অভাবনীয় রিভার প্যারেড
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৯ এএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৭:৫৮ পিএম
অলিম্পিকের উদ্বোধনী সব সময়ই হয়ে থাকে জাঁকজমকপূর্ণ। এটাই তো 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'র ঐতিহ্য। অলিম্পিকের সেই ঐতিহ্য আরও জমকালো আর বর্ণিল করে বিশ্ববাসীকে একরকম চমকেই দিল শিল্প ও সংস্কৃতির রাজধানী প্যারিস। সিন নদীর বুকে আর দুইধারে ইতিহাস, আধুনিকতা, ছন্দময় নাচ-গান, চোখ ধাঁধানো সব ডিসপ্লে আর বাহারি সব উৎসবের অবিস্মরণীয় এক রাত উদযাপন করল প্যারিস। প্রায় চার ঘণ্টার রঙিন উদ্বোধনী যেন নিমিষেই কখন যে শেষ গেল কেউ যেন টেরই পেল না!
সিন নদীর বুকে লঞ্চের ছাদে হলো ধুন্ধুমার নাচ. আর গান। নদীর পাড়ে তৈরি মঞ্চেও ছিল নাচ ও গানের আয়োজন। আর নদীতে রকমারি সব পোশাক পরা পারফর্মারদের নিয়ে ভেসেছে জলযান। সিনের বুকে এতসব আয়োজনের মাঝে শর্টফিল্মে মুখোশধারী এক লোককে মশাল হাতে ছুটতে দেখা যায়। তার সঙ্গে কিংবদন্তি ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদানের হয়ে যায় সাক্ষাৎ। লুভ্যর মিউজিয়াম থেকে হঠাৎই যেন হারিয়ে যায় মোনালিসা! পরে তার সন্ধান মেলে সিনের বুকে—জলে ভাসতে ভাসতে রঙিন উদ্বোধনী উপভোগের তর সইছিল না হয়তো তার!
উৎসবে সামিল হয়ে অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর রিভার মার্চপাস্টে উপভোগ করেছেন উপস্থিত প্রায় তিন লাখ দর্শক। দলগুলোর মার্চপাস্টের একটি জায়গায় ফ্রান্সের ইতিহাসের বিখ্যাত ১০ জন নারীর ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়। তারপর পর্দায় ভেসে ওঠে আইকনিক এক মুহূর্ত! অলিম্পিকের পতাকা অর্পণ করতে কৃত্রিম ঘোড়ায় চড়ে সিন নদী পাড়ি দেন জোয়ান অব আর্ক সাজে এক নারী।
২২ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী স্পেনের টেনিস কিংবদন্তি রাফায়েল নাদালের হাতে অলিম্পিকের মশাল তুলে দেন বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবল সুপারস্টার জিনেদিন জিদান। বৃষ্টি ভেজা প্যারিসে আইফেল টাওয়ার থেকে যেন ঝরতে থাকে আলোর ঝরনাধারা।
পতাকা অর্পণ কর বক্তব্য দেন ফ্রান্সের তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন টনি এস্তাগুয়েত। পরে মঞ্চে কথা বলেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি টমাস বাখ।
অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেজ, স্পেনের রাজা কিং ফিলিপ, কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল সানিসহ বিশ্বের বহু রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিক ও ক্রীড়া প্রশাসকরা উপস্থিত ছিলেন।
হুইলচেয়ারে বসে থাকা ১০০ বছর বয়সী ১৯৪৮ অলিম্পিকের সাইক্লিংয়ে স্বর্ণ জয়ী ও ফ্রান্সের সবচেয়ে বেশি বয়সী বেঁচে থাকা স্বর্ণ জয়ী অলিম্পিয়ান সাইক্লিস্ট চার্লস কোস্তে অলিম্পিকের মশাল তুলে দেন জুডোকা টেডি রেনার ও সাবেক স্প্রিন্টার মেরি-হোসে পেরেকের হাতে। তারা দুজন লুভ্যর জাদুঘর ও প্লেস দে লা কনকর্ডের মধ্যবর্তী তুঁলেরিয়েস গার্ডেনে প্রজ্বলিত করেন ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের মশাল।
প্যারিসেই প্রথম গরম বাতাসের বেলুন উড়িয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন মন্টগলফিয়ের ভাইয়েরা। সেটি ১৭৮৩ সালের ঐতিহাসিক এক মূহুর্ত। এবারের প্যারিসেই অলিম্পিকের মশাল প্রজ্বালনের পর তা উড়ে বেড়ালো গরম বাতাসের বেলুনে।
অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে ফিরে কানাডার কিংবদন্তি গায়িকা সেলিন ডিওন মুগ্ধ করেন ফ্রান্সের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা প্রয়াত এডিথ পিয়াফের ‘লা’হাইম এ লা’আমুর’ গাটি গেয়ে। তার এই গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনীর আলোকছটা।
নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। কেননা অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে রেলে দুষ্কৃতকারীরা হামলা করে বসে। বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের মিলনমেলায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী তাই একটু বেশিই তৎপর ছিল। তাই নিরাপত্তার চাদরে মুড়েই প্যারিস উপভোগ করেছে আইফেল টাওয়ারের আলো পুরো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
প্যারিস অলিম্পিকের প্রথম আসর আয়োজন করেছিল ১৯০০ সালে। পরে প্যারিসে অলিম্পিক মেলা বসে ১৯২৪ সালে। ১০০ বছর অলিম্পিক মশাল ফিরল ফ্রান্সের মাটিতে। তৃতীয়বারের মতো প্যারিসে অলিম্পিক আয়োজনের শুরুটা হলো মনে রাখার মতো। প্যারিসের শতবর্ষী অলিম্পিক আয়োজন বলে কথা! অবিশ্বাস্য কিছু না হলে কি চলে!