× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৩২ হাজার কোটি টাকা ফাঁকি

জাহিদুল ইসলাম

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৪৩ পিএম

৩২ হাজার কোটি টাকা ফাঁকি

প্রকৃত আয় গোপন রেখে এবং ব্যবসায় ক্ষতি দেখিয়ে গত ১০ বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি আয়কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। আর তা করেছে ২ লাখ ২০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এ ধরনের মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে ঝুলছে প্রায় দেড় লাখ মামলা। ফলে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে রাজস্ব বোর্ড। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনের অডিট রিপোর্ট পুনঃতদন্তের কারণে দাখিল করা আয়কর রিটার্ন ফাইলেও ধরা পড়েছে অনিয়ম। দুই লাখেরও বেশি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমপি, মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, বহুজাতিক কোম্পানি, প্রাইভেট কোম্পানি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান। বিশাল অঙ্কের কর ফাঁকি উদঘাটন করা হলেও তার বিপরীতে আদায় খুব সামান্যই।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অডিটের মাধ্যমে গত এক দশকের কর ফাঁকির মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। বাকি ৭৩ শতাংশই রয়ে গেছে অনাদায়ী। এমনকি অডিটের মাধ্যমে যেসব অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে, তা-ও মানতে রাজি নন করদাতারা। সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল, ট্রাইব্যুনালসহ প্রচলিত আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন এদের কেউ কেউ। মামলাগুলো এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। যে কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ছে, আটকে আছে কর আদায়। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে ঝুলছে দেড় লাখ মামলা।

এনবিআর সূত্র জানায়, অডিটে কর ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়লে কোনো করদাতা যদি মনে করেন, তার প্রতি ন্যায়বিচার হয়নি। সেক্ষেত্রে তার আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। প্রথমে আপিল পরে ট্রাইব্যুনালে বিভাগীয় মামলা করতে পারেন। রায় করদাতার পক্ষে না এলে হাইকোর্টে মামলা করেন তারা।

জানা গেছে, যোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনতে কাজ করছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। ভুয়া অডিট রিপোর্ট বন্ধ করতে ও করের আওতা বাড়াতেও কাজ করছে তারা।

ট্যাক্স অডিট ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত মোট ১০ বছরে ২ লাখ ২০ হাজার ৮৩১টি রিটার্ন অডিট করা হয়। এর মধ্যে ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৭টি রিটার্ন অডিট করে ৩২ হাজার ৮০৩ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৫ হাজার ২২১ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। সে হিসাবে অনাদায়ী টাকার পরিমাণ ২৭ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৭টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৯৪টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকার বেশি। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ২৩৪ কোটি টাকা। ২০১১-১২ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৮৪০টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার বেশি। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৭৩৮ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৬টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৫৮৪টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকার বেশি। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৩-১৪ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৭৬টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৩৪৪টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ৫ হাজার ৪৪০ কোটি টাকার বেশি। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৭২৩ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৬৯টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৬৪৩টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ৪ হাজার ৯৬১ কোটি টাকার বেশি। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯৩টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৯৭৭টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার বেশি। ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৪২৫ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৮১৮টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৩৮০টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার বেশি। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ২০১৭-১৮ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৭০৫টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২৯৪টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকার বেশি। জুলাই, ২০২২ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৪২৯ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৭ হাজার ১২৪টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ২৩৮টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার বেশি। জুলাই ২০২২ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৪১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১৯-২০ করবর্ষে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা মোট রিটার্নের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩৪টি। এর মধ্যে অডিটের জন্য নির্বাচিত রিটার্নের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৪৩৭টি। এসব রিটার্ন অডিট করে মোট কর ফাঁকি উদঘাটন করা হয় ২ হাজার ৭১৪ কোটি টাকার বেশি। জুলাই, ২০২২ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অনেকেই ঠিকমতো কর না দিয়ে উল্টো মামলা করে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ করছেন। এক্ষেত্রে আইনের এই ফাঁকফোকর বন্ধ করতে না পারলে এ ধরনের অনিয়ম বাড়তেই থাকবে। এনবিআর চাইলেও অনেক কিছুই করতে পারবে না। এজন্য আইনকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ তার।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আইনি জটিলতার কারণে এ সমস্যাগুলো হয়। মামলা করা হয়েছে, মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লেগে যায়। এটার বিকল্প হিসেবেই অলটারনেটিভ ডেসপুট রেজল্যুশন (এডিআর) করা হয়েছিল। সেটাও কাজে লাগছে না। মামলা হলে ১৫-২০ বছর আটকে থাকলে তাদের (কর ফাঁকিদাতা) সাশ্রয় বেশি। আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হলে কর আইনের সংস্কার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, কর ফাঁকির পেছনে প্রশাসনিক অদক্ষতা বা দুর্নীতিই মূল বাধা। দুর্নীতি তো আইনে সংস্কার করে কমানো যাবে না বা বন্ধ করা যাবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে অটোমেশন, কিন্তু অটোমেশন হলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে তা-ও না। ই-জিপি দেখলে সেটাই বোঝা যায়। সবচেয়ে বড় কথা দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। করদাতা যে পরিমান টাকা দেন আর সরকারি কোষাগারে যে পরিমান টাকা জমা হয়-এই দুটোর মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য। মাঝখান দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে কর কর্মকর্তারা একটা বড় পরিমাণ টাকা নিয়ে নেন। সেটা কোনো ছোটখাটো অংশ না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা