মঈনুল ইসলাম সবুজ, বরিশাল
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩ ১৪:৪১ পিএম
বরিশাল নগরীর অবহেলিত জনপদের মধ্যে অন্যতম ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড। অন্য সব ওয়ার্ডে যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে এখানে তার ছিটেফোঁটাও হয়নি। বলতে গেলে শহরের ছোঁয়া লাগেনি ওয়ার্ড তিনটির অধিকাংশ এলাকায়। জলাবদ্ধতা, সরু ও ভাঙাচোরা রাস্তা আর বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট সেখানে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন পাড়া-মহল্লায়। বাসিন্দাদের দিচ্ছেন এসব সমাধানের প্রতিশ্রুতি। ৩৬ হাজার ৫৯৯ ভোটারের এই তিন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ১৩ জন।
সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাবাজ, নগরের পুল, শফি মিয়ার গ্যারেজ, মাদানীনগর, রোকেয়া আজিম সড়ক, নগরের ভাটিখানা উত্তর-পূর্বাংশ, ভাটিখানা, টাউন স্কুল, স্ব রোড, আমানতগঞ্জের একাংশ, জোড়মসজিদ, কাজী বাড়ির মসজিদ এলাকার ব্যাংকার্স কলোনি নিয়ে গঠিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটির অধিকাংশ এলাকা অনুন্নত। এখনও শহরের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি অনেক এলাকায়। তবু এসব এলাকার বাসিন্দাদের সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স গুনতে হচ্ছে। বাসিন্দারা জানান, এলাকার মূল সমস্যা ভাঙাচোরা সড়ক, অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, পানির সংকট ও মশার উপদ্রব। এর মধ্যে গাউশ্বর মেইন সড়কটি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ভাঙাচোরা। এ সড়কটি শহরের বাইপাস সড়ক হিসেবে পরিচিত।
ভাটিখানার বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দিন বললেও শেষ হবে না আমাদের দুর্ভোগের কথা। মূল সড়কটি ভেঙেচুরে চলাচলের অযোগ্য বহু বছর ধরে। সড়কটির দুই পাশে ড্রেন না থাকায় বৃষ্টির সময় সড়ক পানিতে ডুবে থাকে। আশপাশের বাড়িঘরেও পানি ঢোকে। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।’
নগরের পুল এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল কারীম বলেন, ‘আমরা যে সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা এইটা মনেই হয় না। আমাদের ড্রেন নেই, রাস্তাঘাট নেই, পানির লাইন নেই, সড়কবাতি নেই।’
ডেইজি বেগম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘ওয়ার্ডের অর্ধেকের বেশি মানুষ পানির কষ্টে ভুগছে। রান্নাবান্না থেকে সব কাজই করতে হয় খালের পানি দিয়ে। খাওয়ার পানির জন্য যেতে হয় বিশ্বাস বাড়িতে। আর মশার কতা তো কওনোই লাগে না। দিন-রাইত মশার যন্ত্রণায় ঘরে টেকা দায়।’
কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নাগরিকদের যেসব সেবা পাওয়ার কথা, সেগুলো আমি যথাযথভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে রাস্তাঘাটের বিষয়টা আলাদা। এগুলো করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশন ঠিকাদার নিয়োগ করবে এবং তারা তা বাস্তবায়ন করবে। এখানে আমার তো কোনো ব্যর্থতা নেই। আমি প্রতি মাসে সিটি করপোরেশনের সভায় এসব রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ব্যাপারে চাহিদাপত্র দিয়েছি। কিন্তু মেয়রের সঙ্গে আমার দূরত্বের কারণে অবকাঠামো উন্নয়ন তেমন একটা হয়নি।’
১০ হাজার ৫৪১ ভোটার এ ওয়ার্ডে। বর্তমান কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলামসহ আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক কাউন্সিলর মো. ইউনুস মিয়া, সৈয়দ শামসুদোহা আবিদ ও আরিফুল আলম।
সৈয়দ শামসুদোহা আবিদ বলেন, ‘এ ওয়ার্ডে কিছু স্থায়ী সমস্যা রয়েছে, যা ২৫ বছরেও সমাধান হয়নি। নির্বাচিত হলে প্রথম কাজ হবে এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করা। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দূর করতে পরিকল্পনামাফিক ড্রেন নির্মাণ ও সড়ক সংস্কার করব। শিক্ষা বিস্তারে নানামুখী উদ্যোগ নেব।’
পলাশপুর, মোহম্মদপুর, আটটি গুচ্ছগ্রাম এলাকা, ইসলামনগর, উত্তরা হাউজিং, শিশুপার্ক কলোনি (বস্তি), মাঠবাড়ি এলাকা নিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ড। প্রায় ১৬ হাজার ভোটারের ১২ হাজারই বস্তিবাসী। এই ওয়ার্ডের সবচেয়ে গণবসতি এলাকা পলাশপুর ও মোহম্মদপুর। যাতায়াতের জন্য নেই উন্নত সড়ক ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ। নদীর তীরবর্তী এই ওয়ার্ড বেশিরভাগ সময় থাকে পানির নিচে। ভাঙাচোরা সড়কের পাশে ড্রেন না থাকায় এলাকাগুলোয় অল্প বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
বাসিন্দা শামীম হোসেন বলেন, বর্তমান কাউন্সিলর কয়েকটি সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন। সেগুলো মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাঙা রাস্তা নিয়ে বাসিন্দারা পড়েছে চরম বিপাকে। ওই সব রাস্তায় না যায় অটোরিকশা, না ঢোকে রিকশা। বেশিরভাগ মানুষই হেঁটে বাসাবাড়িতে যায়।
বর্তমান কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনিসহ কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন শেখ আনোয়ার হোসেন সালেক ও মো. হোসেন আলী। কেফায়েত বলেন, ‘কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সিটি করপোরেশনের আর্থিক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত অবকাঠানো উন্নয়ন হয়নি। তবে ওয়ার্ডের মানুষের পাশে ছিলাম।’ শেখ আনোয়ার বলেন, ‘নির্বাচিত হলে প্রথম কাজ হবে মাদক নির্মূল। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সড়ক উন্নয়ন করব।’ শিশু-কিশোরদের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
নগরীর পোর্ট রোডের একাংশ, হাটখোলা রোড, শিশুপার্ক কলোনি (বস্তি), শষারপট্টি, পেঁয়াজপট্টি, মরিচপট্টি, দপ্তরখানা, গগনগল্লি, সোনালি আইসক্রিম মোড়, আমানতগঞ্জের একাংশ, সিকদারপাড়া, উত্তর আমানতগঞ্জ, বেলতলা এলাকা নিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ড। বরিশাল নগরীর বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে এই ওয়ার্ডটি পরিচিত। মোট ভোটার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। বর্তমান কাউন্সিলর খান মোহাম্মদ জামাল হোসেনসহ প্রার্থী হয়েছেন সোহেল সিকদার, হাবিবুর রহমান টিপু, আবদুস ছালাম খান ও আক্তারুজ্জামান।
স্থায়ী বাসিন্দা সঞ্জয় বণিক বলেন, ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ছাড়া অন্য সড়কগুলো সরু। পাশাপাশি দুটি রিকশা চলাচল করতে পারে না ঠিকভাবে। এ ছাড়া মশার অত্যাচার তো আছেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তায় ওয়ার্ডে মাদকের বিস্তৃতি ঘটেছে। উন্নয়ন হয়নি অবকাঠামোগত।
খান মোহাম্মদ জামাল বলেন, গণবসতি এলাকা হচ্ছে ৬ নম্বর ওয়ার্ড। এটাকে বলা চলে পুরান ঢাকা। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় অলিগলিগুলো অত্যন্ত সরু। এগুলো প্রশস্ত করতে হলে বাড়ির মালিকদের জায়গা ছাড়তে হবে। কিন্তু সেটি কেউ করতে চাচ্ছে না। ফলে সড়কগুলো প্রশস্ত করাও সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন তিনি।