× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

১০ আদালতে বিচারক নেই

রংপুর অফিস

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:২২ পিএম

রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত। প্রবা ফটো

রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত। প্রবা ফটো

রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে বসে আছেন আব্দুল মান্নান। জেলার পীরগাছা উপজেলার তেয়ানী মনিরাম এলাকায় ৭০ বছর বয়সি এই কৃষকের বাড়ি। আদালতপাড়া থেকে দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের বেশি। সকালে আদালতপাড়ায় এসেছেন তিনি।

মামলার নানা কাজে বিকাল গড়িয়ে গেছে। পেটে ক্ষুধা বাড়লেও অর্থের অভাবে ভাত খেতে পারেননি আব্দুল মান্নান। আদালতের পাশের দোকানে চা-পাউরুটি খেয়ে ক্ষুধা মিটিয়েছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে আদালতপাড়ায় ঘুরছেন আব্দুল মান্নান। এখনও জমিজমা-সংক্রান্ত একটি মামলার বিচার পাননি তিনি। এর মধ্যে চার বছর ধরে রংপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে (পীরগাছায়) বিচারক নেই। যুগ যুগ ধরে যাতায়াত খরচ, উকিলের ফি, হাজিরাসহ নানা খরচে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন আব্দুল মান্নান।

তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ সালে জমি নিয়া বাঁটোয়ারা মামলা করছিনু। সেই মামলা আইজো শ্যাষ হয় নাই। এক দিন কোটোত আসলে গাড়িভাড়া ২০০ টাকা, উকিলের ৫০০, হাজিরা ৫০ টাকা, ওকালতনামাত সাড়ে ৩০০ টাকা, খাওয়া খরচ ১০০ টাকা তো নাগে। হাজার টাকার বেশি খরচ করিয়াও কামের কাম কিছু হয় নাই। কোটোত সাহেব নাই ২০১৯ সাল থ্যাকি। কোটোত সারা দিন চলি যায়, ওই দিন কাম কইরবার না প্যায়া বাড়ি খরচও করবার পাও না। জমিও পানু না, টাকাও যাইতোছে, বাড়ির খাওয়াও বন্ধ, খালি হয়রানি হইতোছি।’

আব্দুল মান্নানের মতো একই কথা বললেন জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের একরামুল মিয়া। তার কথায়, ‘রিকশা চালায়া খাও। বাড়ির সামনের জমিওয়ালা আস্তা বন্ধ করি দিছে। বাড়ি থ্যাকি বেড়াবার পাও না। মামলা করনু ২০১০ সালে। বদরগঞ্জ কোটোত অ্যালা মামলাটা আছে। ওইপাকে থ্যাকি থ্যাকি কোটোত সাহেব থাকে না। বাড়ি যাইতোছি আর আসতোছি। এই দিকে হাজার হাজার টাকা খরচ হইতোছে। বিচার পাইতোছি না। অ্যালা মনে হয় মামলা করিয়াই ভুল করছু।’ 

রংপুরের আদালতপাড়ার অনেক বিচারপ্রার্থীর মন্তব্য প্রায় একই রকম। আদালতে বিচারক না থাকায় মামলার জট বেড়েই চলেছে। অনেকে আদালত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অনেকে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে সমঝোতা করে নিচ্ছেন। তাতেও উৎকোচ বাবদ খরচ হয়।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অনেক আদালতে বিচারক না থাকায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক মামলার জট তৈরি হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীরা আদালতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন।’

আদালত সূত্র বলছে, রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোট বিচারকের পদ রয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ একজন, বিদ্যুৎ আদালত, অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২-এ বিচারকের পদ। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩-এর বিচারক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। সিনিয়র সহকারী জজ আদালত পীরগঞ্জ ও পীরগাছা বিচারকের দুটি পদও শূন্য।

এ ছাড়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ গত ৬ মাস আগে গঠন করা হলেও সেখানে বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারক নেই তিন মাস ধরে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪-এর বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব আদালতে গড়ে প্রতিদিন ৫০টির বেশি মামলা থাকে। প্রতিদিন ১০টি আদালতে পাঁচ শতাধিক মামলার বিচারপ্রার্থী ও সাক্ষীরা আদালতে এসে মামলার তারিখ নিয়ে ফিরে যান।

বর্তমানে রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজারের বেশি। 

রংপুর আইনি পরার্মশকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম বুলেট বলেন, ১০ আদালতে বিচারকের পদ শূন্য থাকায় বিচারপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীরা ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে, দিন পার করে আদালতে এসে হাজিরা দিচ্ছেন, পরবর্তী তারিখ নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। মামলার জট কমাতে যেখানে অতিরিক্ত বিচারক প্রয়োজন ছিল, সেই জায়গায় কোর্টের বিপরীতে বিচারকের পদশূন্য রয়েছে। কোনো কোনো আদালতে রুটিন কাজের জন্য আরেকটি আদালতের বিচারককে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এভাবে তো বিচার বিভাগ চলতে পারে না। কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা