আরিফুর রাজু
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪ ২০:১৩ পিএম
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪ ১৮:২০ পিএম
শেষটা সুন্দরের অপেক্ষায় মেসি-ডি মারিয়া
বন্ধু যদি ভাবিস, সবটা দিয়েই
রাখিস, একটু-আধটু ভুল হলেও আপন কিন্তু ভাবিস। বন্ধুত্ব কিংবা বন্ধুর সংজ্ঞায় অনেক কিছুই
লেখা যেতে পারে। কিন্তু লিওনেল মেসি ও আনহেল ডি মারিয়ার ঐশ্বরিক বন্ধুত্বের সারমর্ম
আপনি কীভাবে দাঁড় করাবেন। দুই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার যেন আইরিস ঔপন্যাসিক জন বয়েনের
অমর সৃষ্টি ব্রুনো ও শুমেল। শত ঝঞ্ঝা পেরিয়েও যারা হেঁটেছেন একই সমান্তরালে। তবে ক্যারিয়ারের
অস্তলগ্নে এই দুই ফুটবল শিল্পী। আর্জেন্টাইনদের দুই বীরের এটাই যে শেষ কোপা আমেরিকা।
শেষ বলেও জয় আনন্দ উপভোগ্যের
তাড়নায় জাতীয় দলে ফিরেছিলেন মেসি। ২০১৬ সালে ল্যাটিন আমেরিকায় চিলির কাছে হেরে চোখের
জলে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছিলেন এমএলটেন। এরপর ফিরেও আসেন। অধরা ভাগ্য সুপ্রসন্ন
হয় তার। বিশ্বকাপ জয়ের আক্ষেপ ঘোচে। যতটা পথ হেঁটেছেন, যেদিকে দৃষ্টিপাত করেছেন, সবটাই
জয় করেছেন। তার পথচলা ছিল ঠিক ভাইকিংস সিরিজের রগনার লথব্রকের মতোই। প্রবল বিরুদ্ধস্রোতে
দাঁড়িয়েও সর্বোচ্চ ব্যালন ডি’অর বিজেতা মেসি। চ্যাম্পিয়নস লিগ, কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা
এবং বিশ্বকাপÑ বড় সব টুর্নামেন্টের ট্রফিতে চুমো আঁকার সুযোগ মিলেছে তার। আর বন্ধু
ডি মারিয়া? মেসির সঙ্গে হেঁটে তিনিও হয়েছেন জয়ের ভাগীদার। তার চেয়েও বড়, আর্জেন্টিনার
বহু ম্যাচের ফল পাল্টে দিয়েছেন এই ৩৬ বছর বয়সি ডি মারিয়া। লিওনেল স্কালোনির এই তুরুপের
তাস বিদায় নেবেন ৪৮তম কোপার ফাইনাল মঞ্চ থেকে।
কোপায় মেসি-ডি মারিয়াদের ফাইনালে
ওঠার গল্পটা একটু কঠিনই। কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে বাধার মুখে পড়ে তিনবারের
বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে ত্রাতা হন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তবে সেমিফাইনালে
কানাডাকে বেশ ভালোভাবেই বাস্তবতা দেখান মেসি-আলভারেজ। গতকাল বুধবার ফাইনাল নিশ্চিতের
পর নিউইয়র্কের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে মেসি বুঝিয়ে দিলেন দেশের জার্সিতে তার পথচলা থামবে
ক্ষণিক বাদেই। কোলাহল ছেড়ে নির্জনতা তাকে খুব করেই টানছে। তবু খুব করে বললেন, ‘এখনও
উপভোগ (খেলা) করছি, পাশাপাশি ফিদেও (ডি মারিয়া), ওতার (নিকোলাস ওটামেন্ডি) মতো আমিও
মনে করছি, এগুলো (আমাদের) শেষ লড়াই।’ তবে সময়টা উপভোগ করতে চান তিনি, ‘আমরা এ নিয়ে
টানা চতুর্থ (ফিনালাসিমাসহ) ফাইনাল খেলব। কথাটা বলা সহজ হলেও পুরো অভিযাত্রা অনেক কঠিন
ছিল। আসুন সময়টা উপভোগ করি, সামনে আরেকটি ফাইনাল। সৃষ্টিকর্তা চাইলে গতবারের (চ্যাম্পিয়ন)
মতোই হবে।’
মেসি বিদায়ের কথা খোলাসা না
করলেও ৩৬ বছর বয়সি ডি মারিয়া যে ‘সাবেক’ হবেন আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন। গতকাল ম্যাচ শেষে
মিক্সড জোনে সংবাদমাধ্যমকে আর্জেন্টিনার ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এই উইঙ্গার বলেছেন,
‘১৪ জুলাই (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ১৫ জুলাই ফাইনাল) যা-ই ঘটুক মাথা উঁচু রেখে বিদায়
নিতে পারব। মাথা উঁচু রেখে বিদায় নিতে যা যা করা সম্ভব, সবই করেছি। নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি।
এই জার্সির জন্য নিংড়ে দিতে কোনো কিছু বাকি রাখিনি। হ্যাঁ, সময় কখনও কখনও আমার পক্ষে
ছিল না। তবে শেষদিকে এসে এটা শুরু হয়েছে।’
অবসরের ঘোষণা দিয়ে মেসি ফিরে
এলেও ডি মারিয়া বলছেন তিনি এমনটি করবেন না, ‘জাতীয় দলের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে
এখনও প্রস্তুত নই। তবে এটাই সময়। যেভাবে শেষ করার স্বপ্ন দেখেছি, সেটাই হচ্ছেÑ আরেকটি
ফাইনালে পৌঁছেছি।’