× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপকূলে পানির জন্য হাহাকার

কৃষ্ণ ব্যানার্জী, সাতক্ষীরা

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৬ এএম


সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চাকলা গ্রামে পানির জন্য কলস নিয়ে নারীদের দীর্ঘ লাইন নিত্যদিনের চিত্র। প্রবা ফটো

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চাকলা গ্রামে পানির জন্য কলস নিয়ে নারীদের দীর্ঘ লাইন নিত্যদিনের চিত্র। প্রবা ফটো

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে চাকলা গ্রাম। এর একপাশে কপোতাক্ষ আরেক পাশে খোলপেটুয়া। ছোট্ট গ্রামের দুই পাশে নদী থাকলেও কোথাও নেই সুপেয় পানি। এই গ্রামের বাসিন্দা রোকেয়া খাতুন। ৬৩ বছরের বিধবা প্রতিদিন সকালে বের হন পানির খোঁজে। দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে পাশের দীঘলাআইট গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের একটি পুকুর থেকে পানি নেন। রোকেয়া খাতুনের মতো অন্য অনেক নারীও প্রতিদিন দলবেঁধে বের হন পানির খোঁজে। 

রোকেয়ার স্বামী আহম্মাদ শেখ মারা গেছেন বছর চারেক আগে। ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন একেক ছেলের পরিবারে একেক মাস থাকেন তিনি। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে তাকে খাবার পানির জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। শুধু চাকলা গ্রাম বা রোকেয়া খাতুনই নয়, খাবার পানির জন্য নিত্যদিনের লড়াই চলছে প্রতাপনগর, গাবুরা, পদ্মপুকুর, খাজরাসহ পাশের কয়রা উপজেলা ও পাইকগাছা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের শত শত গ্রামে। রোকেয়া বলেন, তাদের এখানে বার বার নদীভাঙনের কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। বৃষ্টির পানি ধরে পান করতে পারি, তার জন্য ড্রাম লাগে। সেই ড্রাম কেনার টাকাও নেই।

গদাইপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সি হাসিনা বিবিও প্রতিদিন পানির খোঁজে বের হন। তিনি জানান, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় জনপদগুলো। মুহূর্তের মধ্যে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা, খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায়। শেষ হয়ে যায় হাজার হাজার গবাদি পশু আর ঘরবাড়ি। নিমেষেই গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। চিংড়িঘের আর ফসলের ক্ষতি ছিল অবর্ণনীয়। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ আর ভেঙে চুরমার হয়ে যায় অসংখ্য ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নষ্ট হয়ে যায় এসব এলাকার সব টিউবয়েল ও পুকুরের পানি। সেই থেকে খাবার পানি ও রান্নার পানির সংকট থাকলেও গ্রীষ্মকালে তা প্রকট আকার ধারণ করে।

এই পরিস্থিতিকে জলাবায়ু পরিবর্তন আর পরিবেশ বিপর্যয়ের অভিঘাত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এখন বাধ্য হয়েই খোলা পুকুর বা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানি কিনে পান করছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে খুব কম মানুষের সেই সামর্থ্য আছে। পাইকগাছা পৌরসভার সরল গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী জানান, পৌর এলাকায় কোথাও খাবার পানি নেই। টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। বাধ্য হয়ে পৌরসভার পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে ফুটিয়ে পান করতে হচ্ছে।

কয়রা উপজেলার কয়রা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় পনির স্তর নিচে নেমে সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। তাই অনেকেই ট্রলারে করে পানি সংগ্রহ করেন। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম মাছুদুল আলম বলেন, তার ইউনিয়নের চাঁদনীমুখা গ্রামের মানুষকে প্রায় চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পারিশামারি গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। সরকারিভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার জন্য ড্রাম দিলেও তার সংখ্যা খুবই কম। পাইকগাছা পৌরসভায় পাইপলাইন দিয়ে পানি সরবরাহ করা হলেও তা খুব কম বলে জানান মেয়র মো. সেলিম জাহাঙ্গীর। তিনি দ্রুত পানির সমস্যা সমাধানের জন্য বড় প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান।

দ্রুত এ সমস্যার কিছুটা নিরাময় হবে বলে জানিয়েছেন কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মমিনুর রহমান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রতিনিয়ত নদীভাঙনে খাবার পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলাটি নদীবেষ্টিত হওয়ায় লবণাক্তার পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ধরার ড্রামের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে অবস্থার উন্নতি হবে।

এ অবস্থায় জেলা পরিষদ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জেলা পরিষদের ১৩০টি পুকুরের মধ্যে ৫৩টি খননের আবেদন করা হয়েছে। ১৫টির খননকাজ শেষ হয়েছে। বাকি পুকুরগুলো খনন হলে অনেকটা চাহিদা পূরণ হবে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

আর সাতক্ষীরার জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃষ্টির পারি সংরক্ষণের জন্য ১০ জেলায় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর রয়েছে তার মধ্যে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম ধাপে ছয় হাজার পরিবার বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ৩ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতার ড্রাম পাচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে ১২ হাজার পরিবার পাবে। আগামী দুই বছরে এ প্রকল্পের আওতায় ৫০ হাজার পরিবার উপকৃত হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা