কোপার মহারণে আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৪:০৫ পিএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৪:০৮ পিএম
সোমবার সকালে পর্দা নামবে কোপা আমেরিকার। যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে ফাইনালে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। যেখানে আর্জেন্টিনার লক্ষ্য থাকবে কোপার ১৬তম শিরোপা জয়। নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় ট্রফি বাগিয়ে নিতে প্রাণপণ লড়াই করবে কলম্বিয়া।
কানাডা, চিলি ও পেরুকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। এরপর পেনাল্টি শুটআউটে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের বীরত্বে শেষ চারের টিকিট কাটে আলবিসেলেস্তেরা। সেমিতে অবশ্য সহজেই ২-০ ব্যবধানে হারায় কানাডাকে। অন্যদিকে, ফাইনালিস্ট কলম্বিয়া উঠে আসে ব্রাজিলের গ্রুপ থেকে। দুই জয় এবং এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপসেরা হয় নেস্তর লরেঞ্জোর দল। শেষ আটে পানামাকে ৫-০ গোলের বড় ব্যবধান এবং সেমিফাইনালে ১০ জনের দল নিয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে কঠিন লড়াই জেতে ১-০ গোলে।
প্রতিযোগিতায় দুই দলই অপরাজিত। আন্তর্জাতিক আঙিনায় কলম্বিয়া টানা ২৮ ম্যাচ ধরে অপরাজিত। জয়রথের কারিগর দলটির আর্জেন্টাইন কোচ লরেঞ্জো। তার দুর্দান্ত ট্যাকটিকসেই প্রতিপক্ষ দলগুলো বারবার হার মেনেছে। যার সবশেষ উদাহরণ উরুগুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়। যে দলটির কোচ হিসেবে ছিলেন মার্সেলো বিয়েলসা। তিনিও একজন আর্জেন্টাইন। যাকে সময়ের অন্যতম সেরা কোচ হিসেবেই অনেকে মূল্যায়ন করেন। ম্যাচ হারার পরও কলম্বিয়া দল ছাপিয়ে যিনি প্রশংসা করেছেন কোচ লরেঞ্জোর।
সেই লরেঞ্জোর সামনে এবার সুযোগ নতুন এক গল্প লেখার। প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কোপার শিরোপা জিতলে নিশ্চিতভাবেই সেটি হবে তার ক্যারিয়ারের অনবদ্য অর্জন। এমন কিছু তিনি কিংবা তার দল অর্জন করতে পারবে কি না সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে কলম্বিয়াকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসায় দারুণ কৃতিত্ব পাবেন মেসিদের একসময়ের এই কোচ। বিশেষ করে তার দল যেভাবে বা যে ফরমেশন সেট করেছে সেটি প্রশংসার দাবি রাখে। হারিয়ে যাওয়া হামেস রদ্রিগেজকে নতুনভাবে শুধু ফিরিয়েই আনেননি, কলম্বিয়াকে একটি দল হিসেবে খেলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তিনি। তার অধীনে চিরাচরিত ৪-৩-৩ ফরমেশনকে কার্যকরভাবে ৪-৩-১-২-এ বদলে দিতে পেরেছেন। আর্জেন্টিনার বিপক্ষেও এই ফরমেশনে খেলতে পারে কলম্বিয়া।
এ ছাড়া কলম্বিয়ার শক্তির দিক হতে পারে তাদের আক্রমণাত্মক কর্নার কিক। এবারের আসরেই তারা সর্বোচ্চ তিন গোল আদায় করেছে কেবল কর্নার থেকে। সেট পিচে শক্তিশালী আর্জেন্টিনাও। পরের স্থানে তথা দুই গোল কর্নার কিক থেকে পেয়েছে লিওনেল স্কালোনির দল। কানাডার বিপক্ষে সর্বশেষ সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা খেলেছে ৪-৩-৩ ফরমেশনে। দলটির আক্রমণভাগ অনেকটা নিশ্চিত। মেসির সঙ্গে ডি মারিয়া ও জুলিয়ান আলভারেসের জায়গা অনেকটা অটোচয়েস। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েও ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড লাওতারো মার্তিনেজকে নামতে হয় বেঞ্চে থেকে। এ ছাড়া মিডফিল্ডে ম্যাক অ্যালিস্টারের সঙ্গে ডি পল ও এনজো ফার্নান্দেজের জায়গা প্রায় নিশ্চিত। শেষ চারের ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েছিলেন মার্কোস আকুনা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানা গেছে সেভিয়ার এই লেফট-ব্যাক পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। লিয়ান্দ্রো মার্তিনেজ, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ও নাহুয়েল মলিনার সঙ্গে তাকে খেলাতে পারেন স্কালোনি।
আর্জেন্টিনার সামনে দারুণ এক রেকর্ডের হাতছানি। এখন পর্যন্ত কোনো কনমেবল দল পরপর দুটি কোপা আমেরিকা শিরোপা ও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। সবশেষ কোপা ও বিশ্বকাপ জিতে এই রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন মেসি-ডি মারিয়ারা। এর আগে ত্রিপল মুকুট জয়ের খুব কাছে গিয়েছিল ব্রাজিল। ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালে তারা জেতে কোপার ট্রফি। কিন্তু ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হেরে যায় সেলেসাওরা।
আর্জেন্টিনার হয়ে বাজি ধরেছেন সাবেক চিলি ও ইন্টার মিয়ামির স্ট্রাইকার ইভান জামোরানো। এবারের আসরেই যিনি একটি টিভি চ্যানেলের পণ্ডিত হিসেবে কাজ করছেন। তার ভাষায়, ‘স্কালোনির হাতে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার (মেসি) আছেন। যে কারণে ফাইনালে আমি আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখব।’ কলম্বিয়ার সাবেক মিডফিল্ডার কার্লোস ভালদেরেমা বলেছেন, ‘আমি মনে করি রবিবারের (সোমবার সকাল) ফাইনাল জিতবে কলম্বিয়া। দলটি টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অপরাজিত। হামেস (রদ্রিগেজ) টুর্নামেন্টে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় এখন পর্যন্ত। সবকিছু মিলিয়ে কলম্বিয়া চমক দেখাবে বলেই বিশ্বাস।’