ফারুক আহমাদ আরিফ
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:১৬ পিএম
গ্রাফিক্স : প্রবা
চলতি বছর দুই দফায় বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার কান্দলা গ্রামের আশরাফ হোসেন। সাত সদস্যের পরিবারে তিনি একাই উপার্জন করেন। তার বসতবাড়ি বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরের অনেক সামগ্রী ভেসে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই চাল-চুলাহীন আশরাফ সরকারি কোনো সহায়তাও পাননি। বন্যায় ভেঙে যাওয়া ঘরদুয়ার এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। কোনো রকমে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন একটি ছাপড়া ঘরে।
বন্যাদুর্গত আশরাফ বলেন, ‘প্রায় প্রতিবছরই বন্যায় আক্রান্ত হই। এ বছর দুবার আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু সরকারি কোনো সহযোগিতা আমার মতো অনেকের ভাগ্যেই জোটে না। ছোট দুই ভাই পড়ালেখা করে। অনেক কষ্টে মাকে নিয়ে সংসার চলছে। বছর তিনেক আগে বাবার মৃত্যু হয়েছে।’
সিলেট মহানগরীর নিহারীপাড়া অঞ্চলের সাকিব আহমদের পরিবারও এ বছর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। দুবারের বন্যায় তাদের ঘরের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। তার মতো শহরের অনেকেই এমন ক্ষতির শিকার হয়েছে। সাকিবের পরিবারও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি।
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব শিল্পোন্নত দেশগুলোর। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে বাংলাদেশের তথ্য-উপাত্তে ঘাটতির কারণে ওইসব দেশ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তার সঠিক হিসাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে হবে। অথচ এ ব্যাপারে কোনো ধরনের তোড়জোড় দেখা যায় না।
বাংলাদেশে চলতি বছরের বন্যা মোকাবিলা করেছে তরুণসমাজ
গত ১৬ নভেম্বর আজারবাইজানের বাকুতে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে ‘ওয়াটার ফর ক্লাইমেট’ প্যাভিলিয়নে ‘ইয়ুথ ফর ওয়াটার জাস্টিস’ শীর্ষক বিশ্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সংলাপে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে বন্যার সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল সম্পূর্ণ নবীন। তাই সরকার বন্যাদুর্গতদের পাশে সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। এই বন্যার জন্য বিশ্ব মোড়লরাও দায়ী থাকলেও তারা পাশে দাঁড়ায়নি। তখন এ দেশের তরুণসমাজই বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। ভয়াবহ এই বন্যা মোকাবিলার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যেÑ জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা ও পানির ন্যায্যতা নিশ্চিতে তরুণদের সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই। তাই জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তরুণদের ‘পেইড ভলান্টিয়ার’ হিসেবে যুক্ত করার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সেন্টার ফর অ্যাটমসফিয়ারিক পল্যুশন স্টাডি সেন্টারের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক পরিসরে যতই ক্ষতিপূরণ চাই না কেন, আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষয়ক্ষতি, পৈতৃক ঘরবাড়ি হারানো, ধর্মীয় স্থাপনা হারানোর ক্ষতি আমরা কীভাবে পূরণ করব? তাই শুধু ক্ষতিপূরণের দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তরুণদের জলবায়ু, পানির ন্যায্যতাসহ সকল পরিবেশ সমস্যায় সম্পৃক্ত করা জরুরি।’
একইভাবে ওয়াটারকিপার্স সেনেগালের সমন্বয়ক এম্ব্যাক স্যাক বলেছেন, ‘আমাদের সবারই উচিত তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তনরোধ এবং পানির ন্যায্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করা।’
৯ দফায় ৫৭ দিন বন্যাকবলিত ছিল সারা দেশ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ প্রতিবছরই বন্যার মুখোমুখি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুকসানা হক রিমি। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই বন্যার আকার, প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যার আগ্রাসন ছিল ভয়াবহ। তারপর থেকে হয়তো সারা দেশে একবারে বন্যা হচ্ছে না, কিন্তু বিভিন্ন বিভাগ, জেলা বা অঞ্চলভেদে বন্যা হচ্ছে। চলতি বছর এমন স্থানে বন্যা হয়েছে যা সাধারণত হয় না। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেই এ বছর আমরা বন্যাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছি।’
চলতি বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়াবিদরা। বাস্তবেও হয়েছে তাই। আর বৃষ্টিপাত ও দেশের উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশে ৯ দফায় বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও অঞ্চল প্রায় ১৭ বার বন্যাকবলিত হয়েছে। এসবের মধ্যে সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি বন্যা হয়েছে। সিলেট পাঁচবার বন্যাকবলিত হয়। চট্টগ্রাম চারবার, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল তিনবার এবং রাজশাহীর সিরাজগঞ্জ জেলা দুবার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের দেওয়া হিসাবে, এ বছর ৯ দফায় মোট ৫৭ দিন বন্যাকবলিত ছিল দেশের এসব অঞ্চল। এতে মানুষের প্রাণহানি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৮ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ১১ দিনব্যাপী প্রথম বন্যাটি দেখা দেয় সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে। এ সময় সিলেটে ২ হাজার ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তা ছাড়া সিলেটের উজানে ভারতে একই সময়ে ৩ হাজার ১৪৮ মিলিমিটার ও এক দিনে ১ হাজার ৩১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৭০২ মিলিমিটার ও ২৪ ঘণ্টায় ২১৪ মিলিমিটার। দ্বিতীয় দফায় ১৫ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ১২ দিন বন্যা আক্রান্ত হয় সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, ফেনী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা। এ সময় এসব অঞ্চলে ৯ হাজার ৯৩৮ মিলিমিটার ও এক দিনে ২ হাজার ৮৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তৃতীয় দফায় ৩০ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ১৭ দিন সিলেট বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর, নেত্রকোণা, ঢাকার কিশোরগঞ্জ, রংপুর বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী ও রাজশাহীর সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা হয়। এ সময় এসব অঞ্চলে মোট ৯ হাজার ১৩৪ ও এক দিনে ২ হাজার ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টি হয় জাফলংয়ে ৯৫৩ মিলিমিটার।
চতুর্থ দফায় ১ থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিন বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ফেনী অঞ্চলে বন্যা হয়। এই সময় এসব অঞ্চলে ২ হাজার ৪১২ মিলিমিটার এবং এক দিনে ১ হাজার ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
পঞ্চম দফায় ৭ থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সাত দিন সিলেট, সুনামগঞ্জ ও জাফলংয়ে বন্যা হয়। তখন এ অঞ্চলে ১ হাজার ১১২ ও এক দিনে ৩৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ সময় চেরাপুঞ্জিতে ৫৯৭ ও এক দিনে ২৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
সরদার উদয় রায়হানের দেওয়া তথ্যমতে, ষষ্ঠ দফায় ১৯ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ৯ দিন সিলেট বিভাগ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ফেনীতে বন্যা হয়। এই সময় এসব অঞ্চলে ৫ হাজার ৯৮৩ ও এক দিনে ২ হাজার ৩৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। বিশেষ করে, সিলেটে এক দিনে ১৯৯ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ১৮২ ও কুমিল্লায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সপ্তম দফায় বান্দরবানের লামায় ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। অষ্টম দফায় ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর দুদিন রংপুর বিভাগে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করে। সেখানে দুই দিনে ৪৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। নবম দফায় ৪ থেকে ১০ অক্টোবর সাত দিন ময়মনসিংহের শেরপুর, নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহ জেলায় বন্যা হয়।
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০ হাজার ২৪১ কোটি টাকা
জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ দফায় ২৫ জেলায় একাধিকবার বন্যায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। তাদের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, জুন মাসের বন্যায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬৩০ কোটি ৬৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৬ দশমিক ৭৩ টাকা। জুলাইয়ের বন্যায় ক্ষতি ৩ হাজার ৯৪৬ কোটি ২৪ লাখ ৭ হাজার ৭০৮ দশমিক ৩০ টাকা। আগস্টের বন্যায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫২২ দশমিক ৩০ টাকা। অক্টোবরে ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার ৯৩০ টাকাসহ মোট ক্ষতির পরিমাণ ২০ হাজার ২৪১ কোটি ৩২ লাখ ৪ হাজার ৯২৭ টাকা।
হতাহতের সংখ্যা ৩ শতাধিক
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের হিসাবে চার দফা বন্যায় সারা দেশে ১২২ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে জুনে ৭ জন, জুলাইয়ে ২৮, আগস্টে ৭৪ ও অক্টোবরে ১৩ জন। একই সময়ে আহত হয়েছে ১৯৯ জন। তাদের মধ্যে জুনে ৮২, জুলাইয়ে ৪৯ ও আগস্টে ৬৮ জন।
এদিকে ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চার মাসে ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ৫৯ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ইউনিসেফ ৪ মাসে বিভিন্ন দুর্যোগে ৫০ লাখ শিশু আক্রান্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে তাদের এক প্রতিবেদনে।
বন্যার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আগামী দিনে
বর্তমানে অত্যধিক বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবের মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লবণাক্ততা বেড়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ফসলহানি হচ্ছে। রোগবালাই বাড়ছে। অথচ এসবের জন্য দায়ী মূলত উন্নত বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশে বন্যার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের এ অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে বন্যার সংখ্যাও বেড়ে যাবে। কাজেই কোন সিজনে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। বন্যা ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক ও কার্যক্রম রয়েছে। সেখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের স্থায়ী পুনর্বাসনও একটি দিক। তা ছাড়া নদীগুলোকে নিয়মিত ড্রেজিং করা ও অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদী ড্রেজিং ব্যয়বহুল একটি কাজ। এর জন্য কিছু কাজ স্থানীয় লোকদের নিজ উদ্যোগে করতে হবে। বিশেষ করে খাল ও নদীতে আবর্জনা না ফেলার কাজটি। নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে। ঢাকায় ৫২টি খাল ছিল, ভরাট ও দখলের পর যার মধ্যে টিকে আছে ২৬টি।’
জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ আদায় কীভাবে সম্ভব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে কীভাবে ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভবÑ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশের পরিচালক অ্যাডভোকেট ম হাফিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘চলতি বছর ৯ বার বন্যা ও দুটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এসব হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। এজন্য যারা দায়ী সেই শিল্পোন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কপ-২৮-এ লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড ঘোষণা দেওয়া হয়। সেটি অপারেশনাল হবে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য যারা দায়ী তাদের ধরতে হলে তথ্য-উপাত্তসহ তা উপস্থাপন করতে হবে। এটি করতে হলে সরকারকে প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে আমরা সাহায্য বা ঋণ নয়, বরং জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ আদায় করব। গত কপে লস অ্যান্ড ড্যামেজ খাতে ৭৯৩ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এ বছর নোয়াখালীর বন্যায় আমাদের ক্ষতি হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শুধু মানবিক সহায়তা দিলে চলবে না, বরং তাদের সম্পদহানির জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসন করতে হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোÑ এমন মন্তব্য করে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের চিফ এক্সিকিউটিভ এম জাকির হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শিল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ বা অনুদান দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু প্যারিস চুক্তির আওতায় গঠিত লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে দ্রুত অনুদান বরাদ্দ করা উচিত থাকলেও শিল্পোন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে উল্টো ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো আরও ক্ষতির মুখে পড়ছে। এজন্য উচিত হবে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি উত্থাপন করা।’