প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪ ২১:১৪ পিএম
নিজেদের বাজে ব্যাটিংয়ে স্লো উইকেটে খেলার দায় দেখছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক— পুরোনো ছবি
অধিনায়কত্বে বদল আসে, বাড়ে স্পোর্টিং পিচে খেলার আক্ষেপ। সমালোচনার পারদ পাল্লা দিয়ে ওপরে ওঠে। বদল হয় না শুধু পিচের। মাশরাফি-সাকিব থেকে মাহমুদউল্লাহ হয়ে হালের নাজমুল হোসেন শান্ত— একে একে সবাই তাগাদা দেন, ‘ভালো ক্রিকেট উপহার দিতে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা জরুরি।’ তবে এদেশের কিউরেটররা স্লো-লো এবং টার্নিং পিচ বানিয়ে অভ্যস্ত। সেসব কথা কানে নেওয়ার জো আছে! তাই তো যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হার এবং স্ট্রাইক রেটে ক্রমাবনতিতে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের ব্যাটারদের সমস্যাটা আসলে কোথায়? টাইগারদের অধিনায়ক শান্ত দ্বিতীয়বার না ভেবেই বলে দিয়েছেন, ‘দায় বাজে উইকেটের।’
শেষ এক সপ্তাহে অন্তত ১০-১২ বার উইকেটের ওপর দোষ চাপিয়েছেন শান্ত। গতকাল মঙ্গলবার এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও টেনেছেন পুরোনো বিষয়টি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্যের ঝুলি সেই অর্থে এখনও নিরেট শূন্য। দলীয় সাফল্য বলতে তেমন কিছু নেই। কখনও বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। টেস্ট মর্যাদার দলটিকে কখনও খেলতে হয়েছে বাছাইপর্বে। মূলপর্বে গ্রুপের বাধা পেরিয়ে যাওয়াটা যেন দুরূহ এক কাজ। অথচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবকটি আসরেই খেলেছে টাইগাররা। অভিজ্ঞতার কলসিও উপচে পড়েছে, আসেনি শুধু ভালো ফল। কুড়ি কুড়ির বিশ্বকাপ শুরুর তিন দিন আগে বড় স্কোর গড়তে না পারার কারণে শান্ত টেনেছেন পুরোনো অজুহাত— উইকেট।
গত ফেব্রুয়ারিতে সব ফরম্যাটের অধিনায়কত্বে আসা শান্ত কয়েকবার উইকেটের বিষয়টি সামনে এনেছেন। টি-টোয়েন্টিতে বড় স্কোর করতে না পারার কারণ হিসেবে শান্ত এএফপিকে বলেছেন, ‘প্রথমত, আমাদের ভালো উইকেটে খেলতে হবে। অনেকেই এটাকে অজুহাত হিসেবে দেখতে পারেন। কিন্তু এটাই সত্যি, আমরা ভালো উইকেটে খুব কম ম্যাচই খেলি।’
বাংলাদেশের উইকেট লো-স্কোরিং হিসেবেই পরিচিত। কম রান, বেশি রোমাঞ্চ কিংবা অল্প লক্ষ্যে স্পিন ঘূর্ণি— তাতেই আসে জয়। কিন্তু উইকেট নিয়ে সমালোচনাটা থেকেই যায়। নিচু ও টার্ন করে আসা পিচে খেলে বিশ্বমঞ্চে কতটা ভালো করবে বাংলাদেশ, সেটি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে হরহামেশা। ফলও তেমনই হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অন্য দল যখন স্কোরবোর্ডে দেড়শ ছাড়িয়ে দুইশ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে, বাংলাদেশ তখনও গণ্ডি ধরে রেখেছে ১৫০-১৬০-এর আশপাশে। ব্যাটারদের স্ট্রাইক রেটও বেশ দৃষ্টিকটু। নাজমুল হোসেন জানিয়েছেন, স্পোর্টিং পিচে খেললে রান তোলার ব্যাপারটি কেটে যাবে। কিন্তু এটা যে এক দিন-দুদিনে হবে না, সেটিও মানছেন শান্ত, ‘ছয় মাসের মধ্যে সবকিছু বদলে ফেলা কঠিন। আমরা যদি ভালো উইকেটে এক-দুই বছর খেলতে থাকি, তাহলে স্ট্রাইক রেটের উন্নতি হবে।’
সম্প্রতি যে ম্যাচগুলো খেলেছি, বিশ্বকাপে যদি আমরা সেভাবে খেলতে পারি, যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব
বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র কদিন আগে অধিনায়ক পরিকল্পনা করেছেন ছয় মাস পরের। যদিও অধিনায়ক আশাবাদী আসন্ন বিশ্বকাপেও হতাশ করবেন না তারা, ‘আমরা কয়েকটি সিরিজ জিতেছি এবং বড় দলের বিপক্ষেও জিতেছি। দল আত্মবিশ্বাসী। সম্প্রতি যে ম্যাচগুলো খেলেছি, বিশ্বকাপে যদি আমরা সেভাবে খেলতে পারি, যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব।’
লিটন, সৌম্য, জাকেরদের বাজে সময় গেলেও তাদের প্রতি আত্মবিশ্বাসী শান্ত। তা ছাড়া দলটিতে অভিজ্ঞতারও কমতি নেই। বাংলাদেশের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জন্য আসন্ন বিশ্বকাপই শেষ টুর্নামেন্ট হতে পারে। দেশে থাকতেও টাইগার অধিনায়ক তাদের একটি ভালো বিশ্বকাপ কাটানোর কথা বলেছিলেন, বিশ্বকাপের ভেন্যুতে সেটির পুনরাবৃত্তি করেছেন। সাকিব-রিয়াদদের কাছে শান্তর চাওয়া অভিজ্ঞতা যেন সবাই ভাগাভাগি করে বাংলাদেশকে ভালো কিছু এনে দেয়, ‘অবশ্যই আমি চাই নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপ খেলুক তারা। তারা কখন নিজেদের ক্যারিয়ার শেষ করবে— এটা তাদেরই সিদ্ধান্ত। একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি চাই, তারা দলের সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করুক।’
জুনের ৮ তারিখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে শান্তদের বিশ্বকাপ মিশন। বাকি তিন প্রতিপক্ষ— দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। প্রথম দুটি ম্যাচ হবে যুক্তরাষ্ট্রে, বাকি দুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। আছে ওয়ার্ম আপ ম্যাচও। বিশ্বকাপের মুলুকে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কতটা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে, সেটিই দেখার।