আরিফুর রাজু
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪ ১১:২৬ এএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪ ১১:৩৩ এএম
ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে সাকিব আল হাসান কী ভাবছেন? সুদীর্ঘ ক্যারিয়ার, সময়ের হিসাবে ১৮ বছর। ক্ষুরধার ক্রিকেট-মস্তিষ্ক আর পারফর্মÑ দুইয়ে মিলে অনন্য জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। ব্যক্তি সাকিবের আছে দুঃখ, ক্যারিয়ারে লেগেছে কালি। আন্তর্জাতিক পথচলায় সফলতা এলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার পথচলা দলের মতোইÑ রঙহীন। আরেকবার বিশ্বমঞ্চে দাঁড়ানো সাকিবের জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেন শেষ রণক্ষেত্র।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট (৪৭) সাকিবের। রান সংগ্রাহকদের দৌড়েও দাপট, ৭৪২ রান। তালিকায় সপ্তমে। তারপরও কাঠগড়ায় সাকিব। মূলত কুড়ি কুড়ির বিশ্বকাপে দলের ব্যর্থতার প্রভাব বর্তেছে তার ওপরও। আইসিসির বৈশ্বিক ইভেন্টের সবগুলোতেই অংশ নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ (৩৬) খেলেছেন। ভারত দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মাও অংশ নিয়েছেন সবগুলো আসরে। সবচেয়ে বেশি ম্যাচও হিটম্যানের (৪০)। দলের অন্যতম সদস্য তিনি। তার নেতৃত্বে ২০১০ বিশ্বকাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ। সেই যাত্রায় মূলপর্বে দুটিতেই হারে লাল-সবুজের দল। মেগা ইভেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য ২০২২ বিশ্বকাপে। সেবার দুটি ম্যাচ জিতে টিম টাইগার্স।
বিশ্বকাপ আসে, যায়। প্রাপ্তির খাতায় কেবল লেখা হয় হতাশা। আরেকটি বিশ্বমঞ্চে উপস্থিত হয়ে নিশ্চয় সাকিবের প্রত্যাশাÑ এবার অন্তত কিছু একটা হোক। ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়েও দল বড়, একাধিকবার বলেছেনও সে কথা। প্রতিপক্ষকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলা সাকিবের বিশ্বকাপ-যাত্রা শনিবার থেকে, প্রতিপক্ষ চিরচেনা শ্রীলঙ্কা। বন্ধুবর দেশটি সময়ের আবর্তে এখন বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিছু ঘটন-অঘটনের সাক্ষী সাকিব নিজেও, অনেকবার রেষারেষিতে জড়িয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে অঞ্জেলো ম্যাথুসের টাইমড আউট, এশিয়া কাপে মাঠ ছাড়ার ঘটনা কিংবা ডিআরস সিদ্ধান্ত ইস্যুতে লঙ্কান খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন সাকিব।
সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশের পারফর্ম সুবিধার নয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৬ বারের ১১ বারই হেরেছে বাংলাদেশ। তবে ওয়ানেন্দু হাসারাঙ্গাদের সঙ্গে সাকিবের অর্জন দারুণ। ৯টি ম্যাচে খেলেছেন সাকিব। তাতে রান উঠেছে ১৭৮, উইকেট ১২টি।
ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বিশ্বমঞ্চে লঙ্কানদের সঙ্গে দ্বৈরথে ফল অনুকূলে না থাকলেও এবার বড় স্বপ্নই দেখছেন সাকিব। তার ভাষায়, ‘আমি এবং রোহিত শর্মাই হয়তো মাত্র দুজন খেলোয়াড়, যারা সব কটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছি। আশা করব, আরও একটি বিশ্বকাপ যেন খেলতে পারি। তার আগে এ বিশ্বকাপে পারফরম্যান্সটা যেন ভালো থাকে। বাংলাদেশ যেন অন্য যেকোনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো ফল করে আসতে পারে। ফল যা-ই হোক, মানতেই হবে। বাংলাদেশের সব অর্জনের বেশিরভাগ এসেছে এই টাইগার অলরাউন্ডারের হাত ধরে। দেশের ক্রিকেটকে অনেক প্রথমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া নামটিও সাকিব।
ক্যারিয়ারের মাঝেমধ্যে পথ হারিয়েছেন সাকিব। তবে স্বমহিমায় ফিরতে মোটেও সময় নেননি। সব সমালোচনা পেছনে ফেলে আরোহণ করেছেন নতুন আরেকটি শৃঙ্গে। সাকিবকে নিয়ে যত কথা, গল্প, বিশ্লেষণ, সবারই এক কথাÑ সাকিব গড গিফটেড। ব্যাটসম্যানকে পড়ার ক্ষমতা, মুভমেন্ট যাচাই, কোন শট খেলতে পারে, এসব জিনিস আগে থেকেই বুঝতে পারেন তিনি। সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোও এড়ায় না তার চোখ। এসবই তাকে দশজন থেকে করে তুলেছে আলাদা।
সাকিব আলাদা বলেই তার ক্যারিয়ার হয়েছে দীর্ঘ। এ জন্য গর্বিতও তিনি, ‘যখন শুরু করেছি ক্রিকেট খেলাটা, এর পর থেকে যে এত দিন খেলতে পারব এটি একটি ভালো লাগার বিষয়। আর দ্বিতীয়ত প্রথম বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যতগুলো বিশ্বকাপ হলো সব কটিতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। আমার জন্য অবশ্যই গর্বের একটি বিষয়। একই সময়ে যেহেতু দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, অনেক ভালো লাগার একটা জায়গা আছে।’
ক্রিকেটের প্রতি তার প্যাশনের বড় প্রমাণ র্যাঙ্কিং। সেরার মসনদে সব সময়ে এক নম্বরে থেকেছেন। মাঝেমধ্যেই শীর্ষচ্যুত হয়েছেন তবে হারানো মুকুট পুনরুদ্ধার করতে মোটেও সময় নেননি। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয় বড় বিজ্ঞাপন সাকিব। শনিবার সকালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটাকে মনে করা হচ্ছে ফাইনাল হিসেবে। এই ম্যাচে জয়ী দল সুপার এইটের দৌড়ে এগিয়ে যাবে অনেকটা। আর হারলে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই প্রবল। এমন ম্যাচে সাকিবের চওড়া কাঁধই যে ভরসা! ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে লঙ্কানদের উৎসব ভেস্তে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে জেতান দলকে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে তারই হাতে। সেই স্মৃতি ফেরানোর মিশনে পুরো বাংলাদেশ তাকিয়ে সাকিবের দিকে।