× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘ভুতুড়ে’ জনসংখ্যায় বরাদ্দ বাগিয়ে আত্মসাৎ চসিকের চতুরতা

শারমিন রিমা, অতিথি প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৩ এএম

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৩ পিএম

‘ভুতুড়ে’ জনসংখ্যায় বরাদ্দ বাগিয়ে আত্মসাৎ চসিকের চতুরতা

চট্টগ্রাম মহানগরে কত লোক বাস করে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে গিয়ে আপনাকে বিভ্রান্তিতে পড়তে হবে! সরকারি হিসাব অর্থাৎ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে জনসংখ্যা ৩৪ লাখের বেশি নয়। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) শহরের জনসংখ্যা কখনও বলে ৬০ লাখ, কখনও ৭০ লাখÑ কখনও বা কোটির ঘরে নিয়ে যায়। জনসংখ্যার কেন এই গরমিলÑ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একের পর এক প্রকল্পের নথি ঘাঁটতে হয়েছে, সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে দুই ডজন প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ‘ভুতুড়ে’ এই জনসংখ্যা রহস্যভেদ করার চেষ্টা করা হয়েছে। চসিকের কর্মকর্তারা এটিকে ‘সামান্য ভুল’ বলে দাবি করলেও জনসংখ্যা বেশি দেখানোর পেছনে খুঁজে পাওয়া গেছে বরাদ্দ বাগিয়ে আত্মসাৎ করার এক সুচতুর কৌশল! 

২০২২ সালের ১৫ জুন জনশুমারি ও গৃহগণনার কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, মূল্যায়নে জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য-উপাত্ত অপরিসীম ভূমিকা পালন করবে। সেই বছরের পরের মাসেই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। সেখানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা দেখানো হয় সর্বোচ্চ ৩৪ লাখ। তবে জনসংখ্যার এই হিসাব মানে না খোদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনই। তাই তো তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জনসংখ্যা দেখানো আছে সর্বশেষ জনশুমারির দ্বিগুণেরও বেশি, ৭৫ লাখ। সাইটটি হালনাগাদ করা হয়েছে ২৪ জুলাই ২০২১; তার মানে সর্বশেষ জনশুমারির এক বছর আগের হিসাব এটি। যদিও ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী চসিকের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ লাখ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটির জনসংখ্যা ৩৪ লাখ? আমি মনে করি আমাদের চট্টগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। আমার এটা যদি ভুল হয়, তাহলে ওদেরকে (বিবিএস) প্রমাণ করতে বলেন।’

ভুলটা কোথায়, সেটি খুঁজতে গিয়ে চসিকের জনসংখ্যার হিসাবের ভিত্তি কীÑ তা জানার চেষ্টা করেও সিটি করপোরেশনের কোনো দপ্তর বা কোনো কর্মকর্তা সদুত্তর দিতে পারেননি। ৭০ লাখ জনসংখ্যার পক্ষেও কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেনি, আমরাও খুঁজে পাইনি। জনসংখ্যার সত্যতা যাচাইয়ে সিটি করপোরেশন এলাকার কোন ওয়ার্ডে কত লোক বাস করে সেই তথ্য জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের পর ‘নিজেদের কোনো পরিসংখ্যান নেই’ জানিয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য সরবরাহ করে চসিক।শুধু তা-ই নয়; নির্দিষ্ট একটি জনসংখ্যার হিসাবও দিতে পারেনি তারা। 

নিজেদের ওয়েবসাইটে ৭০ লাখ জনসংখ্যার শহর বললেও প্রকল্প পাস করাতে গিয়ে চসিক কখনও মানুষের সংখ্যা বেশি দেখায়, কখনও বা কম! অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একেক প্রকল্পে একেক ধরনের জনসংখ্যার হিসাব তুলে ধরছে সংস্থাটি। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি প্রকল্পের নথিপত্র ঘেঁটে চসিকের জনসংখ্যা নিয়ে গোঁজামিল খুঁজে পেয়েছি আমরা। 

চট্টগ্রাম জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘প্রথমত আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব ঢাকার মতো না। পাহাড়-সাগর-নদীবেষ্টিত ৬০ বর্গমাইলের শহরে ৭০ লাখের বেশি মানুষ থাকে কী করে? তারা (চসিক) কোন হিসাবে ৭০ লাখ বলছে তা আমাদের জানা নাই। বছর বছর আমরা বিভিন্ন ম্যাথডে (পদ্ধতিতে) জরিপকাজ চালাই বা চলমান আছে। জনসংখ্যা কোনোভাবেই ৩৪ লাখের বেশি হবে না।’

জনসংখ্যার সঠিক চিত্র খুঁজে পেতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম শহরে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণকারী মানুষের হিসাব চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করি। সেখানে দেখা যায়, ৫ বছরের ওপরে ৩২ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৪ জন মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকা পাওয়া মানুষের হিসাবের সঙ্গে পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া জনসংখ্যার হিসাব কাছাকাছি রয়েছে। পরবর্তী সময়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে একই তথ্য জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা জানায়Ñ চসিক এলাকায় করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৫৬৭ জন। 

আট মাসে জনসংখ্যা বেড়েছে ৪০ লাখ!

গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১৩টি অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে আটটির কাজ শেষ হয়েছে এবং পাঁচটি চলমান। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭ হাজার ৬৫২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি প্রকল্পের নথি ধরে অনুসন্ধান চালানো হয়। প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্পের নথিতে জনসংখ্যার ‘গোঁজামিল‘ খুঁজে পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায়, একেক প্রকল্পে নিজেদের সুবিধামতো একেক ধরনের ‘জনসংখ্যা’ দেখিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করেছে সংস্থাটি। 

২০১৬ সালের নভেম্বরে ৭১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার নেওয়া ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসমূহের উন্নয়ন এবং নালা, প্রতিরোধ দেয়াল, ব্রিজ ও কালভার্ট এর নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা দেখানো হয় ৬০ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৯ জন। অথচ ওই একই সময়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে ২৮ লাখ, যা সিটি করপোরেশনের হিসাবের চেয়েও প্রায় ৩৩ লাখ কম। 

বিস্মিত হতে হয় ৮ মাস পরে নেওয়া আরেকটি প্রকল্পের ডিপিপি দেখে! ২০১৭ সালের জুলাইতে নেওয়া ৩৮২ কোটি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকার সেই প্রকল্পের নামÑ ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং ব্রিজসমূহের উন্নয়নসহ আধুনিক যান যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সড়ক আলোকায়ন’। সেখানে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা এক লাফে বেড়ে হয় এক কোটি। অর্থাৎ মাত্র আট মাসের ব্যবধানে শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে ৪০ লাখ। ২০১৮ সালেও একইভাবে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ’ নামের প্রকল্পেও জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে প্রায় এক কোটি।

মজার তথ্য হচ্ছে, জনসংখ্যার এই হিসাব আবার কমিয়েও দেখিয়েছে চসিক। পরের বছর ২০১৯ সালেই সেটি ঘটেছে। ‘মর্ডানাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ নামের এই প্রকল্পে প্রায় ২৬১ কোটি টাকা খরচ করে শহরে এলইডি বাতি লাগানো হয়। প্রকল্পটির নথিতে দেখা যায়, শহরের জনসংখ্যা এক কোটি থেকে এক বছরে এক লাফে নেমে হয়েছে ৫০ লাখ। জনসংখ্যার প্রায় একই রকম হিসাব তুলে ধরা হয়েছে তিন বছর পরের ২০২২ সালের ‘লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট (সিআরআরপি)’ নামের আরেকটি প্রকল্পে। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন ওঠে এই দুটি প্রকল্পে লোকসংখ্যা কেন কম দেখাল চসিক? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, প্রথম প্রকল্পটির অর্থায়ন করেছে ভারত সরকার পরেরটি বিশ্বব্যাংক। অর্থাৎ সরকারি বরাদ্দের বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পে চসিক জনসংখ্যা ‘বাড়িয়ে’ দেখালেও বিদেশি অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পের ক্ষেত্রে ‘বেশি বাড়িয়ে’ দেখায় না। অবশ্য ‘কমিয়ে দেখানো’র পরও এসব প্রকল্পের জনসংখ্যা সেই সময়ের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া হিসাবের চেয়ে প্রায় ১৫ লাখ বেশি ছিল। 

প্রকল্প প্রণয়নের সময় চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা নিয়ে সিটি করপোরেশন কেন এমন চাতুর্চাতুর্যের চাতুর্যের আশ্রয় নেয়Ñ এই প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল হুদা বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ, বিভিন্ন প্রকল্প এবং বাজেটের ক্ষেত্রে জনসংখ্যাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ সরকারের দেওয়া প্রকল্পে এই তথ্যটা যাচাইবাছাই করা হয় না। কেবল বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে কোনো প্রকল্প নেওয়া হলে সে সময় জনসংখ্যা বা উপকারভোগীর তথ্য নিয়ে মাথা ঘামানো হয়। কারণ এ বিষয়ে তাদের (দাতা সংস্থার) শর্ত দেওয়া থাকে। এরপরও কিন্তু প্রকল্পে মনগড়া তথ্যের ব্যবহার করে সিটি করপোরেশন।’

শুধু একেক প্রকল্পে একেক রকমের জনসংখ্যা দেখানো নয়; একই প্রকল্পে দুই রকমের জনসংখ্যার হিসাব উপস্থাপনের নজিরও খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ৩৮২ কোটি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকার একটি প্রকল্পে নগরীর জনসংখ্যা অর্থাৎ প্রকল্পের সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী দেখানো হয়েছে এক কোটিÑ যা প্রকল্পের ডিপিপির ১৩ পৃষ্ঠার ১৫.৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে। আবার এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ৬০ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৯ জনÑ যা উল্লেখিত রয়েছে ডিপিপির ৮৯ ও ৯০ পৃষ্ঠায়। 

তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি পেতে পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া জনসংখ্যার তথ্য ডিপিপিতে দেখায় চসিক। তবে সেটি দেখাতে গিয়েও ‘চতুরতার’ আশ্রয় নেয় সংস্থাটি। দুই বছর আগের ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে শতভাগ সরকারি অর্থায়নে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির ডিপিপি ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০১ ও ২০১১ জনশুমারির ভিত্তি ধরে শহরের জনসংখ্যা দেখানো হয়। তবে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে করা হয় ‘কারসাজি’। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সে হিসেবে প্রকল্প নেওয়ার সময় জনসংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ৩৮ লাখ। কিন্তু চসিক ডিপিপিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ধরে শহরের জনসংখ্যা ৯২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৪৩ জন দেখায়। জনসংখ্যার এই বৃদ্ধির হারের হিসাব কোথা থেকে পেলÑ সেই উত্তর চসিকের কেউ দিতে পারেনি। প্রকল্পে এমন ভুতুড়ে জনসংখ্যার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিস্ময় প্রকাশ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জনসংখ্যার এমন বিশাল ভ্যারিয়েশন এই প্রথম আপনার কাছ থেকেই জানলাম। এর আগে জানতামই না। আমাদের লিডাররা বলতে বলতে হয়তো এমন হয়ে গেছে।’ 

যত মানুষ, তত লাভ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্তারা বাড়তি মানুষ দেখানোকে ‘ভুল’ বললেও সেটি ছিল ‘ইচ্ছাকৃত’ ভুল। বিষয়টি পরিষ্কার হয় বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় করা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রায় ২৬৭ কোটি টাকার ‘লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট’ (এলজিসিআরপি) নামের প্রকল্পটির দিকে তাকালে। এই প্রকল্প থেকে কোতোয়ালি থানার আন্দরকিল্লার মোমিন রোডের, চেরাগি পাহাড় মোড় থেকে লালদীঘি মোড়ের দিকে যেতে ৭৬২ মিটার ফুটপাথের সংস্কারের জন্য ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় চসিক। চান্দগাঁও থানা এলাকার মোহরা ওয়ার্ডের আরাকান রোডে, আরও কম দৈর্ঘ্যের ৭৩০ মিটার ফুটপাথের সংস্কারের জন্য একই তহবিল থেকে চসিককে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩ কোটি টাকা। একই ধরনের, একই মাপের সংস্কারকাজে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বেশি খরচ হয়েছে শুধু জনসংখ্যার হিসাবের হেরফেরের কারণে! প্রকল্পে মোমিন রোডের ফুটপাথ ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা দেখানো হয় ৩৮ হাজার ৪০৯ জন; অপরদিকে আরাকান রোডের ফুটপাথ ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার দেখানো হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘সরকার একদিকে বলছে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ওপর প্রকল্প প্রণয়ন করো, আরেকদিকে অনির্ভরযোগ্য তথ্যের ওপর প্রকল্প পাস করে দিচ্ছে। এভাবে প্রকল্প নেওয়াটাই অপরাধ, যা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। এই অনিয়মের দায়দায়িত্ব শুধু প্রকল্প প্রণেতার নয়, যারা অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত তাদেরও দায়দায়িত্ব আছে।’

‘জনসংখ্যা নীতি ২০১২’ এবং ‘সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকায়’ জনসংখ্যার সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও উপকারভোগী জনসংখ্যার ডিজিটাল ডেটাবেস এবং সেই তথ্যের উৎস সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে; যা ওই নির্দেশিকার ১.১.৮.১ অনুচ্ছেদ, ১.১.৯ অনুচ্ছেদ এবং ১.১.১৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যার নির্ভরযোগ্য সরকারি তথ্য প্রকল্পগুলোর ডিপিপিতে ব্যবহার করেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। 

একটি উন্নয়ন প্রকল্পে মানুষের সংখ্যা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ (সওজ), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষক এবং প্রকল্প পরিচালকসহ ১৫ জন প্রকৌশলীর সঙ্গে। তাদের প্রত্যেকেই রাস্তাঘাট নির্মাণ কিংবা অন্যান্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা কম-বেশির ওপর বরাদ্দের বড় প্রভাব আছে বলে মন্তব্য করেছেন। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এগুলো হচ্ছে তাদের গাফিলতি। তাদের (চসিক) কোন তথ্যটা সত্য? ৭০ লাখ নাকি ১ কোটি? এখন ৭০ লাখের বেশি বলছে তা কোন সালের সার্ভে অনুসারে? পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যই হচ্ছে নির্ভরযোগ্য তথ্য। কারণ এটাই সরকারি তথ্য। দুই-তিন বছর সময়ের ব্যবধানে ১০ শতাংশ এদিক-সেদিক হতে পারে। চাইলেই তো কোনো সংস্থা মনগড়া তথ্য দিতে পারে না।’

ব্যতিক্রম শুধু চসিক

সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরের অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোও বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। নগরবাসীকে প্রত্যক্ষ সেবাদানকারী আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো চট্টগ্রাম ওয়াসা। তাদের কয়েকটি প্রকল্পের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া জনসংখ্যার হিসাবকে ভিত্তি ধরে চট্টগ্রাম শহরের জনসংখ্যা দেখায় সংস্থাটি। ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পে (ফেজ-২) ২০১১ সালের আদমশুমারি তথ্য অনুসারে শহরের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘যেকোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারি তথ্য ধরে কাজ হয়। সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যার তথ্য নিয়ে আমাদের কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী আমরাও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ধরে কাজ করি।’ তিনি আরও জানান, শহরের মানুষের সংখ্যা বা উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়লে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ে। 

প্রকল্পে জনসংখ্যার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ‘প্যারামিটার’Ñ এমন মন্তব্য করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল দীপ বলেন, ‘টেকনিক্যালি মনে হবে সরাসরি জনসংখ্যার ভূমিকা নেই কিংবা মাথাপিছু মানুষ গুনে প্রকল্প নেওয়া হয় না। কিন্তু সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু এই মানুষ বা জনসংখ্যা। জনসংখ্যাকে কেন্দ্র করেই কিন্তু সব প্রকল্প বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।’

চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এই সেবা সংস্থার মতো দেশের অন্য সিটি করপোরেশনও কি বাড়তি জনসংখা দেখিয়ে বেশি বরাদ্দ আনেÑ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়িত দুটি প্রকল্পের নথি জোগাড় করি। সেখানে দেখা যায়, পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া জনসংখ্যাকে ভিত্তি ধরেই তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তবে বাকি ১০টি সিটি করপোরেশনের তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি। 

নগর-গবেষক, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের (সিইউএস) সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সব প্রকল্পে সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মানা উচিত উল্লেখ করে বলেন, ‘পরিকল্পনা কার জন্য? অবশ্যই জনগণের জন্য, এলাকার জন্য। একই কর্তৃপক্ষ তিনটা প্রকল্পে তিন রকমের জনসংখ্যা দেখালে হবে না। এটা যৌক্তিক না। প্রকল্প যারা অনুমোদন করে তাদের দায়িত্ব এসব চেক করা।’

চসিকের দাবি ‘সামান্য ভুল’!

জনসংখ্যার এই হিসাবের গোঁজামিল কবে থেকে দিচ্ছে তা জানতে গত ১০ বছরে চসিকের নেওয়া সব প্রকল্পের ডিপিপির নথি চেয়ে ২০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেই আবেদনের সাড়া দেয়নি চসিক।

চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে কয়েক দফা চেষ্টার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সুযোগ মেলে। তিনি পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনসংখ্যার তথ্য ভুল দাবি করে বলেন, ‘আমাদের এখানে বাস্তবতার নিরিখে দেখা হইছে। তাই প্রকল্পে ব্যবহার করা হইছে। এখন এটা যদি মিথ্যা হয় তাহলে তারা প্রমাণ করুক। তখন যদি ৩৪ লাখের বেশি না হয়ে ৭০ লাখ হয়?’ চসিকের দাবি করা জনসংখ্যার ভিত্তি কী, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘যেহেতু একটা সংস্থা আছে। গবেষণা তারাই করবে। আমাদের গবেষণা নাই। সরকার উনাদেরকে (পরিসংখ্যান ব্যুরো) গবেষণা করার জন্য দিয়েছেন। উনাদেরটা ভুল বলেই আমরা ৭০ লাখ বলছি। আমাদের কোনো ভুল নাই।’ 

তবে ভুল স্বীকার করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, ‘জনসংখ্যার সাথে প্রকল্প ব্যয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তাহলে কেন একেক প্রকল্পে একেক ধরনের জনসংখ্যা তুলে ধরা হয়Ñ এমন প্রশ্নে তিনি কিছুটা বিব্রত হয়ে বলেন, ‘ভুলটা সিটি করপোরেশনের না। যারা ফিজিবিলিটি রিপোর্ট করেছে তাদের। এই দায় আমরা নেব কেন?’ ফিজিবিলিটি স্টাডির অনুমোদন আপনার হাতেই হয়ে থাকেÑ এটা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘প্রকল্প নেব কি নেব না, সেটার জন্য মানুষের সংশ্লিষ্টতা আছে। প্রকল্প নিয়ে ফেললে মানুষের বিষয় আসতেছে না। তখন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন অনুযায়ী যা আসবে তাই খরচ হবে। এটা সামান্য ভুল। আসলে মূল হচ্ছে ফিজিবিলিটি স্টাডি। ডিপিপি ভুল হইতে পারে।’ কিন্তু ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রতিবেদনেও যে অসংগতি আছে সেই নথি দেখালে তিনি বলেন, ‘যারা স্টাডি করেছে তারাই বলতে পারে। আমরা থার্ড পার্টিকে টাকা দিয়ে করাই। আমরা নিজেরা যাচাইবাছাই করি না।’ কোন কনসালট্যান্ট ফার্মের মাধ্যমে ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছেন সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানেন না বলে এড়িয়ে যান এবং নির্বাহী প্রকৌশলী জসীম উদ্দিনকে দেখিয়ে দেন।

চসিকের ডিপিপি মাস্টার! 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এখন প্রায় সব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করেন পুরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন। ২০১৩ সাল থেকে চসিকের উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করেছেন এ কর্মকর্তা। শহরের জনসংখ্যার হিসাবে যে গোঁজামিল আমরা খুঁজে পেয়েছি, সেই ডিপিপিগুলো এই কর্মকর্তারই তৈরি করা। 

প্রতিটি প্রকল্প নেওয়ার আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হয়। অথচ এই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই ‘মনগড়া ফিজিবিলিটি স্টাডির তথ্য’ দিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে প্রকল্প পাস করিয়ে আনার কারণে চসিকে তার ক্ষমতার দাপটও বেশি। চসিকের প্রকৌশল বিভাগের এক নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২০০৬ সালে সড়ক পরিদর্শক হিসেবে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান তিনি (জসীম উদ্দিন)। এরপর ২০০৯ সালে বিভাগের ১১ সিনিয়র কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে তাকে বানানো হয় নির্বাহী প্রকৌশলী। উনি যে মন্ত্রণালয়ে টাকা দিয়ে প্রকল্প পাস করে আনে সেটা এখানে ওপেন সিক্রেট। সবাই জানে। উনাকে ডিপিপি মাস্টার ডাকা হয়। ’

এ ছাড়াও জসীম উদ্দিন ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক পদের দায়িত্বে আছেন। এটি চসিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এতে খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) আনুষ্ঠানিকভাবে চার মাস ধরে তদন্ত-অনুসন্ধান চালিয়ে এই প্রকৌশলী ও তার স্ত্রীর নামে আয়বহির্ভূত বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে। গেল মাসে শেষ করা দুদকের সেই তদন্ত প্রতিবেদনটি আমাদের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, জসীম উদ্দিনের প্রায় দুই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। 

এই প্রতিবেদন করতে গিয়ে কয়েক দফা নির্বাহী প্রকৌশলী জসীম উদ্দিনের সাক্ষাৎকার চাওয়া হয়। কোনোভাবেই তিনি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখেও সাক্ষাৎ দেননি। গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে তার রুমের সামনে দেখা পেলে সরাসরি সাক্ষাৎকার চাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবেদকের মুখোমুখি না হয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে রাখেন তিনি। ২৫ মিনিট অপেক্ষার পরে একপর্যায়ে রুম থেকে বের হন এই প্রকৌশলী।‘ভুতুড়ে’ জনসংখ্যার প্রসঙ্গ টেনে তাকে প্রশ্ন করতেই তিনি তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলেন, ‘চিফের সঙ্গে কথা বলে দিবো। এখন দিতে পারব না। আপনি পরে আসেন। এ বিষয়ে চিফের সঙ্গে কথা বলেন।’ সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি আবারও চসিকে তার মুখোমুখি হলে তিনি ‘মিটিং আছে’ বলে এড়িয়ে যান। 

যাদের দেখার কথা তারাই ঘুমে!

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন শহরের জনসংখ্যা সংখ্যা নিয়ে নয়ছয় করে তা পরিকল্পনা কমিশনেরও অজানা নয়! সাত বছর আগে ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় চসিকের জনসংখ্যার হিসাবে গোঁজামিল ধরা পড়ে। ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসমূহের উন্নয়ন এবং নালা, প্রতিরোধ দেয়াল, ব্রিজ ও কালভার্ট এর নির্মাণ/পুননির্মাণ’ নামের প্রকল্পের যে ডিপিপি চসিক তৈরি করে সেটিতে প্রথমে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা দেখানো হয় ৯২ লাখ ১০ হাজার। পিইসির আপত্তির মুখে ডিপিপি সংশোধন করে চসিক সেই প্রকল্পের জন্য শহরের জনসংখ্যা দেখায় ৬০ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৯ জন। তবে এই ঘটনার পর থেকে সিটি করপোরেশন নতুন ‘কৌশল’ নেয়। ডিপিপিতে আলাদাভাবে ওয়ার্ডভিত্তিক জনসংখ্যা না দেখিয়ে একেবারে মোট জনসংখ্যা বা উপকারভোগীর সংখ্যা দেখানো শুরু করে।

বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইনকে ডিপিপিতে চসিকের মনগড়া জনসংখ্যার হিসাব তুলে ধরার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটার দায়দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। স্থানীয় সরকার বিভাগেরও দেখা উচিত। আর আমাদেরও দায়িত্ব আছে। তবে প্রকল্প অনগোয়িং (চলমান) হওয়ার পর আমরা মনিটরিং করি। সেক্ষেত্রে শুরুতেই দেখে পরিকল্পনা কমিশন। তাদের অনুমোদনের পরে দেখার বিষয় থাকে। আমি আসার পরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকল্প এখনও অনুমোদন করিনি। পরবর্তী সময়ে এই বিষয়টা অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখব।’

জনসংখ্যার ভুল তথ্য বড় অনিয়ম উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এখানে একটা শুভংকরের ফাঁকি ও সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জালিয়াতি, অনিয়ম-দুর্নীতি করা হচ্ছে। যারা এর সাথে জড়িত, তারা যেহেতু কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী, ফলে নির্বিকারভাবে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে। যেহেতু একই কর্তৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের জনসংখ্যার তথ্য দেখিয়েছে, এ থেকে খুবই সহজে অনুমেয় যে এখানে দুর্নীতি হয়েছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা