হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৬ এএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৫ এএম
ফাইল ফটো
অনুমোদিত ‘অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা’ বা ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যান’ (এফএসপি) বাস্তবায়ন করা হয়নি, নেই পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট। ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। নেই আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার। পানির নিজস্ব কোনো উৎসও নেই। কোনো ফায়ার পাম্প নেই। স্মোক ডিটেকটর, হিট ডিটেকটর- এসবও নেই। এককথায়, পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট নেই। যাওবা আছে সেগুলো ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল নেই।
এমন সব ভয়ঙ্কর অপূর্ণতা নিয়েই চলছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার সাগরিকা এভিনিউ এলাকার সফি মোটরস লিমিটেডের কন্টেইনার ডিপো। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এই কারখানা পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। সে সময় প্রতিষ্ঠানটিতে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধের ন্যূনতম কোনো প্রস্তুতিই দেখতে পাননি এই পরিদর্শক। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিতে ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার, তিনটি সিওটি, ফোম টাইপ দুটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ছাড়া আর কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাও দেখা যায়নি।
শুধু সফি মোটরস লিমিটেডের কন্টেইনার ডিপো নয়, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোসহ অন্তত ১৫টি কারখানা পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিতেই পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যায়নি। এমন অবস্থার কারণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে লেনসন কন্টেইনার ডিপো লাগোয়া ইউনিটেক্স গ্রুপের একটি তুলার গুদামে।
ফেব্রুয়ারিতে পরিদর্শন করা কারখানাগুলোর পরিস্থিতি
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শকরা ওশান ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড, হাজী সাবের আহমেদ টিম্বার কোং লিমিটেড অ্যান্ড কন্টেইনার ইয়ার্ড, মেসার্স কেঅ্যান্ডটি লজেস্টিক লিমিটেড, কিউএনএস কন্টেইনার সার্ভিসেস লিমিটেড, সফি মোটরস লিমিটেড, গোল্ডেন কন্টেইনার লিমিটেড, ইস্পাহানি সামিট অ্যালায়েন্স টার্মিনাল লিমিটেড, চিটাগাং কন্টেইনার ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি লিমিটেডে (ইউনিট-২), ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কন্টেইনার ইয়ার্ড, কেডিএস লজেস্টিক কন্টেইনার ডিপোসহ ইপিজেড এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে তারা এফএসপি দেখতে পাননি। দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটির অনুমোদন নিলেও এখনও বাস্তবায়ন করেনি।
পরিদর্শকরা জানাচ্ছেন, ইপিজেডভুক্ত পোশাক কারখানাগুলো ছাড়া চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। কারখানাগুলোয় অগ্নিঝুঁকি চিহ্নিত এবং প্রতিরোধ করার কোনো ব্যবস্থাই নেই। এসব এলাকার ৯০ শতাংশ কারখানা এফএসপি বাস্তবায়ন করেনি।
১০টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠানও শতভাগ অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। বিএম কন্টেইনার ডিপোয় বিস্ফোরণের ফলে অর্ধশতাধিক নিহত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো এফএসপি বাস্তবায়নের অনুমোদন নিলেও এখনও সবগুলো ডিপোয় তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অর্ধেকের বেশি ডিপোয় নিজস্ব পানির কোনো উৎস নেই, ফায়ার পাম্পও নেই। ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। স্মোক ডিটেক্টর, হিট ডিটেক্টর নেই। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ফায়ার ড্রিল রেজিস্টার, মেইনটেন্যান্স রেজিস্টার ও আর্থিং রেজিস্টার নেই।
সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
এ সম্পর্কে সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত দুই-তিন মাসে আমরা অনেকগুলো কারখানা পরিদর্শন করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কারখানায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদনকৃত এফএসপিতে প্রদর্শিত অগ্নিপ্রতিরোধ, অগ্নিনির্বাপণ ও জননিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাদির যথাযথ বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ৯০ শতাংশের বেশি কারখানা এফএসপি বাস্তবায়ন করেনি।
সফি মোটরস লিমিটেডের কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অপারেশন মো. মাইন উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমরা ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। এক মাস আগে সেফটি প্ল্যান অনুমোদন পেয়েছি। আমাদের ডিপোয় অবৈধ কোনো ডিজেল পাম্প নেই। ফায়ার হাইড্রেন্টসহ ফায়ার ইকুইপমেন্ট সংযোজনের কাজ শুরু করেছি।
পরে কন্টেইনার ডিপোগুলোয় এফএসপি বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য আবেদন করেছে। অনেকে অনুমোদনও পেয়েছে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন শুরু করেছে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ। কারণ সবগুলো ইকুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই আমাদের একটু সময় দিতে হবে।