এম আর মাসফি
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪৯ পিএম
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ফাইল ফটো
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাকে বিদ্যমান পাঁচটি অঞ্চলের পরিবর্তে ১০টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে নবসংযুক্ত এলাকায় পাঁচটি আঞ্চলিক কার্যালয় ও পুরোনো এলাকায় চারটিসহ মোট ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
তারই প্রেক্ষিতে নতুন সংযুক্ত এলাকায় তিনটি ও পুরোনো এলাকায় চারটিসহ মোট সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণ করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এজন্য ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়, ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় দেখা যায়, ৭টি ৪-৫ তলা আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের জন্যও পরামর্শক খাতে ৩ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এই সাধারণ ভবন নির্মাণের কাজে কেন পরামর্শক প্রয়োজন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ের প্রকল্প হলেই ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। তবে এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়নি। বিভিন্ন প্রকল্পে দেখা যায়, এই ফিজিবিলিটি স্টাডি সঠিক না হওয়ার কারণে পরবর্তীতে প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয় এবং প্রকল্প সংশোধন করতে হয়।
এদিকে প্রকল্প প্রস্তাবনায় ১ দশমিক ৩২ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও তা ঢাকা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে নির্ধারণ করা হয়নি। অথচ পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলন করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বিভাজন জেলা প্রশাসন হতে সংগ্রহ করাসহ ভূমির প্রাপ্যতা এবং বায় প্রাক্কলনের ভিত্তির বিষয়ে জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা প্রদান সহজীকরণসহ জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা। অঞ্চলভিত্তিক নাগরিক সেবা কেন্দ্র হিসেবে আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণ, নাগরিক সেবা প্রদান সহজীকরণ, এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে ১৮টি ওয়ার্ড অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিদ্যমান পাঁচটি অঞ্চলের পরিবর্তে ১০টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে নবসংযুক্ত এলাকায় পাঁচটি আঞ্চলিক কার্যালয় ও পুরোনো এলাকায় ৪টিসহ মোট ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক নাগরিক সেবা প্রদান কেন্দ্র হিসেবে আঞ্চলিক কার্যালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
জনস্বার্থে অঞ্চলভিত্তিক নাগরিক সেবা প্রদানের সুবিধার্থে পুরোনো এলাকায় অঞ্চল-২, ৩, ৪ এবং অঞ্চল-৫ এবং নবসংযুক্ত এলাকায় অঞ্চল-৬, ৭ ও ৯সহ সর্বমোট ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণের লক্ষ্যে আলোচ্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
অঞ্চল-২, ৩, ৪, ৫ ও ৬-এর আঞ্চলিক কার্যালয়ের জন্য নিজস্ব জমি থাকলেও নবসংযুক্ত পাঁচটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মধ্যে অঞ্চল-৭ ও ৯-এর জন্য ১ দশমিক ৩২ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকায় ৯০ শতাংশ জিওবি এবং ১০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের নিমিত্তে ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ১৮৯ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়ন ২১ কোটি টাকা।
প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে ৩ কোটি টাকা খরচে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এলজিইডি বা অন্যান্য সংস্থার মতো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তেমন ভালো প্রকৌশলী নেই। তাই ভবনগুলো ভালোভাবে নির্মাণ করতে পরামর্শকের প্রয়োজন আছে।
আর সঠিক ফিজিবিলিটি না করা ও জেলা প্রশাসনের তথ্য না নিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সচিব বলেন, যেসব খাতে ফিজিবিলিটি সঠিকভাবে করা হয়নি সেটা সঠিকভাবে করার জন্য পিইসি সভায় বলা হবে। আর জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি অবশ্যই লাগবে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ব্যয় প্রাক্কলনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।