× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্বজয়ের পর বিসর্জনের পালা

হেলাল নিরব

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ০৭:২২ এএম

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৬ এএম

আমারে পাইবে তুমি ইহাদের ভীড়ে— রোহিত, কোহলি এবং রাহুলের কণ্ঠে বুঝি এমন সুর বেজেছিল পরশু; ছবি: গেটি ইমেজেস

আমারে পাইবে তুমি ইহাদের ভীড়ে— রোহিত, কোহলি এবং রাহুলের কণ্ঠে বুঝি এমন সুর বেজেছিল পরশু; ছবি: গেটি ইমেজেস

জয় করার মতো দেশ না থাকার দুঃখে কেঁদেছিলেন গ্রিক বীর আলেকজান্ডার। মেসিডোনিয়ার বিশ্বজয়ী কিং কেন কাঁদছেন? কারণ খুঁজতে গিয়ে বের হলো— দেশ জয়ের নেশা চেপেছে মহারাজার। কিন্তু কোন দিকে যাবেন, সবটাই তো তার শাসনে। দেশ না থাকার সেই শূন্যতাই বুঝি ডেকেছিল বিসর্জনের দিকে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর বিরাট কোহলিকে নিয়ে অমন ভাবলেও ভাবতে পারেন। ক্রিকেটে তারও কি কিছু জেতার বাকি আছে! গ্রিক বীরের মতো অপরাজিত থেকে ভারতের কিংবদন্তিও থেমেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রুপালি ট্রফিতে চুমু এঁকে বলেছেন, ‘এখানে থামছি আমি। এবার দায়িত্ব তোমাদের।’

বিখ্যাত একটি উক্তি আছে এমন— যখন সবাই তোমাকে চাইবে, তখনই ছেড়ে যাও। পেশাদার ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের অমন সময় সবার অবশ্য খুব একটা আসে না। এসেছিল বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অধরা বিশ্বকাপ জিতে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন তারা। ঠিক বীরের মতো।

ছোট ফরম্যাটকে বিদায় বলেছেন ‘হিটম্যান’ খ্যাত রোহিত— গেটি ইমেজেস 

বিশ্বজয়ের পর আত্মবিসর্জনের সেই তালিকায় যোগ হয়েছে রবীন্দ্র জাদেজাও। ১১ বছর পর ভারতের আইসিসি শিরোপা খরা ঘোচানো কোচ রাহুল দ্রাবিড়কেও রাখতে পারেন। ক্রিকেট যাকে শূন্য করে, শেষ বেলায় তাকে দু হাত ভরিয়েও দেয়! আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের কথা যেহেতু এসেছে, তার একটা উক্তিও থাকুক, ‘যারা চেষ্টা করে, তাদের জন্য কিছুই অসম্ভব নয়!’

সেটির প্রমাণও পেয়েছেন কোহলিরা। টি-টোয়েন্টিতে দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষা আর বিশ্বজয়ের আনন্দে মেতে ওঠার ১১ বছর! গুনে গুনে সাত মাস আগে অবশ্য একবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। খুব করে জিততে চাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফিটি নিশ্বাস দূরত্বে হাতছাড়া হয়েছিল। সেদিন বুকে পাথর বেঁধে বসেছিলেন কোহলি-রোহিত। দুই কিংবদন্তির অবসরের মঞ্চ আহমেদাবাদে যেন তৈরি ছিল, কিন্তু তারা পারেননি। ভারত বিশ্বকাপ জেতেনি, তারাও থামেনি। নিজেকে বিশ্বাস করেছেন, খুব করে জিততে চেয়েছেন। বীরেরা তো জয়ী হয়েই থামতে চান। কোহলি-রোহিত কিংবা দ্রাবিড় পেরেছেন।

এ যেন তৃপ্তির হাসি। বহুমূল্য চুকিয়ে কেনা

স্বপ্নপূরণের পর তাই খুব বেশি সময় নেননি কোহলি। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে খুব অকপটে বললেন, ‘এটা তো সবাই জানতেন। আমি অবসর নিচ্ছি।’ ঘণ্টাখানেক পর বিশ্বজয়ের আনন্দ যখন মিইয়ে এসেছে, তখন দলনেতা রোহিতও বলে দেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে ভারত আর আমাকে পাবে না।’

অথচ তারা চাইলে আরও কয়েক বছর খেলতে পারতেন। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দের বিষাদের সুরটাও ঠিক বেজেছে রোহিত-কোহলির থামায়। তাই তো রজার বিনি আফসোস করেছেন, পাইপলাইনে এত খেলোয়াড় থাকতেও শূন্যতার কথা বলেছেন ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড প্রধান, ‘টি-টোয়েন্টিতে তাদের অবসর যেন একটা যুগের অবসর। অনেক নবীন প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসছেন। তারা শূন্যতা পূরণ করবে। তবে এই যে ব্যবধান হলো, এই যে শূন্যস্থান— তা তাড়াতাড়ি পূরণ সম্ভব নয়।’


আটলান্টিক পারে বসা বিশ্বকাপে প্রায় পুরোটা সময় বিবর্ণ ছিলেন কোহলি। ৭ ম্যাচে করেছিলেন ৭৫ রান। ফাইনালে সেরা হওয়ার দিনেই করেন ৫৯ বলে ৭৬। ম্যাচের পরিস্থিতির বিচারে যা বহু মূল্যবান। সেরার পুরস্কার জিতে কোহলিও সময় নেননি, ‘এটাই আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল। এটাই আমরা অর্জন করতে চেয়েছিলাম। ঈশ্বর মহান।’

তখনও পর্যন্ত মনে হয়েছিল, কোহলি হয়তো পরের টি-টোয়েন্টি ছাড়বেন না। কিন্তু এরপরই মহারাজা প্রস্তানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘ভারতের জার্সিতে এটাই আমার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ট্রফিটা জিততে চেয়েছিলাম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবার পরের প্রজন্মের দায়িত্ব।’

২০০৭ বিশ্বকাপে শুরু ২০২৪ সালে শেষ— দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় সবটা জিতেছেন রোহিত। কুড়ি কুড়ির ফরম্যাটে নাম পেয়েছেন ‘হিটম্যান।’ ক্যারিয়ারের শুরুতে বিশ্বজয়, শেষটাতেও তাই। একদিন আগে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সাবেক অধিনায়ক বনা রোহিত বলেছেন, ‘অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এর থেকে ভালো মুহূর্ত হতে পারে না।’ 


ব্যাটার দ্রাবিড় কোচ হিসেবেও শেষ দেখেছেন। ভারতের কোচিং মেয়াদ শেষে মজা করেই বলেছেন, চাকরি দেন। তবে চোখের জলে যেন পূর্ণতার কাব্য লিখেছিলেন কেনসিংটন ওভালে, ‘আগামী সপ্তাহ থেকে আমার জীবন একই থাকবে। শুধু বেকার হয়ে যাব। সেটাই একমাত্র পরিবর্তন হবে। কোনো (চাকরির) অফার আছে?’ হয়তো আছে, নয়তো নেই। কিন্তু যা পাওয়ার তা তো পেয়েই গেছেন দ্রাবিড়।

বার্বাডোজে ফাইনালের পর ইনস্টাগ্রামে জাদেজা দেন অবসরের ঘোষণা, ‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। গৌরবের নেশায় অবিচল ঘোড়া যেমন ছুটে চলে, তেমনই আমিও দেশের জন্য সর্বদা সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

যারা চেষ্টা করেন তাদের কাছে অসম্ভব কিছু নেই— সংগৃহীত ছবি

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেই কথাটিই, ‘নাথিং ইমপসিবল টু হিম হু উইল ট্রাই।’ রোহিত, কোহলি, দ্রাবিড় এবং ভারত চেষ্টা করেছে। বিশ্বকাপ শিরোপা তাদের হাতেই উঠেছে। কথায় আছে, পরিশ্রম কখনও বেইমানি করে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা