× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংলাপের দাবি জোরালো হচ্ছে

দীপক দেব

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩৪ পিএম

সংলাপের দাবি জোরালো হচ্ছে

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করে তোলার প্রশ্নে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে সংলাপের ওপর জোর দিচ্ছেন অনেকেই। দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একটি অংশ সংকটের সমাধান খুঁজতে এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য সৃষ্টিতে সংলাপের কোনো বিকল্প দেখছেন না। 

বিদেশি কূটনীতিকরাও জোরালোভাবে বলে আসছেন যে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করা কয়েকটি দলও সংকট সমাধানে সংলাপের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে শুরু করেছে। 

সংলাপের সপক্ষে অবস্থান তুলে ধরে অনেকেই প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ‘একতরফা নির্বাচন’ ও ২০১৮ সালে সংলাপের পরেও ‘আগের রাতে ভোট অনুষ্ঠানের’ মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের এই আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়। এজন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, বর্তমান সরকারের অধীনে বা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন নিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি পন্থা বের করতে না পারলে অন্য কোনোভাবেই এই আস্থার সংকট দূর হবে না। আর এই সংকট দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই উদ্যোগ নিতে হবে। 

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শেষ অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এরপর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটসঙ্গী ও সমমনা বিভিন্ন দল নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছে। যদিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৫৪-দলীয় জোটসহ বিরোধীদের একটি বড় অংশ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। 

এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ মাঠপর্যায়ে বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচিও পালন করছে। দুই দলের এই মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে গত ২০ জানুয়ারি এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। ওই সমাবেশে নেতারা দেরি না করে সরকারের কাছে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্দলীয় তদারকি সরকারের রূপরেখা প্রণয়নে আলোচনা শুরুর দাবি জানান। ১৪-দলীয় জোট থেকে বের হয়ে আসা জাসদের একটি অংশও মনে করছে, সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে সংলাপের বিকল্প নেই।

সিপিবি সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত। অথচ সামনে নির্বাচন। যেভাবে চলছে, সেভাবে নির্বাচন হলে ভালো নির্বাচন হবে না, গণতন্ত্র সুরক্ষিত হবে না। এই সংকট দূর করতে আর পথ খুঁজে বের করতে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা দরকার। সরকারের কাছে আমরা সেই আহ্বানই জানিয়েছি।’

এদিকে ১৪ দল থেকে বের হয়ে আসা শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদও ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের’ দাবিতে মাঠে পৃথকভাবে আন্দোলন করছে। তারাও মনে করছে, দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিয়ে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচন করলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এ অংশটি দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ জাসদ গঠন করে। জোটের কারও কারও ভাষ্য, দলটির শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানকে ১৪ দলের ব্যানারে মনোনয়ন না দেওয়ায় তারা জোট ত্যাগ করেছেন।

সংলাপ প্রসঙ্গে শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিলে, গতবারের মতো করে নির্বাচন করলে তাতে দেশের কোনো লাভ হবে না। কাউকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হলে দেশের সর্বনাশ ডেকে আনা হবে।’

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন শুরুর আগে থেকেই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত অনেকেই সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছেন বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও টকশোতে গিয়ে।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের কতকগুলো রাজনৈতিক সমঝোতা দেখা যায়, যেটাকে বিশেষজ্ঞদের ভাষায় বলা হয় ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’-যা ক্ষমতাধরদের মধ্যে এমন এক ঐকমত্য, যাতে সবারই স্বার্থরক্ষা হয়। ১৯৯১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে এভাবে যে ত্রয়োদশ সংশোধনী করা হয়েছিল, সেই রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে ভেঙে গেছে। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সৃষ্ট রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ফলে প্রত্যেকেরই নির্বাচনে জিতে আসা সম্ভব ছিল। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটা ভেঙে গেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হয়, রাজনৈতিক বন্দোবস্ত না হয়, সংলাপের মাধ্যমে এর সমাধান করা না যায়, তাহলে এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে না। অর্থাৎ কতকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। না হলে এই সংকট দূর করা যাবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে সংলাপ সব সময় ইতিবাচক। বিশেষ করে বিকাশমান গণতন্ত্রগুলোর ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি দরকার। সংলাপে তো ক্ষতির কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘নো রিটার্ন পয়েন্টে চলে যাওয়ার চেয়ে ডায়ালগ হওয়াটা ভালো। সংলাপের সফলতা আসবে তখন, যখন সব পক্ষের মধ্যে দায় স্বীকারের মানসিকতা থাকবে। আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রেখে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকবে। কালচারাল অব ডিনায়্যাল বা দায় অস্বীকারের সংস্কৃতি খুব সাংঘাতিক। বিরোধী দল কখনও দায় স্বীকার করবে না। সে বলবে না যে সে আগুনসন্ত্রাস করেছে। কিংবা সরকারি দল কখনও বলবে না যে তারা বিরোধী দলের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা একটা বড় সমস্যা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘সংলাপে ছাড় দেওয়ার মানে এটা নয় যে চাপের মুখে ছাড় দেওয়া। কিংবা আমি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করি আর আমার প্রতিপক্ষ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করে না, তবু আমাকে ছাড় দিতে হবে- এটাও না। আমি শুধু এ কথাটা বলছি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রেখেই ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতি রাখতে হবে। সংলাপের ফল দ্রুত না-ও আসতে পারে। কিন্তু সংলাপটা যেন এমন না হয় যে আমি একটা নন-নেগোশিয়েবল জায়গায় বসে থাকব।’

অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগের মতো এবার আবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সক্রিয় হয়েছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। তারা সবার অংশ্গ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা বলে আসছেন। চলমান সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তাদের অনেকেই। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন ও ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিকে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা