ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৪৩ পিএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২২ ১৩:৫৯ পিএম
কাতারের মাটিতে আজ পর্দা উঠছে 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের। এবারের ২২তম ফিফা বিশ্বকাপই হতে পারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, রবার্ট লেভানদোভস্কি, লুইস সুয়ারেজ, লুকা মডরিচ, দানি আলভেস, ম্যানুয়েল নয়্যার ও টমাস মুলারের ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ! বয়সের কারণে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে গেছেন তারা। বিশ্বকাপের পরই জাতীয় দলের জার্সি তুলে রাখার ঘোষণা দিতে পারেন ফুটবল মহাকাশের এই ধ্রুবতারারা। ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো বিশ্বকাপের মঞ্চে এই ফুটবল মহাতারকাদের না দেখার সম্ভাবনাই বেশি।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বয়স তো কম নয়। ৩৭ বছর চলছে। ২০২৬ সালে ৪০ পেরিয়ে যাবেন। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষেই অবশ্য জানিয়ে রেখেছেন কাতার বিশ্বকাপ হবে তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। শেষ বিশ্বকাপে নিজেকে উজাড় করে দিতে একটুও কার্পণ্য করবেন না রোনালদো। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে হতাশ করেছেন রোনালদো। এখন দেখার বিষয় কাতার বিশ্বকাপে কি করতে পারেন। ১১৭ গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার রোনালদো। পর্তুগালের হয়ে রেকর্ড ১৯১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। পাঁচবারের ব্যালন ডি'অর জয় করা রোনালদো যেখানে খেলেছেন, সেখানেই গোল করেছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রথম মেয়াদে ট্রফি জিতেছেন। রিয়াল মাদ্রিদে শিরোপা জয়ের সংখ্যা বেশি। সেরি এ’তে জুভেন্টাসের হয়ে দু’টি শিরোপার স্বাদও নিয়েছেন। এই মৌসুমে ভালো কিছু করতে পারেননি রোনালদো। প্রিমিয়ার লিগের নয় ম্যাচে মাত্র এক গোল করেছেন রোনালদো। বেশিরভাগই ম্যাচেই নেমেছেন বদলি হিসেবে।
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন রোজারিওর ফুটবলার জাদুকর লিওনেল মেসিকে ঘিরে। ৩৫ বছর বয়সে কাতার বিশ্বকাপে খেলবেন আর্জেন্টিনার এই তারকা। রেকর্ড সাতটি ব্যালন ডি’অর খেতাব নিয়ে রোনালদোকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। শেষটি বাদে সবগুলোই ছিল বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে। গেল মৌসুমে ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম না থাকলেও এই মৌসুমে ছন্দে ফিরেছেন মেসি। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন মেসি। কিন্তু ট্রফি মেসির হাতে উঠেনি। ২০২১ কোপা আমেরিকা জিতেছেন মেসি। সেই ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে উল্লাস করার আনন্দ এখনো করতে পারেননি আর্জেন্টিনার এই সুপারস্টার। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে সেই দুঃখ কি ঘোচাতে পারবেন মেসি?
রবার্ট লেভানদোভস্কি (পোল্যান্ড)
মেসি-রোনালদোর পর আরও একজন তারকা রয়েছেন। তিনি ৩৪ বছর বয়সী রবার্ট লেভানদোভস্কি। জার্মান বুন্দেসলিগায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে চার বছর, পরে বায়ার্ন মিউনিখের আট বছর নীরবে গোল করে গেছেন লেভানদোভস্কি। সম্প্রতি বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার আগে ডর্টমুন্ড ও মিউনিখের হয়ে ৩৮৪টি ম্যাচে ৩১২ গোল করেছেন লেভানদোভস্কি। পোল্যান্ডের অধিনায়ক লেভানদোভস্কি দেশের হয়ে ১৩৪টি ম্যাচে রেকর্ড ৭৬টি গোল করেছেন। এরমধ্যে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নয়টি । বিশ্বকাপে এখনও গোল করতে পারেননি লেভানদোভস্কি। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল পোল্যান্ড।
লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
উরুগুয়ের সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার লুইস সুয়ারেজ। ৩৫ বছর বয়সী তারকা স্ট্রাইকারের গোল ১৩৪টি। নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন তিনি। আয়াক্স, লিভারপুল, বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে বিতর্কে জড়ানোর পর ক্যারিয়ারের এই অর্ধে উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে ছেলেবেলার ক্লাব ন্যাসিওনালের হয়ে খেলছেন তিনি। এটি তার প্রথম বিশ্বকাপ হবে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে সময় গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইতালির ডিফেন্ডার জর্জিও চিয়েলিনির কাঁধে কামড় দিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন সুয়ারেজ। ২০২১ সালে ক্লাবের সাথে নিজের প্রথম মৌসুমে অ্যাটলেটিকোকে স্প্যানিশ লিগের শিরোপা জিততে সহায়তা করেছিলেন। ২৮ নভেম্বর লুসেল স্টেডিয়ামে পর্তুগালের বিপক্ষে খেলতে নামবে উরুগুয়ে।
লুকা মডরিচ (ক্রোয়েশিয়া)
মাঠের লড়াইয়ে ৩৭ বছর বয়সেও জ্বলে উঠছেন মডরিচ। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নিজের দশম মৌসুমে খেলছেন তিনি। স্প্যানিশ ক্লাবের হয়ে এক দশকের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মডরিচ। এ সময়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এবং তিনটি লিগ শিরোপা জেতেন। এছাড়াও ২০১৮ সালে ব্যালন ডি’অরও জেতেন। মিডফিল্ডে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ২০১৮ সালে ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছিল। সেই ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল তার দল। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জয় করা এ তারকা খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন।
দানি আলভেস (ব্রাজিল)
বিশ্বের সেরা আক্রমণাত্মক রাইট ব্যাকদের মধ্যে অন্যতম দানি আলভেস। ৩৯ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান তারকারও দেয়ার আছে অনেক কিছু। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে উচ্চতায় শেষ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। বিশেষ করে হাঁটুর ইনজুরির কারণে গত বিশ্বকাপ মিস করার পরে এবার ভালো করতে মরিয়া আলভেস।
মাত্র দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন আলভেস। ২০১০ এবং ২০১৪ সালে। ২০০৮ সালে বার্সেলোনায় যাবার আগে সেভিয়ার হয়ে খেলার সময় মাঠের ডান-প্রান্ত দিয়ে দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে ছুটে যাবার খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। জুভেন্টাস এবং প্যারিস সেন্ট-জার্মেইতে যোগ দেয়ার আগে সেভিয়ার হয়ে আটটি শিরোপার স্বাদ নিতে পারেন তিনি। এরপর সাও পাওলো, গত বছর বার্সেলোনায় ছাড়ার পর এ বছর মেক্সিকান ক্লাব পুমাসে যোগ দেন আলভেস।
ম্যানুয়েল নয়্যার (জার্মানি)
জার্মানির সেরা গোলরক্ষকদের একজন ম্যানুয়েল নয়্যার। ৩৬ বছর বয়সে তিনি মাতাবেন কাতার বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা ছিল তার। ঐ আসরে বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভসও জিতেছিলেন তিনি। বছর শেষে ব্যালন ডি’ অরের সেরা তিনেও জায়গা করে নিয়েছিলেন নয়্যার। যা গত দুই দশকে আর কোনো গোলরক্ষকই করতে পারেননি। ক্লাব ক্যারিয়ারে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে দু’বার চ্যাম্পিয়নস লিগ ও টানা ১০ বার বুন্দেসলিগা জিতে ইতোমধ্যেই পেশাদার ফুটবলের কিংবদন্তিদের আসনে জায়গা করে নিয়েছেন নয়্যার। এবার চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন নয়্যার।
টমাস মুলার (জার্মানি)
২০১০ বিশ্বকাপেই পাঁচ গোল করেন টমাস মুলার। ৩৩ বছর বয়সে মুলার থাকছেন কাতার বিশ্বকাপে। এরপর থেকে জার্মানি এবং বায়ার্ন মিউনিখের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের অজুহাত দিয়ে ২০১৯ সালে মুলারকে বাদ দেন জোয়াচকিম লো। কিন্তু গত বছর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য দলে ফিরিয়ে আনা হয় মুলারকে এবং দলে নিজের জায়গা প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি । ২০১০ সাল থেকে জার্মানির হয়ে ১১৮ ম্যাচে ৪৪ গোল করেন মুলার।