× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সুবিধাভোগীদের অনেকেই ফেঁসে যেতে পারেন

দীপক দেব

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৭ এএম

গ্রাফিক্স : প্রবা

গ্রাফিক্স : প্রবা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে যেসব খাতের দুর্নীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয় তার অন্যতম বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। বিশেষ করে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে লুটপাটের মহোৎসব চালানোর অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১০ সালের ১২ অক্টোবরে সরকার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিতে আইন প্রণয়ন করে।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ওই আইনের দুটি বিধান অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আর এর মধ্য দিয়ে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে সুবিধাভোগীদের অনেকেই এবার ফেঁসে যেতে পারেন বলে তারা মনে করছেন।

বাতিল হওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০-এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি এবং ক্রয়সংক্রান্ত ৬ (২) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে করা কাজ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। চুক্তি করার বিষয়ে মন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে বিধান দুটিতে। আইনটি ‘কুইক রেন্টাল’ আইন নামে পরিচিত। বিধান দুটির প্রশ্নে দেওয়া রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। একই সঙ্গে জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনি প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। দেশের মানুষ প্রতিকারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে পারবে, যা এতদিন এই আইনের বিধান দ্বারা রহিত করা ছিল। একইভাবে এই সেক্টরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কুইক রেন্টাল আইনকে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই দেশের অর্থনীতির জন্য ‘বিষফোড়া’ বলে গণ্য করেন। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার হলেও বিগত সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার ছিল। জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্টÑ হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের প্রিয় লোকদের আবদার পূরণে বিদ্যুৎ না নিয়েও ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে। এর বিনিময়ে তৎকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সুবিধাভোগী বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা অর্থ সুবিধা দিয়েছেন। তাদের মতে, বিদ্যুৎ দেওয়া ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিল নেওয়ার মতো মারাত্মক অনিয়ম আর কিছু নেই। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, এ টাকা দেশের নাগরিকদের। কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া এসব রেন্টাল আর কুইক রেন্টালের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয় দেশের প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর কাছে। এর মধ্যে ছিল সামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, ইউনিক গ্রুপ, বারাকাসহ অন্যান্য কোম্পানি। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেন সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার পর বিদ্যুৎ সংকটের দ্রুত সমাধানের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়। তবে এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনটি প্রণয়ন করা হয়। শুরুতে দুই বছরের জন্য এই আইন করা হলেও পরে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়।

আইনের ‘পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রচার’-সংক্রান্ত ৬(২) ধারা ও ‘আদালত ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা’-সংক্রান্ত ৯ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক ও মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম আবেদনকারী হয়ে গত আগস্টে রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। সংবিধানের নির্দেশনার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় ওই আইনের ৬(২) এবং ৯ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই রুলের ওপর ৭ নভেম্বর শুনানি শেষ হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত ১৪ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন রাখেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের আমলে কুইক রেন্টাল লুটপাটের আইনি ভিত্তি বিশেষ বিধান আইনে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন ড. শাহদীন মালিক। আইনটির ৯ ধারায় দেওয়া দায়মুক্তি অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই কথা বলেন।

শাহদীন মালিক বলেন, কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি অবৈধ ছিল বলে আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। এতে সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবে। 

তিনি আরও বলেন, কুইক রেন্টালের বিশেষত্ব হলো বিদ্যুৎ সরবরাহ না করলেও চুক্তির পুরো টাকা পাবে। লুটপাটকে আইনি ভিত্তি দেওয়া হয়েছিল এ আইনের মাধ্যমে।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী শাহদীন মালিকের সঙ্গে শুনানিতে ছিলেন মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুর আলম শুনানিতে অংশ নেন।

যা আছে অবৈধ ঘোষণা করা দুই ধারায় 

পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রচার-সংক্রান্ত আইনের ৬(২) ধারার ভাষ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর সম্মতি গ্রহণক্রমে যেকোনো ক্রয়, বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা প্রস্তাব ধারা ৫-এ বর্ণিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটি সীমিতসংখ্যক অথবা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও দর-কষাকষির মাধ্যমে ওই কাজের জন্য মনোনীত করে ধারা ৭-এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে অর্থনৈতিক বিষয় বা সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর ‘আদালত ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা’-সংক্রান্ত ৯ ধারা অনুযায়ী, এই আইনের অধীন করা বা করা হয়েছে বলে বিবেচিত কোনো কাজ, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

বিধান বাতিলে যা বলা হয়েছে

রায়ে আদালত বলেছেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই যে আইনের ৬(২) ধারা সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। দেশের মানুষ প্রকৃতভাবে সার্বভৌম। সংবিধান আইনের শাসনের ঘোষণা দিয়েছে। আইনের ৯ ধারা অনুসারে চুক্তির বিষয়ে কেউ দায়ী হলে বিচারিক জবাবদিহির ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। অথচ সংবিধানের ১৪৫(২) অনুচ্ছেদে চুক্তি বাস্তবায়নে ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ৯ ধারাটি সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাজেই ৯ ধারাটি বাতিলযোগ্য। ফলে সারবত্তা থাকায় রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হলো। সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আইনের ৬(২) ও ৯ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হলো।’

রায়ে আদালত আরও বলেন, আইনের ৬(২) অধীনে ১৭টি কুইক রেন্টাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যেগুলো এখন পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আইনি জটিলতা এড়াতে এ ক্ষেত্রে ৬(২) ধারায় সংশ্লিষ্ট চুক্তির সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে মার্জনা করা হলো। তবে চুক্তির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের কার্যক্রম কিছু শর্তসাপেক্ষে পুনরায় দেখার অধিকার সরকারের থাকবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হলে সাময়িক এই মার্জনা প্রযোজ্য হবে না।

দেশে ১৩৭টি পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, এর মধ্যে ৪০টি পিডিবির মালিকানাধীন। জাতীয় স্বার্থে, জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

আদালতের রায়ের বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এটা জাতীয় প্রত্যাশা ছিল। এখন বিদ্যুৎ সেক্টরে যেসব অপরাধ ঘটেছিল দেশের মানুষ প্রতিকারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে পারবে, যা এতদিন এই আইন দ্বারা রহিত করা ছিল। আইনটিকে কালো আইন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ আইনের আওতায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশের জ্বালানি খাত অন্ধকারচ্ছন্ন ছিল। সেখানে নির্বিচারে যে লুণ্ঠন হয়েছে, সেই লুণ্ঠনের প্রতিকারের সুযোগ উন্মুক্ত হলো। জনগণের বিচার চাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। তবে পুরো আইন বাতিল করার আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলে বড় ধরনের প্রভাব লক্ষ করা যেত। তারপরও এর মধ্য দিয়ে এই সেক্টরের অপরাধমূলক কার্যক্রমের বিষয়ে একটা আইনি সিদ্ধান্ত পাওয়া গেল। এর ফলে এখন থেকে বিদ্যুৎ সেক্টরে বিনিয়োগসহ যা কিছু হবে তা প্রতিযোগিতামূলকভাবেই হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা বড় ধরনের প্রভাব পড়বে এই সেক্টরে। কারণ আগে প্রতিযোগিতাবিহীনভাবে যাকে খুশি তাকে কাজ দেওয়া হতো। বিনিয়োগের কোনো ধরনের কোয়ালিটি নিশ্চিত করা হতো না।

এদিকে সম্প্রতি জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল করিম খান ২০১০ সালের দায়মুক্তি আইনকে এই খাতের দুর্নীতির চেইনের মূল যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি গণমাধ্যমের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গত সরকারের দুর্নীতির চেইনের মূল যন্ত্র ছিল ২০১০ সালের দায়মুক্তি আইন। দুর্নীতির নেটওয়ার্ক থাকে, চেইন আর্কিটেকচার থাকে। এই আইন ছিল ওই আর্কিটেকচারের নোঙর। এর অধীনে হওয়া সিদ্ধান্তগুলো যাচাই-বাছাই ছাড়া হয়েছে। কাউকে কাউকে সমস্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে আমরা শুরুতেই বলেছি, আমরা এই আইন আর কনটিনিউ করব না। এই আইনের মাধ্যমে নেওয়া নতুন প্রকল্পগুলো স্থগিত করেছি। যেগুলো নেওয়া হয়ে গেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে কনটিনিউ করছি। নতুন সব প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে অন্যসব সেক্টরের মতো পিপিআর গাইডলাইন ফলো করছি। এই আইনের অধীনে যে সমস্ত চুক্তি হয়েছে তার পর্যালোচনার জন্য কমিটি করে দিয়েছি। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে।

ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বেশুমার লুটপাট

অভিযোগে রয়েছে, বছরের পর বছর কুইক রেন্টালের সুবিধা নিয়ে গড়ে ওঠা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ চালানো হলেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এগুলোর মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, ক্যাপাসিটি চার্জের বিলের নামে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে।

জানা গেছে, এসব বিল পরিশোধ হয় ডলারে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে এ বিলের পুরোটাই ডলারে দিতে হয়েছে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া এসব রেন্টাল আর কুইক রেন্টালের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয় দেশের প্রভাবশালী কিছু কোম্পানির কাছে। এদের বিষয়ে এরই মধ্যে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি।

জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পায় সামিট গ্রুপ। সরকার ঘনিষ্ঠ এই গ্রুপ গোপালগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের টানা ছয়বারের এমপি ও সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খানদের পারিবারিক ব্যবসা। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যে, দেশে আইপিপিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সামিট গ্রুপকে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে। এটি পরিশোধিত মোট ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

অনেকেই মনে করছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে চুক্তির বিভিন্ন দিকগুলো পর্যালোচনা করা একই সঙ্গে সরকারের স্বার্থে কোনো ধরনের আঘাত করা হয়েছে কি না এসব বিষয় নিরূপণ করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে জনগণের অর্থ লুটের তথ্য-প্রমাণ যদি কারও বিরুদ্ধে পাওয়া যায় তাহলে তাদের জন্য ফেঁসে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে।

এরই মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানি খুলে সেই কোম্পানির মাধ্যমে নসরুল হামিদের হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠাকালে নসরুল হামিদ তার নিজের যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত বাসভবনের ঠিকানা ব্যবহার করেন এমন অভিযোগ এসেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা