× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃচ্ছ্রসাধনে ঝিমুচ্ছে প্রগতি

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩ ১৪:৩২ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

স্বাভাবিক সময়ে আগে দিনে তিন-চারটি গাড়ি অ্যাসেম্বলিং করত দেশের একমাত্র রাষ্ট্র্রায়ত্ত গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চলতি অর্থবছরে এ সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমেছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি ৩০ দিনে বা এক মাসে অ্যাসেম্বলিং করছে মাত্র চার-পাঁচটি গাড়ি। সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন-নীতির কারণে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গাড়ি কেনা বন্ধ রেখেছে।

বিশেষত এ কারণে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে এ সংকটময় পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এতে একদিকে গাড়ি অ্যাসেম্বলিং কমেছে; অন্যদিকে অ্যাসেম্বল করা গাড়ি বিক্রি না হওয়ায় প্রস্তুত গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিষ্ঠানটির কারখানায়। 

অ্যাসেম্বল প্ল্যান্টের দায়িত্বে থাকা প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগে স্বাভাবিক সময়ে দিনে তিন থেকে চারটা গাড়ি অ্যাসেম্বলিং করা হতো। গাড়ি ক্রয়ের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির পর এখন মাসে মাত্র চার থেকে পাঁচটি গাড়ি সংযোজন করা হচ্ছে। ওয়ার্ক অর্ডার নেই, এরপরও এখন একটা-দুইটা গাড়ি অ্যাসেম্বলিং করে কোনোমতে প্ল্যান্ট ও এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচল রাখা হয়েছে।’

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন-নীতির অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ৮ জুলাই একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। ওই পরিপত্রে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সব ধরনের যানবাহন ক্রয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর এ সিদ্ধান্ত কিছুটা শিথিল করে ২০২১ সালের ১ জুলাই আরেকটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

ওই পরিপত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতায় এই সব প্রতিষ্ঠান যানবাহন কিনতে বরাদ্দ বাজেটের ৫০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। 

তবে চলতি অর্থবছরে এ সুযোগ আবার স্থগিত করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ৩ জুলাই পুনরায় আরেকটি পরিপত্র জারি করে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের যানবাহন ক্রয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। একই পরিপত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের আপ্যায়ন ব্যয়, ভ্রমণ ব্যয়, প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সরকারের এ কৃচ্ছ্রসাধন-নীতির কারণে বিপাকে পড়েছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই কমেছে গাড়ি বিক্রি। স্বাভাবিক সময়ে মাসে গড়ে যেখানে ৬০ থেকে ৭৫টি গাড়ি বিক্রি হতো, সেখানে চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫০টি। এর মধ্যে প্ল্যান্টে অ্যাসেম্বলিং করা গাড়ি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪১টি। 

এ পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির গাড়ি অ্যাসেম্বলিং প্ল্যান্টে। অ্যাসেম্বলিং কমে যাওয়ায় অলস সময় কাটাচ্ছেন প্ল্যান্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ অবস্থায় কার্যাদেশ না পাওয়ার কারণে শ্রমিকরা যাতে কাজ ভুলে না যায়, সে কারণে স্বল্প পরিসরে গাড়ি অ্যাসেম্বলিং চালু রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

অন্যদিকে অ্যাসেম্বলিং করা গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় ধীরে ধীরে বাড়ছে গাড়ির স্টক। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ফ্যাক্টরিতে বর্তমানে অ্যাসেম্বলিং করা অন্তত ১৭৭টি গাড়ি প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের বাড়বকুণ্ডে প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় আছে ১৫২টি এবং ঢাকায় রয়েছে ২৫টি। অ্যাসেম্বল করা গাড়িগুলোর মধ্যে ১৭টি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স-২০ এমওয়াই জিপ, ৫৩টি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ, ৩৭টি মিৎসুবিশি এএসএক্স জিপ, ৪৫টি মিৎসুবিশি (এল-২০০) ডাবল কেবিন পিকআপ, ১৫টি মাহিন্দ্রা ডাবল কেবিন পিকআপ, ৭টি টাটা ১৩১৬ বাস এবং ৩টি এচার মিনিবাস বর্তমানে কারখানায় পড়ে আছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি কেনা বন্ধ রাখায় প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ এখন কঠিন সময় পার করছে। গাড়ি অ্যাসেম্বলিং ও বিক্রি দুটোই অনেক কমেছে। সংকটময় এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করছি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পে প্রগতির গাড়ি কেনার নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি কেনা বন্ধের নির্দেশনা শিগগির উঠে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি কেনা বন্ধ রাখলেও প্রকেল্পের অধীনে আমরা কিছু গাড়ি বিক্রি করেছি। তবে সেটি সংখ্যায় অনেক কম।’

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে মোট ৪৫টি গাড়ির অর্ডার পায় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ৪১টি প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে হস্তান্তর করেছে। ওয়ার্ক অর্ডার পেলেও ৪টি টাটা ১৩১৬ বাস এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। বাসগুলো প্রস্তুত করার পর এখন হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।

হস্তান্তর হওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে তিনটি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স-২০ এমওয়াই জিপ, তিনটি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ, ৩০টি মিৎসুবিশি (এল-২০০) ডাবল কেবিন পিকআপ এবং ৫টি টাটা ১৩১৬ বাস। এর বাইরে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে মাইক্রোবাস, সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স, কারসহ আরও অন্তত ১০৯ গাড়ি হস্তান্তর করা হয়। এসব গাড়ি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসেম্বলিং করে না। ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পর প্রস্তুত গাড়ি সরাসরি আমদানি করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে হস্তান্তর করে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের জেনারেল মোটরসের কারিগরি সহযোগিতায় চট্টগ্রামের বাড়বকুণ্ডে ব্যক্তি-উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নাম দিয়ে জাতীয়করণ করা হয়। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটিতে ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড কোম্পানির বাস ও ট্রাক সংযোজন করা হতো। পরে জাপানের মিৎসুবিশি, নিশান ও ইসুজুসহ ভারত, চীন, কোরিয়া ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ির সিকেডি আমদানি করে সংযোজন ও বাজারজাত করত।

বর্তমানে জাপানের মিৎসুবিশি মোটরস করপোরেশনের পাজেরো স্পোর্ট (কিউএক্স) জিপ, চীনের ফোর্ডে অটোমোবাইলসের ল্যান্ডফোর্ট এসইউভি জিপের সিকেডি আমদানি ও সংযোজন-পূর্বক স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করছে। এছাড়া পিআইএল মিৎসুবিশি এল-২০০ ডাবল কেবিন পিকআপ, টয়োটা অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ইত্যাদি সিবিইউ অবস্থায় আমদানি করে বাজারজাত করছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা