× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গোপনে শেয়ার বেচে চলে গেছে নোকিয়া উৎপাদক

রাশেদ মেহেদী

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৪২ এএম

আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪৪ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

গোপনে শেয়ার হস্তান্তর করে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড নোকিয়ার স্মার্ট ফোন উৎপাদন করা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার শেয়ার হস্তান্তর করেছে তাদের বাংলাদেশি অংশীদার ইউনিয়ন টেক-পার্ক লিমিটেডকে। শেয়ার হস্তান্তরের সময় নিয়ম অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ কারণে বিটিআরসি টেক-পার্কের উদ্যোক্তাদের ১৫ লাখ টাকা জরিমানাও করেছে। জরিমানাসাপেক্ষে তাদের শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন দিয়েছে বিটিআরসি।

অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে স্থাপিত নোকিয়ার কারখানায় বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ আছে। এমনকি বাংলাদেশের বাজারে এখন নোকিয়ার স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে না। কেন বিনিয়োগের এক বছরের মাথায় প্রতিষ্ঠানটি চলে গেল, তা নিয়ে কৌতূহল জেগেছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

অবশ্য বাংলাদেশ মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ বলছেন, শেয়ার হস্তান্তর কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। নোকিয়া নিশ্চয় বাংলাদেশের মতো বিকাশমান বাজারে উৎপাদন একেবারে বন্ধ করবে না। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কোনো কোম্পানির বিনিয়োগ করা কিংবা প্রত্যাহার করা সেই কোম্পানির বিষয়। তবে অনুমোদন না নেওয়ায় বিটিআরসি বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে। 

যেভাবে শুরু হয়েছিল নোকিয়ার উৎপাদন

নোকিয়ার বাংলাদেশে অন্যতম পরিবেশক ছিল সেলুলার মোবাইল পিটিই লিমিটেড (সিএমপিএল)। তাদের সঙ্গে ভাইব্রান্টের যৌথ মালিকানায় গঠিত হয় ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড। এই কোম্পানির অধীনে স্মার্টফোন কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৭ সালে। ওই বছরের ২৪ মে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে পাঁচ একর জায়গা বরাদ্দ নেয় ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার (বিডি)। এই কোম্পানির নামেই বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনের অনুমোদন নেওয়া হয়। সে সময় যুক্তরাজ্যের ভাইব্রান্টের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মারভিনের শেয়ারের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার এবং বাংলাদেশি সেলুলার মোবাইল পিটিইর প্রতিনিধি রাকিবুল কবিরের শেয়ার ছিল ৩৫ হাজার। ছয়টি প্রোডাকশন লাইনে প্রতিদিন ৮০০ ইউনিট হ্যান্ডসেট সংযোজনের সক্ষমতা নিয়ে উৎপাদন শুরু হয় ২০২১ সালের ২৬ জুন। তার বছরখানেক পরই নিরবে শেয়ার হস্তান্তর করে বাংলাদেশ থেকে চলে গেল মূল প্রতিষ্ঠানটি।

খাতসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের মতে, এভাবে একটি বিদেশি বিনিয়োগকারীর গোপনে চলে যাওয়া অস্বাভাবিক। বিশেষ করে বিটিআরসিকে না জানিয়ে শেয়ার হস্তান্তর প্রশ্নের জন্ম দেয়। দেশে বিদেশি এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যতে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের কথা বিবেচনায় রেখেই এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা উচিত। 

কীভাবে চলে যুক্তরাজ্যের ভাইব্রান্ট

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ভাইব্রান্টের শেয়ার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৫ হাজার শেয়ারের মধ্যে ১৩ হাজার হস্তান্তর করা হয় সেলুলার মোবাইল পিটিইর রাকিবুল কবিরকে, বাকিটা তার নতুন ব্যবসায়িক অংশীদার আলভী রানার কাছে। এরপর ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে ইউনিয়ন টেক পার্ক লিমিটেড করা হয়। একই ট্রেড লাইসেন্সে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করা হয়। এর প্রায় দুই মাস পর শেয়ার হস্তান্তর এবং মোবাইল ফোনসেট উৎপাদনকারী কোম্পানির তালিকায় নতুন কোম্পানির নাম অনুমোদনের জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে এই আবেদন পর্যালোচনা করা হয়।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেয়ার হস্তান্তর এবং ভাইব্রান্ট (বিডি) লিমিটেডকে ‘ইউনিয়ন টেক পার্ক’ নামে পরিবর্তন উভয় ক্ষেত্রে পূর্বানুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের প্রশ্ন, সে কারণে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি তাদের শেয়ার হস্তান্তর এবং নাম পরিবর্তনের অনুমোদন দেয়।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

ইউনিয়ন টেক পার্কের মূল প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল কবির প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার শেয়ার হস্তান্তর করেছে বলে তিনি জেনেছেন। যেকোনো বিনিয়োগকারী যেকোনো সময় বিনিয়োগের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যেকোনো সময় শেয়ার হস্তান্তর করতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিংবা নতুন কোনো বিষয় নয়।

রাকিবুল কবির বলেন, এই মুহূর্তে ইউনিয়ন টেক পার্ক দেখাশোনা করছেন ইউনিয়ন গ্রুপের পরিচালক আলভী রানা। শেয়ার হস্তান্তর ও অন্যান্য বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

আলভী রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের কোম্পানির একজন মিডিয়া কনসালটেন্ট আছেন। তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দেবেন। মিডিয়া কনসালটেন্ট আহসান হাবীবের নম্বরও দেওয়া হয়। আহসান হাবীবের হোয়াটসঅ্যাপ আইডিতে প্রতিদিনের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লিখিত প্রশ্ন পাঠিয়ে উত্তর চাওয়া হয়। পরে টেলিফোনে বার বার কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রশ্নের উত্তর দেননি এবং কলও গ্রহণ করেননি আহসান হাবীব। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ বলেন, একজন বিনিয়োগকারী চলে গেলে পুরো খাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, বরং নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে নোকিয়ার উৎপাদন আবারও শুরু হবে, এটাই প্রত্যাশা করা যায়।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অবৈধভাবে দেশে আসা ফোনসেট বিক্রি বেড়ে যাওয়াটাই ফোনসেট উৎপাদন খাতে বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ভাইব্রান্ট সফটওয়্যার লিমিটেডের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মারভিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেও কোনো যোগাযোগসূত্র পাওয়া যায়নি। তার পরিচিত এক ব্যক্তি জানান, তিনি বর্তমানে নিজেকে আড়ালে এবং অনেকটা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন রেখেছেন। আড়ালে থাকার কারণ বলতে পারেননি ওই ব্যক্তি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা