× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংকট নেই পেঁয়াজের তবু বাড়ছে দাম

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ০৮:৫২ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। চলতি বছর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় ৪ লাখ টন বেশি উৎপাদন হওয়ার পরেও পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া।

২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ৩৫ লাখ টন। এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এ অবস্থায় সম্প্রতি আমদানির হুমকি দেওয়ায় দাম কিছুটা কমেছিল। বর্তমানে মূল্য আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ভোক্তাদের এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষকের ঘরে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। কোনো ধরনের সংকট নেই। তবে কেন দাম বাড়ছে সেই বিষয়েও জানেন না তারা। কোনো কোনো কর্মকর্তা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিকে কৃষকের জন্য ভালো হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম বলেন, ‘দাম বাড়লে সমস্যা কী? সব পণ্যের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ায় কিছু টাকা পাচ্ছেন কৃষকরা। এতে তাদের ভালো হচ্ছে। উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।’

দাম বাড়লে সরাসরি কৃষক নাকি পাইকাররা লাভবান হন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পেঁয়াজ যা বাজারজাত হচ্ছে তা কৃষকের কাছ থেকে আসছে। বড় কৃষকরা যা জমিয়ে রেখেছেন তা বিক্রি হচ্ছে। আর এসব কাঁচামাল যখন প্রথম বাজারে আসে তখন দাম কম থাকে। পরবর্তী সময়ে সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে যায়। তাতে বাজারদরও বেড়ে যায়।’

রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডের একটি মেসে থাকেন শিক্ষার্থী আবু হানিফ। তিনি জানান, এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। গত মাসে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত। গত রবিবার বাজারে গিয়ে সেই পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ৮০ টাকা কেজিতে। ১০ টাকা দিয়ে ছয় থেকে সাতটি ছোট রসুন (দেশি) পাওয়া যেত, এখন দেয় তিনটি।

তিনি আরও জানান, এতে মেসে মিল রেটও বেড়ে যাচ্ছে। এমন আকাশছোঁয়া দামে জীবনযাত্রার ব্যয় প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছেন তার মতো অন্য শিক্ষার্থীরাও।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) অধীন মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র ফরিদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মুশফিকুর রহমান জানান, চলতি বছর ফরিদপুর অঞ্চলে আবহাওয়াজনিত কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। তা ছাড়া বালিয়াকান্দি, পাংশা, সালথায় ভালো বীজ না পাওয়ার কারণে সাড়ে সাতশ হেক্টর জমির পেঁয়াজের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এসব অঞ্চলে ভারতীয় কিছু বীজ কৃষকরা বুনেছিলেন। তা থেকে চারা হয়েছে কিন্তু ফলন হয়নি। রোপণের পর গাছ মরে গেছে।

তিনি আরও জানান, এক কেজি বীজ কিনতে হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। এক বিঘা জমি লিজ নিতে ব্যয় হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। এক হেক্টর ৪ বিঘা সমান ৩ হাজার বিঘা জমির চারা নষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে শুধু বীজ ও লিজ বাবদ ক্ষতি ৯০ কোটি টাকা। তবে যতটুকু উৎপাদন হয়েছে কৃষকের ঘরে ওই পেঁয়াজ জমা আছে। তবে কেন দাম বেড়েছে এটি জানা নেই তার।

ফরিদপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ‘এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় হচ্ছে ৩০ টাকার ওপরে। আর কৃষকের ঘরেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। এসব পেঁয়াজ কৃষকরা আড়তে নিয়ে বিক্রি করছেন, সেখান থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যাচ্ছে। এদিকে দাম বাড়ার কারণে কৃষকরা ভালো মূল্য পাচ্ছেন। বীজের কারণে পেঁয়াজের ফলন কম হয়েছে ফরিদপুরে। অন্যান্য জেলার কৃষকরা এ সমস্যার মুখে পড়েননি।’

পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর এপ্রিলে টানা তাপপ্রবাহের কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। এক বিঘা জমিতে গত বছর যেখানে ৪৫-৫০ মণ পেঁয়াজ হতো সেখানে হয়েছে ২০-২২ মণ। এক বিঘা জমিতে আমাদের ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকার ওপরে। আমি দুই ধরনের পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরেছি। তার মধ্যে ২৪০০-২৬০০ টাকা ও ১৯০০-২১০০ টাকা মণ।’ 

পাবনার শামীম আহমেদ বলেন, ‘কৃষকরা মণপ্রতি ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন। অর্থাৎ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তবে পেঁয়াজের বিশাল অংশ কৃষকরা বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব আড়তদারদের হাতে আছে।’ বগুড়া জেলার বাসিন্দা মোহন আকন্দ জানান, জেলাটিতে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ৭৫ টাকা।

‘কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্প’র পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা কেজি হয়ে যায়। তখন পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছে। এতে করে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ থাকবে। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের (সিন্ডিকেট) হাতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ বন্ধ হবে। কৃষক ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে সারা বছর তারা পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন। এতে বাজার ব্যবস্থাও স্থিতিশীল থাকবে।’ 

তিনি আরও জানান, ঢাকা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা জেলার ১২টি উপজেলায় ৩০০টি ঘর নির্মাণ করা হবে। এ বছর ২০২২-২৩ সালে মোট ৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ২৫০-৩০০ মণ পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করা যাবে। সংরক্ষণ বিষয়ে চলতি বছর এক হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টন। দুই বছর আগে যেখানে উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টনের মতো। এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ লাখ টন। চলতি বছর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩৫ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬ দশমিক ৬৫ লাখ টন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা