× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিএনপি-জামায়াত মুখোমুখি

আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৮ এএম

গ্রাফিক্স : প্রবা

গ্রাফিক্স : প্রবা

দীর্ঘ প্রায় আড়াই দশকের জোটসঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এই দুদলের মধ্যে একধরনের গাঁটছড়া বরাবরের। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই সম্পর্কে নতুন মেরুকরণ ঘটেছে। বিশেষত ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। বর্তমান সময়ে তা আরও বেড়েছে।

বিএনপি ও জামায়াত কয়েকটি নীতিগত বিষয়ে অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে প্রধানত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, সংস্কার, আনুপাতিক হারে নির্বাচন পদ্ধতি ইস্যুতে দল দুটির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট, ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ নানা বিষয়ে দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে। দুদলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যেই একে-অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। 

সবশেষ গতকাল শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পৃথক বৈঠক করেছে দুই দল। ওই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়। অপরদিকে সংস্কার বিষয়ে সবার ঐকমত্যের ওপর জোর দিয়েছে জামায়াত।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে ন্যূনতম যে ঐকমত্য তৈরি হবে, সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে হতে হবে বলে আবার বিএনপির অবস্থানের কথা বৈঠকে আমরা তুলে ধরেছি। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে। তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।’

বৈঠকের পর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে আমরা মত দিয়েছি। আমরা বলেছি যে সংস্কার প্রয়োজন, সে বিষয়ে সবাই একমত হলে যথাশিগগির সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে ডিসেম্বরের মধ্যে তারা জাতীয় নির্বাচন করবেন। আমরা দেখছি, কীভাবে সেটা এগিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন বলেন, ‘সংস্কার প্রস্তাবের বই দেওয়ার পর সেটা পর্যালোচনা করে জামায়াতে ইসলামী ও সরকারের সঙ্গে আলাদা মতবিনিময় হবে। সেখানে আমরা আমাদের মূল সিদ্ধান্ত জানাব।’

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করার পর বিএনপি ও জামায়াত পরস্পরের কাছাকাছি আসে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ১৯৯৯ সালে গঠিত হয় চারদলীয় জোট। বিএনপি ও জামায়াত ছিল এই জোটের প্রধান দুই দল। জোটটি ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায়ও আসে। এরপর আবার বিরোধী দলে যায়। ২০১২ সালে ১৮ দল এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে আরও দুটি দল যুক্ত করে গঠিত হয় ২০ দলীয় জোট।

বিরোধী দলে থাকার সময় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। জামায়াতকে জোটসঙ্গী করে রাজনীতি আর আন্দোলন করতে গিয়ে দেশে-বিদেশে একধরনের সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপাতভাবে প্রকাশ্যে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে চলতে শুরু করে জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলটি। এতে করে দুদলের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন বাড়তে থাকে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ২০ দলীয় জোটের বিলুপ্তি ঘটে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক দফার যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে কর্মসূচিও পালন করে জামায়াত। ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ভূমিকা রাখে দল দুটি। পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। অনেকটা আড়ালে চলে যায় আওয়ামী লীগ। রাজনীতির মাঠে পূর্ণোদ্যমে সরব হয় বিএনপি ও জামায়াত। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে একসময়ের জোটসঙ্গী দুদলের মধ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে এসে বেশকিছু ইস্যুতে তারা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।

সংস্কার ও নির্বাচন

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার অন্যতম দাবিদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীরাও এ ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এজন্য দলটি চাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করুক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছে দলটি। 

অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী চাচ্ছে প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন হোক। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য-বিবৃতি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকেও তারা দলের পক্ষ থেকে এমন অবস্থান তুলে ধরছেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে নির্বাচনের দাবি জানায় বিএনপি। দলটি বলছে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠক শেষে দলটি মহাসচিব জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে অতি দ্রুত তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। তিনি (উপদেষ্টা) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য তারা কাজ করছেন। আমরা আশা করব অতি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন তিনি। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। জনগণও প্রত্যাশা করছে।’

তবে এক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান কিছুটা ভিন্ন। সংস্কার সেরে নির্বাচনের দাবি করছে তারা। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে নয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন-সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করেই জামায়াত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের কোনো দিন, মাস, ক্ষণ বেঁধে দেয়নি দলটি। 

সংস্কারের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত যেসব সুপারিশ অতি জরুরি, অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে এ নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না, অবাধ হবে না। আগের তিনটি নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিতে পারেনি, সেই নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে হটানোর আন্দোলনে দুই হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ, আহত ৩০ হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত বৃথা যাবে।’

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন

জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনটি আগে হবে তা নিয়ে প্রধান দল দুটির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিএনপি জোরালভাবেই বলছে যে আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে জামায়াত চাচ্ছে আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনে আমরা একেবারেই একমত নই। রাজনৈতিক বিবেচনায় এটা দেশকে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হবে ততই রাজনীতি সহজ হবে, বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে আসবে।’

জাতীয় নির্বাচন কেন এখন জরুরি তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘প্রধানত দুটি কারণে দ্রুত নির্বাচন হওয়াটা জরুরি। একটি হচ্ছে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, আরেকটি হলো গভর্নেন্স (সুশাসন) চালু করা। এখন তো গভর্নেন্সের খুব সমস্যা হচ্ছে। গভর্নেন্স চালু হলেই দেখা যাবে অর্থনীতি বেটার হয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে লেখাপড়া হচ্ছে না, সেটাও ঠিক হবে। একটা নির্বাচিত সরকার না হলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’

অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন যৌক্তিক হবে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক। জনগণ চায় স্থানীয় সরকার সচল হোক। আমরাও চাই আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক।’

আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর ইস্যুতেও বিএনপি ও জামায়াত বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। পিআর হচ্ছে নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে।

যেমনÑ কোনো দল মোট প্রদত্ত ভোটের ১০ শতাংশ পেলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ আসন পাবে। জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা তিনশ হিসাবে কোনো দল ১০ শতাংশ ভোট পেলে জাতীয় সংসদে তার প্রাপ্ত আসন দাঁড়াবে ৩০টি।

আনুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ঘোর বিরোধী বিএনপি।

অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় দেশে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে সুপারিশও করেছে দলটি।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে। কোনো নির্দিষ্ট দলের হাতে যেন ভোট ও দেশ আর চলে না যায়। আমরা একটি তারুণ্যনির্ভর সমাজ দেখতে চাই। যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে আমরা চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত দেশ গড়ব।’

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।’

আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এটার (সংখ্যানুপাতিক ভোট) পুরোপুরি বিরোধী। একেবারে জোরালভাবে বিরোধী। আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থাকে আমরা সমর্থন করব না। কারণ এখানকার মানুষ এটাতে অভ্যস্ত না। এ রকম (ভোটের) প্রশ্নই উঠতে পারে না।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আনুপাতিক হারে নির্বাচনের নামে কোনো ষড়যন্ত্র করলে তা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। ভোটারের পছন্দ অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।’

পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য

জামায়াতে ইসলামীকে মোনাফেকের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব সময় জামায়াতের প্রতি উদারতা দেখিয়েছে। আর এই উদারতার সুযোগ নিয়ে জামায়াত রাজনীতি করছে। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও বিএনপি জামায়াতকে সমর্থন করেছে। এই উদারতা দেখানোর পর বিএনপি উপহার হিসেবে পেয়েছে মোনাফেকি।’

রিজভী আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একসঙ্গে আন্দোলন করেছিল সব দল। তখন খালেদা জিয়ার কথা ছিল, তার (এরশাদ) অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তবে মোনাফেক জামায়াত আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে যায়। মোনাফেকি ছাড়া তারা (জামায়াত) কিছু করেনি।’

রুহুল কবির রিজভীর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত। এক বিবৃতিতে দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আপত্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জামায়াত তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জনাব রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা উচ্চারণ করে আসলে কী অর্জন করতে চান, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে দেশকে যখন ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, সেই মুহূর্তে তার এই বক্তব্য জাতীয় ঐক্যবিরোধী ও দুরভিসন্ধিমূলক। দেশবাসী মনে করেন, এ ধরনের বক্তব্য সৌজন্য ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।’

যা বলছেন দুই দলের নেতারা

কয়েকটি ইস্যুতে দুদলের মতবিরোধের বিষয়ে জানতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘একেক বিষয়ে বিভিন্ন দলের মতামতের পার্থক্য হতেই পারে। বিএনপি জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল। জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা সেই আকাঙ্ক্ষার কথায় বিএনপি কথা বলে। সেই আলোকেই বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত ব্যক্ত করে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ এই মুহূর্তে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। জাতীয় নির্বাচনের মধ্য নিয়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা পূর্ণতা পাবে। আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করে বিএনপি। আর আনুপাতিক হারে নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে একেবারেই অবাস্তব। দেশের মানুষ নির্দিষ্ট প্রার্থীকে নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত। সুতরাং এমনটা দাবির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই বলে আমরা মনে করি।’ 

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুজিবুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিএনপির কথা বিএনপি বলবে। আমাদের কথা আমরা বলব। দেশের জনগণ এখন বিচার করবে। দেশের জনগণের ওপর আমরা ছেড়ে দিয়েছি। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কোনটা তাদের জন্য ভালো হবে।’

পৃথক জোট গঠনে তোড়জোড়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগামী দিনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ অবস্থায় একসময়ের জোটসঙ্গী দুদল নির্বাচন সামনে রেখে পৃথকভাবে জোট গঠনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভেদাভেদ ভুলে বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে মতবিনিময়ও করেছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। 

২১ জানুয়ারি চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় চরমোনাই পীরের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন জামায়াত আমির। 

সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমে কথা বলেন দুই আমির। এ সময় তারা ইসলামপন্থিদের একটি জোট গঠনের ইঙ্গিত দেন এবং জোট গঠনে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন ছাড়াও ইসলামপন্থিদের জোট গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ধর্মভিত্তিক আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলÑ ইসলামপন্থিদের ভোটগুলো এবার এক বাক্সে রাখতে চায় তারা। একাধিক ইসলামী দলের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

এদিকে জোট গঠনে তৎপর বিএনপিও। দলটি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। ইসলামী দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টার অংশ হিসেবে গত ২২ জানুয়ারি খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এরপর ২৭ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে জাতীয় ঐক্যসহ ১০টি বিষয়ে যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানান তারা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা