ইউরো
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১২:২৩ পিএম
ছয়টি পথ বলে দিয়েছে ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট গোলডটকম। উনাই সিমনকে টার্গেট করো, রদ্রিকে বাঁধো, বেঞ্চের শক্তি কাজে লাগাও, লামিনে ইয়ামালকে চোখে চোখে রাখো, দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও এবং পেনাল্টি আদায়ের চেষ্টায় থাকোÑ ব্যস এতটুকুই! স্পেনের বিপক্ষে আজ মধ্যরাতে এসব করতে পারলেই মিলবে সবটুকু। ইংলিশ সমর্থকদের ‘ইটস কামিং হোম’ স্লোগানও পাবে পূর্ণতা। ১৯৬৬ সালের পর আরেকটি বড় ট্রফির সামনে ইংল্যান্ড। বড় কোনো ট্রফি। কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা মাত্র। তার আগে হিসাবনিকাশ কষে স্প্যানিশ গণমাধ্যমটি অবশ্য এগিয়ে রেখেছে স্পেনকেই।
তবে গোলডটকমের এই ছয় সূত্র মেনে চলতে পারলে ইংল্যান্ড যে বাজিমাত করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের টিকিট বুক করতে স্পেনকে বহু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ইংল্যান্ড সেখানে ধুঁকে ধুঁকেই এসেছে। গ্যারেথ সাউথগেটের দলটির নিত্যসঙ্গী ছিল সমালোচনা। একসময় ভাবা হচ্ছিল, হ্যারি কেইনদের শেষটা বুঝি গ্রুপপর্বেই হতে যাচ্ছে। কিন্তু ইংলিশরা প্রায় প্রতিটি ম্যাচে লিখেছে প্রত্যাবর্তনের গল্প। ফিরে আসার সেই কাহিনী এখন ফাইনালে গিয়ে ঠেকেছে। আর একটি ধাপ, এরপরই স্বপ্নপূরণ। কোনোবার ইউরো জিততে না পারা ইংলিশদের এমন সুযোগ আর কবে আসবে, কে জানে!
শক্তিমত্তা, পরিসংখ্যান এবং সাম্প্রতিক ফর্ম বিচারে স্পেনের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে বাজি ধরবে এমন লোক হয়তো কমই পাওয়া যাবে। ফুটবলের বেশ কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের ভবিষ্যদ্বাণী বলছে, অপ্রতিরোধ্য এই স্পেনের বিপক্ষে ইংলিশদের জিততে হলে অনেক বেশি কিছুই করতে হবে। কোনো একটি ভুল করলেই টানা দুটি ইউরো শিরোপা ছিটকে যেতে পারে। স্পেন শুধু বল পায়ে রাখার শৈল্পিকতা নয়, আগ্রাসী আক্রমণেও প্রতিপক্ষকে ঘাবড়ে দিয়েছে। গ্রুপপর্ব থেকে ফাইনাল অবধি প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই তারা জায়ান্ট কিল করেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি, ক্রোয়েশিয়া এরপর জার্মানি এবং সবশেষ ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপার মঞ্চে লুইস দে লা ফুয়েন্তের শিষ্যরা। আক্রমণভাগ থেকে মাঝমাঠÑরক্ষণ হয়ে গোলরক্ষকÑ সবখানে সবাই প্রায় আপ টু দ্য মার্ক। ফাইনালের আগে ইংলিশ ফরোয়ার্ড অলি ওয়াটকিন্সও প্রতিপক্ষকে এগিয়ে রেখেছেন। নান্দনিকতা আর আক্রমণাত্মক ফুটবল নিয়ে এত দূর আসা স্পেনও আশাবাদী শেষটা ভালো করার। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেমিফাইনালের নায়ক ওয়াটকিন্স তবে নিজেদেরও এগিয়ে রাখছেন। তিন বছর আগে ট্রফির কাছে গিয়েও তা বাড়ি নিয়ে যেতে না পারা ইংল্যান্ড এবার সেই ভুল করতে চায় না। এক ম্যাচেরই ব্যাপার, নব্বই মিনিট যারা ভালো খেলবে, জার্মানি থেকে ট্রফি তারাই নিতে পারবে নিজেদের ঘরে।
দুই দলের কোচের সেরা হওয়ার লড়াইও ফাইনালে। ইংলিশ সমর্থকদের সমালোচনার জবাব ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন সাউথগেট। তবে এবারের আসরে থ্রি লায়নসরা ঠিকঠাক গর্জে উঠতে পারেনি। কিন্তু খুব ‘হাই প্রোফাইল’ কোচ না হয়েও স্পেনকে খোলনলচে পাল্টে দিয়েছেন দে লা ফুয়েন্তে। শৈল্পিকতার সঙ্গে আগ্রাসনের মিশেল ঘটিয়ে দুর্বার করে তুলেছেন দলকে।
ফাইনালে স্পেনকে এগিয়ে রাখা হবে মূলত তাদের আক্রমণভাগের কারণে। তার ওপর স্পেনের রক্ষণভাগের দুই কাণ্ডারি দানি কারভাহাল ও রবিন লি নরমান্ড ফিরছেন। মার্কো কুকুরেলা তো দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তবে পেদ্রিকে নিয়ে সুখবর নেই স্প্যানিশ শিবিরে। যদিও পেদ্রির ঘাটতি বুঝতেই দিচ্ছেন না লামিনে ইয়ামাল, নিকো উইলিয়াম ও দানি ওলমো। তাদের নিয়ে ইংল্যান্ডকে বাড়তি চিন্তা করতেই হচ্ছে। এই তিন তরুণ তুর্কিই এখন স্পেনের প্রাণ। তাদের রুখার মতো রক্ষণ আছে নিশ্চয়ই ইংলিশদের, তবে তাদের বড় শঙ্কার হয়ে পড়তে পারে স্কোরারের অভাব। লা রোজাদের গোলরক্ষক সিমন হয়ে উঠতে পারে বেলিংহাম-কেইনদের দুঃস্বপ্ন। মাঝমাঠ দাপিয়ে বেড়ানো রদ্রিকে আসলেই শেকলবন্দি করতে হবে সাউথগেটের শিষ্যদের। অন্যথায় বিপদ বাড়তে পারে। সব হিসাব মিলে গেলে অর্থাৎ গোলডটকমের সেই ছয় সূত্র মেনে চললে ইংলিশরাই হবেন ইউরোপের সেরা।
বলা হয়, ফাইনালে প্রেডিকশন কিংবা পরিসংখ্যান কাজ করে না। এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচ মুখোমুখি হওয়া ইংলিশরা এখানে আদপেই এগিয়ে আছেন। স্প্যানিশদের বিপক্ষে ১০ হারের বিপরীতে আছে ১৪ জয়। কিন্তু ৯০ মিনিটের খেলা ফাইনালে কে কাকে টেক্কা দেবে, জানা যাবে কয়েক ঘণ্টা পরই।