× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এই কাউন্সিলে কী হবে!

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৭ এএম

এই কাউন্সিলে কী হবে!

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রমের মানদণ্ড নির্ধারণের জন্য সাত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (বিএসি) এখনও কার্যকর হয়নি। যাত্রা শুরুর এই দীর্ঘ সময়ে একটি প্রতিষ্ঠানকেও সনদ দিতে পারেনি এই কাউন্সিল। সনদ নিতে আগ্রহও প্রকাশ করেনি সব বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৫টি; অথচ এখন পর্যন্ত সনদ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেছে মাত্র ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, অ্যাক্রেডিটেশন সনদের গুরুত্ব কী তা যদি প্রতিষ্ঠানটি বোঝাতে সক্ষম না হয় তাহলে কেন এই সনদ নেবে? কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা আর গাফিলতির কারণেই কার্যক্রমের এই ধীরগতি বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন। তবে বিএসির কর্মকর্তারা বলছেন, যখন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সনদ নিয়ে নেবে তখন এই প্রক্রিয়াটি গতি পাবে। অ্যাক্রেডিটেশন সনদ দিতে আরও এক বছর সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন তারা। 

সনদ নিতে আগ্রহী যারা

বিএসির অ্যাক্রেডিটেশন শাখা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ১৭০টি প্রোগ্রামের অ্যাক্রেডিটেশন সনদ নেওয়ার জন্য ইন্টার টু অ্যাপ্লাই (আবেদন করার অভিপ্রায়) করেছে। এর মধ্যে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৪টি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় ২টি, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ১৫টি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ৪টি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৭টি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ১২টি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৫টি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ৫টি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৬টি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং ১২টি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ১৩টি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১টি, সিটি ইউনিভার্সিটি ৫টি, সাউদান ইউনিভার্সিটি ১৭টি, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১টি, গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২টি, ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১১টি, আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ৭টি, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ১২টি, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি ১২টি, গ্রীণ ইউনিভার্সিটি ২টি এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ১টি বিষয়ের সনদ নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেছে। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্রেডিটেশন সনদ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদের সব মানদণ্ড পূরণ করা আছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। কোনো বিষয়ে ঘাটতি থাকলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা সংশোধন করার জন্য বলা হচ্ছে। সব মানদণ্ড পূরণ করতে পারলেই তারা সনদের জন্য মূল আবেদন করবে। এরপর বিশেষজ্ঞ কমিটি যাচাইবাচাই করে তাদের সনদ দেবে। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে সব প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ। কারণ যারা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সব মানদণ্ড পূরণ করে সনদ পাবে তারা বিএসি সনদপ্রাপ্ত হিসেবে লিখতে পারবে। এতে অভিভাবকরাও সহজেই বুঝতে পারবে কোন প্রতিষ্ঠানের বা বিভাগের মান ভালো। তখন তারা বুঝেশুনে তাদের সন্তানদের এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে পারবে। ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান নামমাত্র পাঠদান করে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে তাদের অস্তিত্বসংকটে পড়তে হবে। তবে অ্যক্রিডেটশন কাউন্সিলের গতি যদি না বাড়ে তাহলে কোনো কাজই হবে না। 

ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক-শিক্ষাবিদরা

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানদণ্ড চিহ্নিত করার জন্য অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের যাত্রা শুরুর খবরে আশাবাদী হয়েছিলেন অনেক অভিভাবক। কিন্তু ধীরগতির কারণে তারা এখন চরম হতাশ। মামুনুর রশীদ নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (সিএসসি) পড়তে আগ্রহী। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিভাগের মান ভালো তা খুঁজে বের করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যদি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল সবাইকে সনদ দিয়ে দিত তাহলে আমরা সহজেই ভালোমন্দ খুঁজে বের করতে পারতাম। 

আরেক অভিভাবক রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা নাদিয়া সুলতানা বলেন, দেশে এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগের মান কেমন তা খুঁজে বের করাই মুশকিল। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল যদি সাত বছরেও এই কাজ করতে না পারে তাহলে সরকারের উচিত বিকল্প পথ খুঁজে বের করা। 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরা একটা স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করে সেল্ফ অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে যদি যোগ্য মনে করে তাহলে অ্যাক্রেডিটেশনের জন্য কাউন্সিলে যায়। কাউন্সিল ফের যাচাইবাচাই করে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অনেকটা আমলাতান্ত্রিক উপায়ে চাপিয়ে দেওয়ার মতো। কাউন্সিল শুধু বলছে, কারা অ্যাক্রেডিটেশনে আসতে চাও আবেদন করো, মান কী কী পূরণ করা আছে জানাও। এটা খুব একটা কার্যকর উপায় নয়। 

তিনি আরও বলেন, এই সনদ নিতে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় কেউ সনদে আগ্রহী হচ্ছেন না। ইউজিসি যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় সবাইকে ধাপে ধাপে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ নিতে হবে তাহলে সবাই আগ্রহী হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শিক্ষানীতিতে আমরা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মান মূল্যায়নের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার কথা বলেছিলাম। মূল্যায়নের জন্য আবেদন করার কোনো কথা ছিল না। আর প্রতিষ্ঠানটি যদি সাত বছরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ দিতে না পারে, তাহলে তাদের কোনো দক্ষতাই নেই। আর একটা প্রতিষ্ঠানের যদি কোনো আউটপুট না থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানটি কেন করা হলো সেই প্রশ্ন থেকে যায়। বৃহৎ স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটিকে দক্ষ করা জরুরি। 

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির এত বছরেও কাজের কাজ কিছু না হওয়া খুবই দুঃখজনক। সরকারের উচিত প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। প্রয়োজনীয়তা যদি থাকে তাহলে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হোক। 

সনদের জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে

অ্যাক্রেডিটেশনের জন্য আবেদনে আগ্রহী উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/একাডেমিক প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী ইনস্টিটিউট/অনুষদ/বিভাগকে পূরণ করতে হবে বেশ কিছু শর্ত। এগুলো হলো- দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান/ একাডেমিক প্রোগ্রাম অনুমোদিত হতে হবে; উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ব্যবস্থাপনার জন্য একটি স্থায়ী ও কার্যকর ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল থাকতে হবে; উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/একাডেমিক প্রোগ্রামকে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৭-এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী প্রণীত ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ থাকতে হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শতাংশ একাডেমিক প্রোগ্রাম কাউন্সিল কর্তৃক অ্যাক্রেডিটেশন প্রাপ্ত হলে ওই বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্রেডিটেশনপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

অ্যাক্রেডিটেশন বিধিমালা অনুযায়ী, নির্ধারিত স্কোরের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি স্কোর পেলে কোনো প্রোগ্রাম বা বিশ্ববিদ্যালয়কে অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ স্কোর পেলে দেওয়া হবে কনফিডেন্স সার্টিফিকেট। তবে ৬০ শতাংশের কম নম্বর পেলে কোনো সার্টিফিকেটই দেওয়া হবে না। কনফিডেন্স সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/একাডেমিক প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অ্যাক্রেডিটেশন মানদণ্ড ও শর্তাবলি পূরণ করতে পারলে অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট পাবে। অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেটের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে পাঁচ বছর। নির্দিষ্ট সময় পর আবার এ সনদ নিতে হবে।

তবে কনফিডেন্স সার্টিফিকেটের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে সর্বোচ্চ এক বছর। কনফিডেন্স সার্টিফিকেট কোনোভাবেই নবায়ন করা যাবে না। অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট পাওয়া উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/একাডেমিক প্রোগ্রাম পরিচালনায় মানদণ্ড বজায় রাখতে না পারলে কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি অ্যাক্রেডিটেশন/কনফিডেন্স সার্টিফিকেটের বৈধতা স্থগিত করতে পারবে।

কাউন্সিলের চেয়ারম্যান যা বললেন

অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা কাজ করছি। ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ১৭০টি বিষয়ে অ্যাক্রেডিটেশন নিতে আবেদন করেছে। আমাগী এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্রেডিটেশনের আওতায় আসবে বলে আশা করছি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা