মো. মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৩ ১৪:১৪ পিএম
হবিগঞ্জে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্ট। ফাইল ফটো
হবিগঞ্জের শাহজীবাজারের ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০২২ সালের ২৯ মে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই অগ্নিকাণ্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সঞ্চালন লাইনের তিনটি ট্রান্সফরমারের দুটি পুড়ে যায়। বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় ১৪ মাস ধরে কেন্দ্রটিকে বন্ধ করে রেখেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে তিনটি ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে দুটি ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। এই দুটি ট্রান্সফরমার পুনঃস্থাপন করতে ৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। কিন্তু এই ৪৫ কোটি টাকার অনুমোদন না পাওয়ায় ৩৩০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দীর্ঘদিনেও চালু করা যায়নি।
গ্যাসচালিত শাহজীবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫২ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে চলেছে। কেন্দ্রটি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় করেছে ২ টাকা ৮৪ পয়সা। অর্থাৎ কেন্দ্রটি যদি চালু থাকত, তাহলে সরকারের বিরাট অঙ্কের আর্থিক সাশ্রয় হতো। ওই বছর সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোই ১৭ টাকা ৯৫ পয়সায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। অর্থাৎ গ্যাসচালিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৫ দশমিক ১১ টাকা সাশ্রয় হতো।
কেন্দ্রটির ৫২ ভাগ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর ধরে হিসাব করে দেখা গেছে, একই পরিমাণ ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের বদলে শাহজীবাজারের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিলে দৈনিক ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা সাশ্রয় হতো। অর্থাৎ কেন্দ্রটি মাত্র চার দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যে সাশ্রয় হতো সেই পরিমাণ টাকা দিয়েই এটি সংস্কার করা সম্ভব।
পিডিবির এই উদাসীনতাকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সরকার এক দিকে আর্থিক সংকটের কথা বলছে। অন্যদিকে বেসরকারি, আমদানি খাত থেকে বিদ্যুৎ কীভাবে কেনা যায় সারাক্ষণ সেই চেষ্টাই করে। এই ঘটনা তারই একটি বড় উদাহরণ।’ বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে শামসুল আলম বলেন, ‘পিডিবি নিজে কিছু করতে পারে না। সবকিছুতে বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এসব ঘটনা দেখলে মনে হয় না, বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো সমন্বয় আছে।’
শাহজীবাজারের ৩৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদনে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের কিছু দিন পর ১১০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বিকল হয়ে যায়। ২০২২ সালের ২৯ মে একটি ট্রান্সফরমারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন অন্য ট্রান্সফরমারে ছড়িয়ে পড়ে। একই দিন আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও দুটি ট্রান্সফরমারই বিকল হয়ে যায়।
শাহাজীবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী শফি উদ্দিন আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ট্রান্সফরমার আগুনে পুড়ে গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অক্ষত আছে। ট্রান্সফরমার দুটি পুনঃস্থাপনের জন্য ৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি কাজে বিভিন্ন জায়গায় অনুমোদন নিতে হয়। এ কারণেই দেরি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় হবিগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালে হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ঘেরা নিভৃত অঞ্চলে শাহজীবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। একই বছর সেপ্টেম্বরে শাহজীবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৪ দশমিক ৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। ১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে আরও ছয়টি গ্যাস টারবাইন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম তিনটি ইউনিটের প্রতিটির ক্ষমতা ১৪ দশমিক ৮ মেগাওয়াট করে। বাকি চারটি ইউনিটের প্রতিটির ক্ষমতা ছিল ১৫ মেগাওয়াট। ১৯৬৯ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মোট ক্ষমতা দাঁড়ায় ১০৪ মেগাওয়াট। এটিই সে সময় দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। মেয়াদ শেষ হওয়াতে কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই জায়গায় পরবর্তীকালে ২০০০ সালে ৩০ মেগাওয়াট করে ক্ষমতার দুটি ইউনিট স্থাপন করা হয়।