।
সোনা জয়ের পর প্রায় দুই ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন জোকার। শরীরে নিজ দেশের পতাকা জড়িয়ে ও গলায় সোনার পদক ঝুলিয়ে সবার প্রথমেই সাংবাদিকদের মাথা নিচু করে কুর্নিশ করেন। এরপর তিনি লম্বা সংবাদ সম্মেলনে কখনও হেসেছেন, হাসিয়েছেন। পঞ্চম খেলোয়াড় হয়ে গ্র্যান্ডস্লামের পর অলিম্পিক জিতে প্রকাশ করেছেন বৃত্ত পূরণের আনন্দ।
জোকোভিচ বলেছেন, ‘২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে আমি দেশের পতাকা বহন করেছিলাম। এত দিন পর্যন্ত সেটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্ত। আজ স্বর্ণ জয়ের পর এখন এই দিনটি আমার সবচেয়ে বেশি সেরা।’
টেনিসের চার গ্র্যান্ডস্ল্যামের সঙ্গে আরও অনেক টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে জোকারের। এত সব কিছু ছাপিয়ে অলিম্পিকের সোনার পদক কেন সেরা সেই জবাবও দিয়েছেন সার্বিয়ান টেনিস তারকা, ‘অলিম্পিকে অনেক সময় অনেকে খেলেন না এটাও ঠিক। প্রতি বছরই চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম হয় আর চার বছর পর অলিম্পিক। গ্র্যান্ডস্ল্যামগুলো ব্যক্তিগত আর অলিম্পিক-ডেভিস কাপ মানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। আমি সব সময় দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পছন্দ করি। তাই এটা স্মরণীয়।’
সপ্তাহ তিনেক আগেই উইম্বলডনে স্প্যনিশ আলকারেজের কাছে সরাসরি তিন সেটে হেরেছিলেন জোকোভিচ। অলিম্পিকে স্প্যানিশ তারকাকে দুই সেটে হারিয়ে অধরা অলিম্পিক সোনার পদক জিতেছেন। এই প্রত্যাবর্তনের গল্প বলতে গিয়ে জোকোভিচ জানান, ‘আমার বয়স এখন ৩৭। আমি নিজেই এখন নিজের প্রেরণা। ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন আমাকে অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করেছে। আমি জানতাম আজ (গতকাল) না হলে আর হয়তো স্বর্ণ জেতা হবে না। এজন্য সব কিছুই করেছি সর্বোচ্চভাবে। আমার সকল সফলতার পেছনে রয়েছ অনেক পরিশ্রম ও সাধনা। সে (আলকারেজ) এখন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। আজও দারুণ খেলেছে। দু’টি সেটই দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় সেটে আমি যদি হেরে জেতাম, জানি না তৃতীয় সেটে কি হতো।’