প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:৪৯ পিএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:০৫ পিএম
একটি গোলাপি রঙের ফুলের ওপর রাজা প্রজাপতির পরাগায়নের দৃশ্য। ছবি : সংগৃহীত
বায়ুদূষণ মানুষের স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব জীবকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। জীবাশ্ম জ্বালানিজাত বায়ুদূষণের ফলে বদলে যাচ্ছে ফুলের ঘ্রাণ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরাগায়ন। নতুন এক গবেষণায় এমনটি উঠে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফুলের ঘ্রাণ বদলে যাওয়ায় পরাগায়নে অংশগ্রহণকারী পাখি বা কীটপতঙ্গের নির্দিষ্ট ফুলটির অবস্থান খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক পরাগায়ন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্য দিকে ঘ্রাণবিলাসি মানুষও ফুলের যথাযথ ঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গবেষক জেফ রিফেল বলেন ,‘মানুষের কাজের দ্বারা বায়ুদূষিত হচ্ছে। এ দূষণ ফুলের ঘ্রাণ সংকেতের রাসায়নিক গঠনকে পরিবর্তন করছে। পরিবর্তনটা এত বেশি যে তা পরাগায়নকারীদের ফুল শনাক্ত করতে বাধা দিচ্ছে। ফলে অনেক ফুলের পরাগায়নই আর হচ্ছে না।’
ফুলের ঘ্রাণ বদলে যাওয়া বা ঘ্রাণ-মাস্কিংয়ের কারণ খুঁজে পেয়েছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘সায়েন্সে’ প্রকাশিত তাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন শক্তির উৎস থেকে উদ্ভূত নাইট্রেট রেডিকেলগুলো ফুলের ঘ্রাণ বদলে দিচ্ছে, যা এনও৩ নামে পরিচিত।
পরাগায়নকারীদের ফুল শনাক্ত করার ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য গবেষকরা বিভিন্ন পতঙ্গের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, এক প্রজাতির পতঙ্গের সঠিকভাবে ফুল শনাক্ত করার ক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমেছে। আর কয়েকটি প্রজাতি রাতের বেলায় শহুরে পরিবেশে ফুলের উৎস খুঁজে পায়নি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফুলের ঘ্রাণ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যাওয়ার পর তা বায়ুতে মিলিয়ে যায়। সেই দূরত্বের মধ্যে থাকা পরাগায়নকারী পাখি বা পতঙ্গরা এই ঘ্রাণে আকর্ষিত হয়েই ফুলের কাছে চলে আসে। কিন্তু বায়ুতে মিশ্রিত এনও৩ পরাগায়নকারী ফুলের নাগাল কমিয়ে দিচ্ছে। কারণ ফুলের ঘ্রাণ পরাগায়নকারীদের আকৃষ্ট করার পূর্বেই তা বায়ুতে মিলিয়ে যাচ্ছে। ফলে ফুলের উৎস খুঁজে পাচ্ছে না পরাগায়নকারীরা।
তবে বিজ্ঞানের মতে, সূর্যের আলো এনও৩-এর শক্তি হ্রাস করতে পারে। এটা একটা সুসংবাদ। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, বায়ুদূষণের কারণে পরগায়নকারী পাখি বা কীটপতঙ্গরা তাদের বাস্তুতন্ত্র ঠিক রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
গবেষক রিফেল বলেন, তাদের গবেষণাভুক্ত ফুল দেয় এমন ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ফুল গাছের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশির পরাগায়নের দরকার। অথচ ৭০ প্রজাতির পরাগায়নকারীরা বিপন্ন বা হুমকির সম্মুখীন।
গবেষক জোয়েল থর্নটনের আশা, দূষণ কীভাবে পরাগায়নকারীদের কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করছে তা নিয়ে নতুন গবেষণার ক্ষেত্রে তাদের কাজ রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে।
সূত্র : জিওনিউজ