× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ক্রিকেট

টাইগারদের চমকে দেওয়া চমক

ইকরামউজ্জমান

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ০৯:২৭ এএম

আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ১১:৪৩ এএম

টাইগারদের চমকে দেওয়া চমক

৮ জুন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন। জয়ের জন্য লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু সে ম্যাচই কি না বাংলাদেশের ব্যাটাররা কঠিন করে তুললেন। তবে শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নেমে উড়িয়ে দিলেন সব শঙ্কা। বাংলাদেশ পেল কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা। নাটকীয় জয়ে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল টাইগার বাহিনী। বিজয়ীদের তাদের অভিনন্দন। অফুরন্ত অভিনন্দন।

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের জয়জয়কার পুরো ক্রিকেটবিশ্বে। একটি পরিসংখ্যানে দেখেছি, ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচিত এবং ভক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ছুটে চলা ব্যস্তময় জীবনে সময়ের বড় অভাব। মানুষ অল্প সময়ে চায় চিত্তের ক্ষুধা মেটানোর জন্য অধিক বিনোদন। টি-টোয়েন্টি সে চাহিদা মেটাতে পারছে বলে আবালবৃদ্ধবনিতা এ ক্রিকেট রাজার দরকারে রাজস্ব দেওয়ার জন্য ব্যাকুল। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে চলমান নবম বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এখন পুরো ক্রিকেট দুনিয়াকে মাতিয়ে রেখেছে। আশানিরাশার দ্বন্দ্বে ভুগছেন ক্রিকেট অনুরাগীরা। অবিশ্বাস্য জয় আর অবিশ্বাস্য পরাজয় নিয়ে টি-টোয়েন্টি রথ গড়িয়ে চলেছে। বড় দল ছোট দল বলতে এ ক্রিকেটে কিছু নেই। দিনের খেলায় সময়মতো ঝলসে উঠতে পারলে আর পায় কে?

ক্রিকেট অনিশ্চয়তায় ভরপুর। টি-টোয়েন্টিতে এ অনিশ্চয়তা সবচেয়ে বেশি। আর এ অনিশ্চয়তাই ক্রিকেটকে করেছে মহান এবং সুন্দর। জীবন যেমন অনিশ্চয়তার জন্য সুন্দর, তেমনই সুন্দর ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান দেশে দেশে পেশাদারি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান ভারতের আইপিএলের। সারা বিশ্বের সচেতন ক্রিকেট অনুরাগীরা প্রবল আগ্রহ এবং উৎসাহের সঙ্গে ভারতে অনুষ্ঠিত আইপিএল অনুসরণ করে থাকে। চলমান বিশ্বকাপে আইপিএলের প্রভাব লক্ষণীয় হবে এটাই স্বাভাবিক। সদ্যসমাপ্ত আইপিএল তো অতীতের ছোট সংস্করণের মাঠের সব রেকর্ড অতিক্রম করে খেলাটাকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সব অসম্ভব সম্ভব করেছে। ক্রিকেটরসিকদের দিয়েছে নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ। ২০ ওভারের খেলায় রানের দাপটে ‘কুমারী ওভার’ (মেডেন ওভার) বিদায় নিতে আর বেশিদিন বাকি নেই। গত আইপিএলে ব্যাটারদের সমন্বিত ‘স্ট্রাইক রেট’ ছিল ১৫০.৫৮। আমাদের দলের ব্যাটাররা এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন এটি বাস্তবতা। স্ট্রাইক রেটে উন্নতি করা মানেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথ স্বাগতিক দেশ হিসেবে সংক্ষিপ্ত করার বিষয়টি আইসিসির বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ। মার্কিনিরা ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচিত হবে, খেলা ভালোবাসবেÑএটি অনেক বড় বিষয়। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাজারে পদার্পণ মানে আইসিসির আরেক ধাপ বাজার সম্প্রসারণ। এদিকে আইসিসির বড় বাজার ভারত। আর তাই আইসিসি সব সময় ভারতকে মাথায় তুলে রাখে। ভারতের সুযোগসুবিধা ব্যতিক্রমী। শ্রীলঙ্কা আইসিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য। নিউইয়র্কের উইকেট এবং আউট ফিল্ড নিয়ে তারা অভিযোগ করেছে। শ্রীলঙ্কা গ্রুপের প্রথম খেলায় দক্ষিণ-আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর (বিশ্বকাপে এটি তাদের সর্বনিম্ন স্কোর) দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ উইকেটে জয়ের বিষয়টা ছিল সময়ের ব্যাপার। দক্ষিণ আফ্রিকা ২২ বল হাতে রেখেই প্রথম খেলায় জিতেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছয় খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার এটি পঞ্চম জয়।

নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী ম্যাচে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হেসেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এক পর্যায়ে মনে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে মাঠ ছাড়তে হবে প্রতিবেশী কানাডার কাছে আত্মসমর্পণ করে। কানাডা ব্যাট করে রান করেছে ৫ উইকেটে ১৯৪। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ ওভারে স্কোর ৪৮, বাকি ১২ ওভারে প্রয়োজন ১৪৭ রান। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ৭২ বল লাগেনি ৫৮ বলেই করেছে যুক্তরাষ্ট্র ১৪৯ রান। অ্যারেন জোন্স ও আন্দ্রিস গুসের জুটি করেছে ১৩১ রান, জুটিতে রানরেট ১৪.২৯। অসাধারণ ব্যাটিং। বিশ্বকাপের আগে এমন দ্রুত রান সংগ্রহ করতে আর দেখা যায়নি। জোন্স অপরাজিত ৯৪ গুস করেছেন ৬৫ রান। যুক্তরাষ্ট্র জিতেছে ১৭.৪ ওভারে ১৯৭ রান করে ৭ উইকেটে। আর এটাই ক্রিকেট যা ভাবনার মধ্যে থাকে না। তা-ই শেষ পর্যন্ত ঘটেছে। জয় সব সময় অনুপ্রাণিত করে। সাহস এবং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র ২-১ ম্যাচে। বাংলাদেশ দল যেমন খেলার কথা তেমন খেলতে পারেনি। বিশেষ করে টপ-অর্ডাররা দেশে যেভাবে ব্যর্থ হয়ে এসেছেন, এখানে এসেও ব্যর্থতা থেকে বেরোতে পারেননি। তা ছাড়া বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং ছিল দুর্বলতায় ভরপুর। এ ক্ষেত্রে যোগ্য দল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র জিতেছে সিরিজ বাংলাদেশের বিপক্ষে। ক্রিকেটে সামর্থ্যের সঙ্গে ভাগ্যের প্রয়োজন আছে। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে সুপার ওভারে পরাজিত করে ক্রিকেট বিশ্বকে চমক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পরাজয়টা অকল্পনীয়। তবে এটি স্বীকার করতে হবে, সামর্থ্যের জয়। বিশ্বকাপে এটাই প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে টানটান উত্তেজনায় ভরপুর খেলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম জয়। পাকিস্তান পারেনি তাদের ১৫৯ রান ডিফেন্ড করতে। কেন এ পরাজয়Ñপরে এর ব্যাখ্যা সান্ত্বনা ও মূল্যহীন। ক্রিকেট দেয় আবার দিতে দিতে কেড়েও নেয়।

বাংলাদেশ খুব বাজে অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কাকে ডালাসে ২ উইকেটে পরাজিত করে। ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলগতভাবে এ সাহসী বিজয় বাংলাদেশ দলকে সুপার এইটে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে রাখল। বাংলাদেশ দলের ইমেজ পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলো। কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্ট ও কোচিং স্টাফরা ভীষণভাবে সমালোচিত। বাংলাদেশ দল পেরেছে কিছুদিনে বিভিন্নভাবে সংশোধিত হতে। ভাবে আর তাতেই ফল দিয়েছে। ধৈর্য, একাগ্রতা এবং পরিশ্রমে অনেক অর্জন সম্ভব তার প্রমাণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনে বিজয়। বড় কিছু অর্জনের জন্য স্রোতের বিপক্ষে লড়াই দেখলাম তরুণরা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছে। অভিনন্দন বাংলাদেশ দলের সব খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং কোচিং স্টাফের সদস্যকে।

  • ক্রীড়া-বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা