বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ০৮:৫৫ এএম
গতবারের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন এড়ানো যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে দুই ধাপের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগেই ৪৭ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তৃতীয় ধাপেও পাঁচজন একক প্রার্থী হিসেবে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হওয়ার পথে। তৃতীয় ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন আগামী ১২ মে পর্যন্ত এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে এই সংখ্যা ২১।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানÑ এ তিন পদে সব মিলিয়ে ২২৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১১২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৯ জন নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। একক প্রার্থিতার কারণে প্রায় ৩০টি উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। উপজেলাগুলো হচ্ছে- জামালপুরের মেলান্দ ও মাদারগঞ্জ; নওগাঁ সদর, পাবনা সদর, ফরিদপুর সদর, নোয়াখালীর হাতিয়া এবং চট্টগ্রামের রাউজান ও মিরসরাই। বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, নরসিংদীর পলাশ এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা। ভোলার ভোলা সদর, মনপুরা ও চরফ্যাশন; যশোরের শার্শা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ঢাকার সাভার ও কেরানীগঞ্জ; কুমিল্লার লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, দেবীদ্বার ও চৌদ্দগ্রাম; নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও ফেনীর পরশুরাম।
এবার প্রথম ধাপে বাগেরহাট সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, মাদারীপুরের শিবচর ও ফেনীর পরশুরামে তিনটি পদেই একক প্রার্থী থাকার কারণে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনকে নেতিবাচক অর্থেই বিবেচনা করে থাকেন। গতবারের উপজেলা নির্বাচন এবং তারপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপকভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনায় তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, ‘এটি গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াকে উৎসাহিত করা সমীচীন নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনা দরকার আছে কি না, তা-ও ভেবে দেখতে হবে।’
এবারের পরিস্থিতি সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্যই এবার দলীয় প্রার্থী না দিয়ে প্রার্থিতা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে মাঠপর্যায়ে দলীয় শৃঙ্খলার বদলে সিন্ডিকেট সক্রিয়। দলীয় আদর্শের বদলে সিন্ডিকেট বা ব্যক্তিস্বার্থ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এর কারণে কিছু এলাকায় একক প্রার্থী বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ঘটনা ঘটছে।
প্রথম ধাপে যারা বিনাভোটে জনপ্রতিনিধি : প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাগেরহাট সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, মাদারীপুরের শিবচর ও ফেনীর পরশুরামে তিনটি পদ ছাড়াও বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, হাকিমপুরে (দিনাজপুর) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সাঘাটায় (গাইবান্ধা) চেয়ারম্যান, বেড়া (পাবনা) উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সিংড়ায় (নাটোর) চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, বড়লেখায় (মৌলভীবাজার) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সন্দ্বীপে (চট্টগ্রাম) ভাইস চেয়ারম্যান, কক্সবাজার সদরে ভাইস চেয়ারম্যান, রোয়াংছড়িতে (বান্দরবান) চেয়ারম্যান পদ, কাউখালীতে (রাঙামাটি) ভাইস চেয়ারম্যান, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপে যারা বিনাভোটে জনপ্রতিনিধি : দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২১ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কুমিল্লা আদর্শ সদরে মো. আমিনুল ইসলাম, জামালপুরের ইসলামপুরে মো. আ. ছালাম, ফরিদপুরের নাগরকান্দায় মো. ওয়াহিদুজ্জামান, চট্টগ্রামের রাউজানে একেএম এহছানুল হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আবুল কাশেম চিশতী, সাভারে মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও মৌলভীবাজার সদরে মো. কামাল হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাজশাহীর বাগমারায় মো. শহীদুল ইসলাম, রাঙামাটির রাজস্থলীতে শ্রী হারাধন কর্মকার, কুমিল্লা আদর্শ সদরে আহাম্মেদ নিয়াজ, চট্টগ্রামের রাউজানে নুর মোহাম্মদ প্রমুখ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাঙামাটির রাজস্থলীতে গৌতমী খিয়াং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সাঈদা সুলতানা, কুমিল্লা আদর্শ সদরে হোসনে আরা বেগম, চট্টগ্রামের রাউজানে রুবিনা ইয়াছমিন রুজি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় হোসনে আরা বেগম, নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে শাহিদা মোশারফ ও রূপগঞ্জে ফেরদৌসী আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
তৃতীয় ধাপেও পাঁচজন একক প্রার্থী : তৃতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের মধ্যে পাঁচজন রয়েছে একক প্রার্থী। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, যশোরের অভয়নগরে ভাইস চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জের ছাতকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী রয়েছে। এসব প্রার্থী বাছাইয়ে টিকলে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারেন। এছাড়া এ ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত একক প্রার্থীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।