আরিফুর রাজু
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ২১:০৯ পিএম
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪ ২১:২৯ পিএম
বহু প্রতিকূলতা মাড়িয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় আবিষ্কার করেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ
তার জন্মরাতে আকাশে উল্কার দেখা মিলেছিল কি না জানা নেই। তবে তিনিই
যে ভারতের গর্ব হবেন, ভূমিষ্ঠকালে সেটির সাক্ষ্য রেখেছিলেন। ধর্মমাতার ভাষ্য, জন্মের
পর শিশুটি কান্না ভুলে হাসতে চেয়েছিল। পারছিল না, হাসার মতো শক্তিটুকুও ছিল না। প্রাণপণ
চেষ্টায় হেসেছিল বৈকি। তার চওড়া সেই হাসির বিচ্ছুরণ গুজরাট ছাড়িয়ে ভারত হয়ে আলোকিত
করে বিশ্ব। লড়াই-সংগ্রাম করা শিশুটির বিশ্বাস আর দৃঢ়তা ছিল প্রকট। জানতেন ‘বিধাতা যাকে
শূন্যঘরে পাঠাতে পারে, তাকে দুহাত ভরেও দিতে পারে।’
হাতটি শূন্যই ছিল, যেমনটা থাকে অনেক গ্রেটের। ছিল ঘাত-প্রতিঘাত। জীবন
দুরূহ হয়ে উঠেছিল সাত বছর বয়সে। বাবাকে হারিয়ে মা দালজিত দিশেহারা। ছেলেকে মানুষ করতে
দিন-রাত এক করে ১৪-১৫ ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয়েছে। মায়ের এই ঘাম-শ্রম বৃথা যায়নি।
বুমরাহ ভারতের সোনালি ট্রফি জয়ের নায়ক। ১৪৫ কোটি জনগণের দেশে পরম পূজনীয়। ভারতীয় ক্রিকেটে
‘বুম’ করা ছেলেটিই শৈশব-কৈশোরে পোড় খাওয়া জাসপ্রিত বুমরাহ। ঈশ্বর তাকে সাহায্য করেছে,
কারণ তিনি নিজেই মাড়িয়েছেন ঝড়-ঝাঞ্ঝা আর পাহাড়সম প্রতিকূলতা।
বিশ্বের দরবারে বুমরাহর উত্থান এক চমকপ্রদ কাহিনী। শেন ওয়ার্ন তাকে
নিয়ে গর্ব করেছিলেন। কমেন্ট্রি করতে গিয়ে বলছিলেন, ‘কী অসাধারণ জীবনকাহিনী ছেলেটার!
সেরা ক্রিকেট রূপকথা।’ তাকে ছাড়া চলেই না রোহিত শর্মার। দল যখনোই ব্যাকফুটে, তখনোই ত্রাতা
বুমরাহ। আটলান্টিকপাড়ের আসরে অজেয় ভারতের বেশিরভাগ ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন বুমরাহ।
ডেথ ওভারের নায়ক বনে যাওয়া পেসার তোলেন ১৪ উইকেট। উইকেট বিবেচনায় প্রথম না হলেও ইমপ্যাক্টে
তিনিই সেরা, হয়েছেন টুর্নামেন্টসেরা।
বুমরাহ কখনোই থেমে যাননি। দারিদ্র্যের বিপক্ষে লড়েছেন, করেছেন মায়ের
স্বপ্নপূরণ। রোহিতের আস্থার ‘ইয়র্কার মাস্টার’-এর উত্থানের গল্পটি এমনই। তবে কণ্টকময়
সেই গল্পে ছিল আশা, ছিল দুঃখ আর অপরিসীম ভালোবাসা এবং হার না মানা মনোভাব। ধর্মমাতা
দীপাল ত্রিবেদীও বলেছেন সেটিই। ভারতের বিশ্বকাপজয়ের পর তার একটি লেখা সামাজিকমাধ্যমে
ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ফুটিয়ে তুলেছেন বুমরাহর অনবদ্য জীবনকাহিনী। বুমরাহকে নিয়ে তার
আকুতি, ‘দয়া করে আমার সঙ্গে যোগ দিয়ে আমার বাচ্চা জসপ্রিত বুমরাহকে অভিনন্দন জানান।
বিশ্বকাপ জয়ের জন্য। আহমেদাবাদের একটা অখ্যাত এলাকা ও স্কুল থেকে গিয়ে সে আমাদের সবাইকে
গর্বিত করেছে। বুমরাহকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমি ওর মা দালজিত ও
বোন জুহিকাকে ধন্যবাদ জানাই।’
দীপাবলি, বড়দিন আর জন্মদিন, বড় উৎসব নিয়ে ছেলেটির কখনও উৎসাহ ছিল
না। ওর সস্তা প্লাস্টিক বল নিয়েই যত আগ্রহ। বুমরাহ জানতেন তার শক্তির জায়গা। মায়ের
ঘুম ভেঙে যাবে বলে দেয়াল ও মেঝের কর্নারে বল ফেলা ছেলেটি এখন ব্যাটারদের ত্রাস। এক
প্যাকেট দুধের জন্য হাহাকার করা ছেলেটির বাস কোটি টাকার বাড়িতে। স্বপ্ন তো ছিলই, আত্মবিশ্বাস
আর পরিশ্রম দ্বারা বুমরাহ নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। লিখেছেন ইতিহাস। যেখানে
লেখা আছে দালজিত, দীপাল ত্রিবেদী ও বোন জুহিকার নাম। অবশ্য স্ত্রী সঞ্জনা ও সন্তান
অঙ্গদও তার জীবনের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকের নাম থাকতে পারে, যারা বুমরাহকে আজকের
এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।