সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মক্কা থেকে
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:১১ পিএম
পবিত্র রমজান মাসে সর্বোচ্চ আগমন ঘটেছে কাবা শরিফে। ইফতারের জন্য অপেক্ষায় মুসল্লিরা। প্রবা ফটো
করোনা মহামারির পর এবার পবিত্র রমজান মাসে সর্বোচ্চ মুসল্লির আগমন ঘটেছে কাবা শরিফে। ওমরা হজ পালনসহ নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নজর কেড়েছে আগত মুসল্লিদের। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, দৃষ্টনন্দন ও মুসলিম ধর্মের ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে কাবা শরিফের ইফতার।
এবারের রমজানে কাবা শরিফ বা মসজিদে হারাম ও তার চারপাশের চত্বরে (যা কাবা শরিফের অংশ) প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি রোজাদার ইফতার করছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
ইফতারিতে পবিত্র জমজম কূপের পানির সঙ্গে থাকছে সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী খোরমাসহ বিভিন্ন পদের খাবার। সৌদি বাসিন্দারা এ ইফতারের ব্যবস্থা করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, হারাম শরিফে প্রতিদিনের ইফতারসামগ্রী কার কাছ থেকে বা কে সরবরাহ করছে তার কোনো তালিকা নেই। আবার এর সঠিক কোনো হিসাবও নেই। স্থানীয় সচ্ছল ব্যক্তিরা গোপনে ইফতার দিয়ে যাচ্ছেন। আসরের নামাজের পরই মসজিদে হারামের ভেতর ও বাইরে ইফতারের আয়োজন শুরু হয়। এ সময় থেকেই জমজমের সুস্বাদু ঠান্ডা পানির কন্টেইনার ও গ্লাস মসজিদের বিভিন্ন অংশে স্থাপনসহ দস্তরখান বিছিয়ে ইফতারি সাজানো শুরু হয়।
মসজিদে হারামের প্রায় ৯০টি গেট দিয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা সতর্কভাবে ওমরা হজে আসা মুসল্লিদের প্রবেশ করান। পরে সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করেন।
মক্কার যুবক ও কিশোররা মসজিদে ইফতার ও মাগরিব নামাজ শেষ করে ফেরা মুসল্লিদের পথে পথে গরম চা ও কফি পরিবেশন করেন। মক্কা নগরীর পথে-প্রান্তরেও হাজার হাজার মুসল্লি ইফতার করেন। মক্কাবাসীরা আসরের পরপরই নগরীর পথে পথে মুসল্লিদের মধ্যে ইফতার বিতরণ শুরু করেন।
কয়েকজন সৌদি নাগরিক জানান, ইফতার সরবরাহ ধর্মীয়ভাবে নৈতিক কাজ। পাশাপাশি এটা সওয়াবের কাজও। এ শিক্ষা থেকে মক্কার বাসিন্দাসহ দূর-দূরান্ত থেকে সৌদি নাগরিকরা এবার প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি মুসল্লিকে ইফতার করাচ্ছেন।
কাবাঘর-সংলগ্ন দোকান মালিকরা বলেন, ইফতার সরবরাহ সওয়াবের কাজ। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আল্লাহকে রাজি-খুশি করার বাসনা নিয়ে হাজার হাজার মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতারসামগ্রী নিয়ে কাবা শরিফে যান। ইফতারে খোরমার পাশাপাশি রুটি-যাবাদ ও টক দই থাকে। এ ছাড়া প্যাকেটজাত বিভিন্ন ফলের জুস, দুধ, মাঠা ও ঐতিহ্যবাহী দই বিতরণ করা হয়। কমলা, মাল্টা, আপেল ও আঙ্গুরসহ নানা ধরনের ফল দিয়ে থাকেন অনেকে। তবে ইফতারিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য হচ্ছে পবিত্র জমজম কূপের পানি। এ পানি ছাড়া ইফতার অপূর্ণতা থেকে যায়।
হজ নিয়ে কাজ করেন মাওলানা সোয়েব বিন আবদুর রউফ। তিনি বলেন, এ ভ্রাতৃত্ববোধ সবাইকে অবাক করলেও যুগ যুগ ধরে এই বাস্তবতা চলছে পবিত্র মক্কা নগরীতে। পবিত্র কাবাঘর চত্বর এবং মসজিদে হারামের মতো মক্কা নগরী ও আশপাশের এলাকার অন্য মসজিদেও প্রতিদিন এমন ইফতারের আয়োজন করা হয়।
কিশোরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা সিব্বির আহমদ রশিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মক্কার ইফতারের এমন অপূর্ব দৃশ্য বিরল; যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
এটা ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্য ও উদারতার বহিঃপ্রকাশ। মসজিদে হারাম ও কাবাঘর চত্বর এখন গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণের মানুষের অপূর্ব মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। পবিত্র কাবাঘর ইফতারের আয়োজনে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে এক করে দিয়েছে, যা যেকোনো ধর্মের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।