ফারহানা বহ্নি
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৪৪ পিএম
অনেকেই বঙ্গবাজারের স্মৃতি ধরে রাখতে পুড়ে যাওয়া কাপড়গুলো কিনে নিচ্ছেন। কিনতে উৎসাহ দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। পোড়া কাপড়গুলো জোড়া দিয়ে ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা নতুন কাপড় বানাচ্ছেন। যেগুলো বেশি পুড়ে যাওয়ায় জোড়া দেওয়ার মতো অবস্থাও নেই, সেগুলো তারা কেটে ফটোফ্রেমে বাঁধাই করছেন। এসব বিক্রিও হচ্ছে। এই টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দেওয়া হবে বলে ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা জানান।
ফাউন্ডেশনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা সালমান খান ইয়াছিন জানান, অর্ধপোড়া কাপড় থেকে প্রস্তুত পোশাক কিনতে মানুষের আগ্রহ আছে। এ কাপড় কিনতে এগিয়ে এসেছেন তারকারাও। গায়ক তাহসান খান, কণ্ঠশিল্পী কোনাল, অপু বিশ্বাস, বুবলী, পূজা চেরি, মীম, সাবিলা নূর, নিপুণ, অপূর্ব, ফেরদৌসসহ অনেকে ক্ষতিগ্রস্তদের কাপড় কিনে সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও এই কাপড় কিনতে চেয়েছেন বলে জানান স্বেচ্ছাসেবীরা।
ইয়াছিন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় দেড়শজন এভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। প্রায় দুই কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনটির কমিউনিকেশনস এক্সিকিউটিভ মাহবুবুর রহমান রাহি। তিনি বলেন, এই টাকা খুব শিগগির ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। একটা অংশ দেওয়া হবে ব্যবসায়ীদের, আরেকটি অংশ দেওয়া হবে দোকানগুলোর কর্মচারীদের।
সত্তরের দশকে ছোট্ট পরিসরে গড়ে ওঠা বঙ্গবাজার মার্কেটে স্বল্প মূল্যে দেশি কাপড়ের পাশাপাশি কিছু বিদেশি কাপড়ও পাওয়া যেত। গত ২ এপ্রিল আগুনে ভস্মীভূত হয় পুরো মার্কেট। স্মৃতি হিসেবে রয়ে যায় অর্ধপোড়া কিছু কাপড়। এতে ২৯৬১ জন দোকান-মালিক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সালমান খান ইয়াছিন জানান, এ ছাড়া ঈদের আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে থাকবে বঙ্গবাজার কর্নার। সেখানে বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া কাপড়গুলো থাকবে। যাদের পুড়ে যাওয়া কাপড়টুকুও নেই তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে কার অবস্থা কী তা বোঝার উপায় নেই।’ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ নিয়ে সাধুবাদ যেমন আছে, তেমনি সমালোচনাও আছে বলে জানান ইয়াছিন।
তিনি বলেন, ‘তবে আমরা জানি আমরা কীভাবে কাজটা করছি, আমাদের উদ্দেশ্য কী। ছেলেমেয়েরা দিনরাত কাজ করছে সমালোচনার তোয়াক্কা না করে। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের অনেকেই তো কোটিপতি ছিলেন, যারা ফকির হয়ে গেছেন। আমরা আসলে পুড়ে যাওয়া কাপড় বিক্রির মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করছি- এটা কোনো ভিক্ষা বা দান নয়। তাদের পুরোনো কাপড়টা ডোনারদের কিনতে আহ্বান জানাই ভালো মূল্য দিয়ে। একসময় বঙ্গবাজার ছিল, যা আগুনে পুড়ে হারিয়ে গেছে। সেই স্মৃতির অংশ হিসেবে এই কাপড় বিক্রি করছি। কেউ এক লাখ দিয়ে কিনছে, কেউ দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছে।’
এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ জানালেন আগুন লাগার পর কী হয়েছিল। তিনি বলেন, ওখানে প্রাথমিক জরুরি কাজটা করতে যাই। আগুন নেভানো, কেউ অসুস্থ হলে সেই সেবা দেওয়া। সেটা করতে গিয়ে বুঝলাম কেউ আহত হয়নি। পাশের বিল্ডিংয়ে পুরোপুরি আগুন লাগেনি তখনও। সেখানকার মানুষ তাদের কাপড়গুলো নামানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু লোকবল নেই। আমরা গিয়ে সবাইকে কাপড় নামানোর কাজে সহায়তা করি। পরের দিন একই কাজ করেছি আমরা। নেভানোর কাজ করতে গিয়ে দেখি অনেক ছোট ছোট পুড়ে যাওয়া কাপড়ের টুকরো পড়ে আছে। দেখার পর মনে হলো- এটাকে কীভাবে প্রমোট করতে পারি। সেই থেকে কাজটা শুরু করলাম। একদিকে যেমন সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে, অপরদিকে তাদের সহায়তা করার একটা উপায় পাওয়া গেছে। সারা দেশের মানুষ উৎসাহ দিল। একটা পোড়া কাপড় নিয়ে অনুদান হিসেবে দিলেন। মূলত অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য কিছু নিচ্ছেন বিখ্যাত ব্যক্তিরা।