× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সোনালি শিরোপার বর্ণিল গল্প

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৩৫ পিএম

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২২ ১৩:৫৬ পিএম

সোনালি শিরোপার বর্ণিল গল্প

কত পথই না পেরোলো বিশ্বকাপের শিরোপা! সমৃদ্ধ ইতিহাস, নাম-চেহারা পাল্টে যাওয়া, প্রচলিত কাহিনি, চুরি কিংবা হারিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও জড়িয়ে ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারে। সোনালি সেই ট্রফি শূন্যে উঁচিয়ে ধরতে কত না লড়াই, কতশত আবেগ-আক্ষেপ জড়িয়েলড়াই মূলত এই একটি লক্ষ্যেই! 

এক-দুই করে শিরোপার লড়াইয়েরও শততম বর্ষ চলে এলো বলে।

১৯২৮ সালে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভাবলফুটবল নিয়ে যখন এত মাতামাতি, একটা আন্তর্জাতিক আসর বসালে কেমন হয়! যেই ভাবা সেই কাজ, ১৯৩০ সালে বিশ্বব্যাপী ফুটবল ছড়িয়ে দিতে আয়োজিত হলো ফিফার প্রথম বিশ্বকাপ। কিন্তু খেলা হবে কিসের জন্য, সেরা দেশের জন্য তো পুরস্কার থাকতে হবে! ফিফার তখনকার প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে ফরাসি স্থপতি অ্যাবেল লাফলারকে দিলেন দায়িত্ব‘সেরাদের মুকুট বানিয়ে দিন।’

লাফলারও নিংড়ে দিলেন নিজের সর্বোচ্চ। সোনায় মুড়িয়ে রুপা দিয়ে বানানো হলো দশকোনা ট্রফি। ‘সোনালি দেবী’ খ্যাত শিরোপাটি মূলত গ্রিক দেবী ‘নাইকি’র সাদৃশ্যে অঙ্কিত। ৩.৭৮ কিলোগ্রাম ও উচ্চতায় ৩৫ সেন্টিমিটারের ট্রফিটি প্রথমবার ঘরেই রেখে দিল উরুগুয়ে। নিয়ম ছিল, বিশ্বকাপে জয়ী দল পরের বিশ্বকাপ অর্থাৎ চার বছর পর্যন্ত নিজেদের কাছে শিরোপা ধরে রাখতে পারবে। যদি কোনো দল তিনবার শিরোপা জিততে পারে, তাদের আজীবনের জন্য ট্রফি দিয়ে দেওয়া হবে।

শিরোপার সোনালি ফলকের চারদিকে ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বিশ্বকাপজয়ী দেশগুলোর নাম খোদাই করা হয়েছিল। দুবার উরুগুয়ে (১৯৩০, ১৯৫০) ও ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮), একবার অর্থাৎ চার বছর নিজেদের কাছে শিরোপা রাখতে পেরেছিল জার্মানি (১৯৫৪) ও ইংল্যান্ড (১৯৬৬)। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালের পর ১৯৭০ বিশ্বকাপেও শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে নেয় ব্রাজিল। নিয়মানুসারে ‘জুলে রিমে কাপ’ নাম নেওয়া শিরোপাটি আজীবনের জন্য দেশে নিয়ে আসে সেলেসাওরা।

বিশ্বকাপজয়ী ইতালির ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন ছিল ইতিহাস। চার বছর নয়, ইতিহাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইতালি ‘ভিক্টোরি’, ‘ফিফা বিশ্বকাপ’ বা ‘কুপ দু মোন্ড’ নামে পরিচিত ট্রফিটি রেখে দেয় এক যুগ। কীভাবে! ১৯৩৮ সাল থেকে ১২ বছরের জন্য বন্ধ রাখা হয় বিশ্বকাপ আয়োজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে শিরোপা নিয়েও কত কাহিনি!

জার্মানির নাৎসি বাহিনীর থেকে শিরোপাটি রক্ষা করতে চিন্তিত হয়ে পড়েন ফিফার তখনকার সহসভাপতি ও এফআইজিসির (ইতালির ফুটবল ফেডারেশন) সভাপতি অত্তোরিনো বারেসসি। ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংক থেকে তুলে আনেন শিরোপা। রোমে নিজের বাসায় জুতার বাক্সের ভিতর লুকিয়ে রাখেন। যুদ্ধ শেষে আবারও পুরোনো জায়গা ফিরে যায় শিরোপা। ফিফার তৃতীয় সভাপতির নামে ১৯৪৬ সালে পাল্টে যায় নাম। বিশ্বকাপ শোভা পায় ‘জুলে রিমে ট্রফি’ নামে।

১৯৭০ সালে ব্রাজিল আজীবনের জন্য শিরোপা রাখার অনুমতি পেলে ফের চিন্তায় পড়ে ফিফা। এবার ট্রফি বানাতে শুরু হয় মহাযজ্ঞ। বিভিন্ন দেশের স্থপতির কাছ থেকে জমা পড়ে ৫৩টি নকশা। বাছাইপর্ব ছাপিয়ে টিকে যান ইতালিয়ান শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগা। ১৯৭১ সালে তার করা নকশাতেই এখনও হয়ে আসছে বিশ্বকাপের শিরোপা।

১৯৭৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত বিজয়ী দলগুলোর নাম ও সাল লেখা থাকছে ট্রফির ভেতরের দিকে। সামনের দিকে নিচের অংশে লেখা রয়েছে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ কথাটি। সেই সময়ে এটি প্রস্তুত করতে ব্যয় হয়েছিল ৫০ হাজার ডলার, যার বর্তমান বাজারমূল্য ২০ মিলিয়ন ডলারের ওপর! বিজয়ী দলের নাম ও সাল লেখার জন্য আর দুটি জায়গা ফাঁকা রয়েছে। ধারণা করা হয়, ২০৩০ সালে বিশ্বকাপের শততম বর্ষপূর্তিতে চ্যাম্পিয়ন দলের নামটিই হবে বর্তমান ট্রফিতে শেষ নাম।

কাতার বিশ্বকাপে আসার আগে ফিফা ট্রফিটি আরও কয়েকটি কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছে। ১৯৩০ সালে যেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ঘুরে আসত শিরোপা, এখনও তেমন হয়। বিশ্বজয়ীদের মুকুট খ্যাত শিরোপা তখন পরিবহন হতো জাহাজে করে, এখন বিমানে করে ঘুরে আসে পুরো বিশ্ব। ১৯৬৬ সালে ঘটে কলঙ্কিত এক ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ট্রফি চুরির নাটক করা হলেও ইংল্যান্ডে সেবার সত্যিই চুরি যায় ট্রফি। গেল গেল রব উঠে যায় বিশ্বে। চোরের খোঁজে লন্ডনের পুলিশ সে সময়ের ১৫ হাজার পাউন্ড পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল।

টুর্নামেন্টের চার মাস আগে আয়োজিত এক উন্মুক্ত প্রদর্শনী থেকে চুরি হয়ে যায় ট্রফিটি। পরে অবশ্য একটি কুকুরের কল্যাণে সেটি উদ্ধার করা হয়। তবে তৃতীয়বারের মতো ট্রফিটি চুরি হলে সেটি আজীবনের জন্যই চলে যায়। ১৯৮৩ সালে ব্রাজিল থেকে হারিয়ে যায় শিরোপা। চুরি যাওয়া ‘গ্রিক সোনালি দেবীর’ মূর্তিটি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

জুলে রিমে ট্রফি বিদায়ের পর নতুন শিরোপা গড়া হয় ১৮ ক্যারেট খাঁটি সোনা দিয়ে। ১৪ ইঞ্চি লম্বা ও ১৩ পাউন্ড ওজনের বিশ্বকাপ ট্রফিটি একবার হাতে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেনি, এমন ফুটবলার খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। দুটি মানুষের মূর্তি তাদের হাত তুলে গোলাকার পৃথিবী সদৃশ বস্তুকে ধরে রেখেছে। নকশাকারী গাজ্জানিগা ট্রফি সম্পর্কে বলেছেন, ‘দুজন খেলোয়াড় তাদের বাহুগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিজয় উল্লাস ও আনন্দঘন মুহূর্তকে চিত্রিত করেছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা