× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দক্ষ জনশক্তিতে পিছিয়ে দেশ

আমিনুল ইসলাম মিঠু ও এম আর মাসফি

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩ ০৯:৪০ এএম

আপডেট : ০১ মে ২০২৩ ০৯:৪১ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশে-বিদেশে বেশিরভাগ বাংলাদেশির আয়ের প্রধান উৎস অল্প মজুরির কাজ। দেশে যেমন পোশাকশিল্প বা কৃষি খাত তেমনি বিদেশে ধোয়ামোছার কাজ করতে হয়। এর অন্যতম প্রধান কারণ সময়োপযোগী শিক্ষা-প্রশিক্ষণজনিত অদক্ষতা।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, বিভিন্ন দেশে সড়ক ও ভবন নির্মাণ, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, তৈরি পোশাক, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ড্রাইভার, নার্স, গৃহকর্মী, কৃষি খাতসহ বিভিন্ন পেশায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা আছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় চাহিদামতো দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারছে না রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। আর দেশে শ্রমের বাজার সম্পর্কে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে বছরে দেশে ২১ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৩ শতাংশ দক্ষ, মোটামুটি দক্ষ ৫৩ শতাংশ, একেবারেই অদক্ষ ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ।

নানা রকম উদ্যোগ নিয়েও বিদেশে বেশি দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে প্রতিবছরই ধারদেনা করে বা মাথা গোঁজার ঠাঁই বিক্রি করে ভাগ্যবদলের আশায় বিদেশে পাড়ি জমান শত শত অদক্ষ শ্রমিক। তাদের কেউ কেউ অমানুষিক কষ্ট করে ভাগ্য ফেরাতে পারেন। অনেকে টিকে থাকতে না পেরে ফিরে আসেন দেশে। তাদের তখন আর কোনো কূলই অবশিষ্ট থাকে না। যদিও ২০১১ সালে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা করা হয়। তবু কমছে বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা। কারণ সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দুই বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে অদক্ষ শ্রমিক বেশি গেছেন বিদেশে এবং ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সাড়ে ৭৮ কোটি ডলার কম রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গেছেন ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ শ্রমিক। এর মধ্যে দক্ষ ছিলেন মাত্র ২ লাখ ১ হাজার ৭৩১, যা বিদেশ যাওয়া মোট শ্রমিকের ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দক্ষতার বিকল্প নেই। আমাদের যে প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো আছে সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে সেগুলো দিয়ে কতটা দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা যাবে তা ভাবনার বিষয়। বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা তৈরি না হওয়ার জন্য আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটও দায়ী। আমরা যেসব শ্রমিক পাঠাই তারা কেউ কাজে দক্ষ হলেও কমিউনিকেশনের জন্য ভাষাগত দক্ষ তাদের থাকে না। যেটা বিদেশে খুব বেশি প্রয়োজন। অনেকের আবার স্কিলনেস, স্মার্টনেস ও কনভিন্সিং স্কিল থাকে না। দেশে অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্টের ব্যবহার না থাকায় শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন না। এসব কারণে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। 

গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক গ্রুপ প্রকাশিত অভিবাসন, শরণার্থী ও সমাজ শীর্ষক বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে যাওয়ার পর বাংলাদেশিদের যে আয় বাড়ে তা দেশে অর্জনের জন্য অন্তত ৪০ বছর সময় লাগে। বিদেশে কয়েক বছর কাজ করার পর দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের দুই-তৃতীয়াংশ উদ্যোক্তা হয় বা উপার্জনের নিজস্ব উদ্যোগ নেয়। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে গেলে এ খাত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে শীর্ষে থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছেন। এর একটি বড় অংশ যারা স্বল্প দক্ষ ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তারা তাদের শ্রমের ফসল পুরোপুরি নানা কারণে নিজেরা ভোগ করতে পারেন না। বিদেশে যাওয়ার আগেই তারা নানা ধরনের প্রতারণার শিকার হন। বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু এগুলো যতটা কার্যকর করা দরকার তা হচ্ছে না। 

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান অদক্ষতার বিষয়টা বিভিন্ন কৌণিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যায় না। কারণ সবাই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, যারা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন তারা সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে যাচ্ছেন, কিন্তু সবচেয়ে কম আয় করছেন। গত ১৪-১৫ বছরে নতুন করে ৬০-৭০ লাখ লোক বিদেশের শ্রমবাজারে গিয়েছেন। কিন্তু রেমিট্যান্স খুব একটা আসছে না। দক্ষ ১ লাখ লোক পাঠিয়ে যে রেমিট্যান্স আসবে তা অদক্ষ ১০ লাখ পাঠিয়েও আয় করা সম্ভব না।’

দক্ষ লোক কেন তৈরি হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতিগতভাবে আমাদের যারা বিদেশ যেতে চায় তারা লক্ষ টাকা খরচ করতে চায়। কিন্তু ১০ হাজার টাকা খরচ করে কোনো একটা প্রশিক্ষণের জন্য আগ্রহ দেখায় না। তাই যতক্ষণ না শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ অবস্থার উন্নতি হবে না।’

দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্প

দেশে দক্ষ জনশক্তির সংকট কাটাতে বেশ কিছু প্রকল্প নিয়েছে সরকার। তবে প্রকল্পগুলো চলছে একেবারে কচ্ছপগতিতে। এমন গতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কোনোভাবেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিতে ২০১৪ সালে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) প্রকল্প নেয় সরকার। আট বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ।

প্রকল্পটি ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬৮০ জনকে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ, ৩ হাজার ৮০০ জনকে মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ, ৭ হাজার ৮০০ জনকে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, ৯৭৫ জনকে পলিসি অ্যানালাইসিস কোর্স ও ১ হাজার ৫০০ জনকে অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পটির অগ্রগতি বিষয়ে সাবেক পরিচালক জালাল আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগে প্রকল্পটি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগোচ্ছিল। করোনায় দেড় বছর কাজ বন্ধ ছিল। এখন প্রকল্পের নতুন ডিজাইন করা হচ্ছে। আগে কোনো শিল্পকারখানা চাইলে তাদের শ্রমিকদের আমরা প্রশিক্ষণ দিতে পারতাম না। প্রশিক্ষণ নিতে হলে অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আসতে হতো। নতুন করে যে ডিজাইনে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, তাতে শিল্পকারখানার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’

দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও রপ্তানির জন্য ৪০ উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প ২০১৬ সালে হাতে নেয় জনশক্তি, কর্মস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। ১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ২৪টি কেন্দ্র চালু হয়েছে। এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, এই প্রকল্প থেকে দক্ষ কর্মী রপ্তানিতে দেশের সুনাম যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। মানুষকে বিদেশগামী করতে এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে প্রকল্পটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ১ লাখ ২ হাজার ৪০০ দক্ষ চালক তৈরি করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে ৪০ হাজার দক্ষ গাড়িচালক তৈরি করতে ‘যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ নামে আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। প্রকল্পটি এ বছর জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সারা দেশে ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৫২৫ কোটি টাকায় উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্প চলছে। এখানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি একটি করে কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স চালু করার মাধ্যমে দেশব্যাপী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু এই কাজের অগগ্রতি নিয়ে কেউ সন্তুষ্ট না।

প্রকল্প পরিচালক এ ওয়াই এম জিয়াউদ্দিন আল মামুন যেমন বলেন, এখন পর্যন্ত মাত্র সাতটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আর কোনো কাজ হয়নি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা