× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টার্গেট তার ধনী ডিভোর্সি নারী

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩ ১২:৫৬ পিএম

দেবাশীষ কুমার সাহা। প্রবা ফটো

দেবাশীষ কুমার সাহা। প্রবা ফটো

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহা। রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ সদস্য ও আইনজীবী নিয়ে এক বিশাল সিন্ডিকেট আছে তার।

কর্মচারী হলেও পরিচয় দিতেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে। কাটাচ্ছিলেন বিলাসী জীবনযাপন। ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদন ও প্লট কেনাসহ বিভিন্ন কাজে রাজউকে আসা ধনাঢ্য পরিবারের ডিভোর্সি নারীদের টার্গেট করতেন দেবাশীষ। এরপর দ্রুত তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে গড়ে তুলতেন সখ্য।

ভুক্তভোগী নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন সম্পত্তি। অনেক সময় ওই নারীদের বিয়ের কথা বলে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে গোপনে ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। কখনও কখনও তার টার্গেট করা নারী বিবাহিত হলে সঙ্গে কৌশলে বিভেদ তৈরি করে তালাকের ব্যবস্থা করতেন। পরে ওই নারীকে বিয়ের আশ্বাসে লিপ্ত হতেন শারীরিক সম্পর্কে। এভাবেই অনেক নারীকে ফাঁদে ফেলে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন দেবাশীষ কুমার সাহা। থানা পুলিশ গোয়েন্দারাও তার কিছু করতে পারবে না বলে হুমকি দেওয়া হতো ভুক্তভোগীদের।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, নিজের প্রভাব বিস্তার করতে ভুক্তভোগীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ পুলিশ ও নেতাদের সঙ্গে সখ্যের ভয়ও দেখাতেন দেবাশীষ। ভুক্তভোগী এক নারীর মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। এ সময় তার কাছ থেকে টয়োটা নোয়া মডেলের গাড়ি জব্দ করা হয়।

রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা স্বপ্নার (ছদ্মনাম) বাবা সাবেক সচিব ও মা শিক্ষিকা। এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে তিনি। রাজউক কর্মচারী দেবাশীষের মাধ্যমে সম্পত্তিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন স্বপ্নার বাবা। সেই সূত্র ধরেই দেবাশীষের সঙ্গে তার পরিচয়। ওই নারীর সমস্যা এবং সরলতার সুযোগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন দেবাশীষ। স্বপ্নার বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের জমিজমা ও প্লটসংক্রান্ত কাজে দেবাশীষের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। এরপর ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে পরিবারিক কলহ থাকায় সেটাকে ইন্ধন দিয়ে আরও বাড়িয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্স করিয়ে দেন। এরপর তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর কাছ থেকে দেবাশীষ হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের বিভিন্ন সময় ওই নারীর কাছ থেকে রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে প্লট দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২টি ফ্ল্যাট বিক্রয় করে ২ কোটি ষাট লাখ টাকা, ওই নারীর কাছে থাকা ১৫০ ভরি স্বর্ণ বিক্রয় করে এক কোটি বিশ লাখ টাকা, একটি প্লট বিক্রি করে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রয় করে ৫০ লাখ টাকা, এলিয়ন প্রাইভেটকার বিক্রয় করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। পরে মন্দিরের প্লট পূর্বাচলে বরাদ্দ করে দেবে জানিয়ে ৫০ লাখ টাকা, ওই নারীর আরেক বন্ধুকে প্লট দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা, ঝিলমিল প্রজেক্টে তার নিজের নামে প্লট আছে জানিয়ে সেটি বিক্রির নামে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে আর ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। 

ভুক্তভোগী স্বপ্না জানান, তার বাবার মাধ্যমে দেবাশীষের সঙ্গে পরিচয়। তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটু ঝামেলা চলছিল। সেই জিনিসটাকে দেবাশীষ ইন্ধন দিয়ে আরও বাড়িয়ে দুজনের মধ্যে ডিভোর্স করিয়ে ফেলেন। এরপর তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দেন। টাকার মাধ্যমে মেয়ে ভাড়া করে তাকে দিয়ে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেওয়ায়। এরপর সরলতার সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন। রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে প্লট কিনে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং তার ফ্ল্যাট, স্বার্ণালংকার ও গাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন। এমনকি পরবর্তী সময়ে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করলে সেই সংসারেও কাল হয়ে দাঁড়ান দেবাশীষ। কিছুদিন আগে একটা কাগজে সই করতে হবে বলে বাসায় এসে তাকে ধর্ষণ করেন। তারপর ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করে তার সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে গেছেন। 

দেবাশীষ শুধু ওই নারীকেই হেনস্থা করেননি। তার সংসার ভাঙতে দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। অভিযোগ করে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি নাকি প্লট কিনতে গিয়ে তাকে ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছেন। অথচ ওই লোকের সঙ্গে তার কখনও পরিচয়ই হয়নি। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দেবাশীষের বিরুদ্ধে অনেককে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু দিন আগে একটা ধর্ষণ মামলায় তিনি জেলও খেটেছেন। কিছুদিন আগে তিনি নেপালে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ২৩ দিন জেল খেটেছেন। যেসব নারী বিধবা কিংবা ডিভোর্সি এবং প্রচুর সম্পত্তির মালিক তাদের টার্গেট করেন দেবাশীষ। সবগুলো অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা মহাগনর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রতারণা মামলায় রাজউকের কর্মচারী দেবাশীষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা