ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৯ এএম
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী জয়ন্তীনগর গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে রাবার চাষ করা হচ্ছে। প্রবা ফটো
রাবার চাষে ঝুঁকছেন ফেনীর কৃষকরা। বর্তমানে পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী জয়ন্তীনগর গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে রাবার চাষ করা হচ্ছে। ২৫ একর জায়গায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ১০ হাজার রাবার চারা গাছ রোপণ করেছেন হাজী মো. মোস্তফা।
১২ বছর পরিচর্যা শেষে বর্তমানে চার হাজার গাছ থেকে রাবার কষ সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে রাবার চাষে আয়ের পাশাপাশি বাগান পরিণত হয়েছে দর্শনীয় স্থানে। প্রতিদিন সেখানে অসংখ্য পর্যটক বেড়াতে যান।
চলতি মৌসুমে পর্যায়ক্রমে সব গাছ থেকে কষ সংগ্রহের জন্য বাটি বসানো হয়েছে। কষ সংগ্রহ ও বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন ২০-২৫ জন শ্রমিক। শ্রমিকরা ইতঃপূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাবার বাগান থেকে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়েছেন।
বাগানের স্বত্বাধিকারী হাজী মো. মোস্তফা জানান, সাধারণত রাবার গাছ রোপণের পর সাত-আট বছর পর থেকেই এর কষ উৎপাদন শুরু হয়। রাবার গাছ উৎপাদনের উপযোগী হওয়ার পর ২৮ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত সেখান থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে রাবারের কষ সংগ্রহ করা যায়।
বর্তমানে এ বাগানে বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ থেকে রাবার কষ সংগ্রহ করা হচ্ছে। গাছের গোড়া থেকে ৭০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার ওপরে চারদিকে এক মিটার পরিমাণ কাটা হয়। কাটা অংশের নিচে একটি মাটির তৈরি বাটি বসিয়ে দেওয়া হয়। সেই বাটিতে গাছ থেকে গড়িয়ে পড়ে ধবধবে সাদা দুধের মতো রাবারের কষ। চলতি মৌসুমে বাগান থেকে গড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার লিটার রাবার কষ বিক্রি হবে বলে মনে করেছেন তিনি।
একটি রাবার গাছ থেকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম রাবার পাওয়া যাবে। বাজার অনুযায়ী প্রতি লিটার রাবার ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
রাবার বাগানটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শুরু করা হলেও বর্তমানে এর উৎপাদন ছাড়াও বাগানটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। রাবার বাগানে সারি সারি গাছ, সবুজের সমারোহ, বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম, রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ দেখতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাসহ অনেক দর্শনার্থী ভিড় জমান।
মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু জানান, চট্টগ্রামে কয়েকটি কোম্পানি আমাদের বাগান থেকে রাবার কিনে নিচ্ছে। পারিবারিকভাবে আমরা এ রাবার বাগান করার পর বাণিজ্যিকভাবে লাভবান ও এটি একটি দর্শনীয় স্থানেও পরিণত হয়েছে।
রাবার বাগানের তত্ত্বাবধায়ক চায়ং মারমা বলেন, সারা বছরই রাবার উৎপাদন হয়। বর্তমানে চার হাজার গাছ থেকে কষ সংগ্রহ চলছে। তবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এই চার মাস রাবার উৎপাদনের মৌসুম। শীতে কষ আহরণ বেশি হয়।
তিনি আরও জানান, বাগান থেকে কষ সংগ্রহ করে শুকনো রাবার শিটে পরিণত করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ সাত দিন। এরপর রোলার মেশিনের সাহায্যে কষ থেকে পানি বের করে ড্রিপিং শেডে শুকিয়ে ধুমঘরে তা পোড়ানো হয়। ওই প্রক্রিয়া শেষে রাবারের ৫০ কেজি ওজনের বান্ডিল গুদামজাত করা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, রাবার একটি লাভজনক কৃষিভিত্তিক শিল্প। দেশের পার্বত্য এলাকাগুলোতে রাবার বাগান করে অনেকেই নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছেন। ফেনীতে আর কোথায়ও রাবার বাগান নেই। পরশুরামের সীমান্তবর্তী এলাকা জয়ন্তীনগর গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে এটি গড়ে ওঠায় রাবার বাগান করে বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হয়েছেন।
নুরুজ্জামান ভুট্টু আরও জানান, চট্টগ্রামের মেসার্স আরিফ এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি প্রথম চালানে ২ টন ১৩০ কেজি রাবার নিয়েছে, পর্যায়ক্রমে আরও নেবে বলে জানিয়েছে। বিক্রি করা রাবারের দাম ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শামসাদ বেগম বলেন, জয়ন্তীনগর গ্রামের ২৫ একর উঁচু জমিতে রাবার বাগান করা হয়েছে। ফেনী জেলায় এটাই প্রথম রাবার বাগান। রাবার বাগানটি শুধু বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয়ে ওঠেনি, এটা এখন অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।