এম আর মাসফি
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:১৩ পিএম
সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০১৯ সালে ‘সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা সড়কাংশ (১৫.৮০ কিলোমিটার) নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
প্রকল্পটির মোট খরচ ধরা হয়েছিল ৭৬৯ কোটি টাকা। জুন, ২০২২ মেয়াদে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে প্রকল্পটিতে নতুন কিছু অঙ্গ সংযোজন করে ১৭০ কোটি টাকা খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে বেশ কিছু খাতে বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাবনা সূত্রে জানা যায়, ‘সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা’ সড়কাংশ (১৫.৮০ কিলোমিটার) নির্মাণ’ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারের অর্থায়নে মোট ৭৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই, ২০১৯ হতে জুন, ২০২২ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ ১ম বার জুন ২০২৩ পর্যন্ত ১ বছর বৃদ্ধি করা হয়। তবে বর্তমানে নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি, বিভিন্ন অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধিসহ মোট ৯৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০১৯ হতে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ১ম সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল অনুমোদিত ডিপিপির তুলনায় সংশোধিত ডিপিপিতে ১৭০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বা ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনা সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের শুরু থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত ৪ বছরে প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় দেখা যায়, প্রকল্পের আওতায় ৭০.২৫ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি নির্ধারিত থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ খাতে এ পর্যন্ত কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় ডিপিপিতে ৩৬টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও সংশোধিত ডিপিপিতে বক্স কালভার্টের পরিবর্তে নতুনভাবে ৪২টি আরসিসি স্লাব কালভার্ট নির্মাণের প্রস্তাবসহ এ খাতে ১৪৮ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। আরসিসি বক্স কালভার্টের পরিবর্তে আরসিসি স্লাব কালভার্ট নির্মাণের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া প্রকল্পটিতে এ খাতে এত ব্যয়ের বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
প্রকল্পে নতুন অঙ্গ হিসেবে ৮০০টি রিফ্লেক্টিং রোড স্টাড নির্মাণে ৭২ লাখ টাকা, ১টি টোল প্লাজা নির্মাণে ৩৫ কোটি টাকা এবং ইউটিলিটি স্থানান্তরের জন্য ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। টোল প্লাজা নির্মাণে এত ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রকল্পে ফ্লেক্সিবল পেডমেন্ট নির্মাণে শূন্য দশমিক ৯৭ কি.মি. কমানো হলেও এ খাতে অতিরিক্ত ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্পটিতে কাজের পরিমাণ না বাড়লেও সার্ভে অ্যান্ড ডিজাইন খাতে ৫০ লাখ টাকা বা ৬২ শতাংশ, আরসিসি ড্রেন নির্মাণ খাতে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা বা ১০৫ শতাংশ, জেনারেল অ্যান্ড সাইট ফ্যাসালিটিজ খাতে ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ৩১৪ শতাংশ এবং স্টিল ট্রাস সরবরাহ ও স্থাপন খাতে ৪০ কোটি টাকা বা ১০০ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। সিসি ব্লক উইথ জিও টেক্সটাইলের পরিমাণ ২ লাখ ৮২ হাজার ৯১৯ কি.মি. বৃদ্ধি করে এ খাতে অতিরিক্ত ২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং ব্রিক টো-ওয়াল নির্মাণের পরিমাণ ১ হাজার ৪৩০ মিটার বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সড়ক বাঁধে মাটির কাজের পরিমাণ ৪ দশমিক ১৬ লাখ ঘন মিটার বৃদ্ধি করা হলেও এ খাতে ১৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা ২৫ শতাংশ ব্যয় কমানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সড়ক পরিবহন উইংয়ের উপপ্রধান আ ন ম ফয়জুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি পিইসি সভায় ছিলাম না। তাই না দেখে বলতে পারব না।’