প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৩৮ পিএম
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২২ ১৯:১৭ পিএম
ব্রিস্টলের একটি ফ্যাসিলিটিতে রাখা গবেষণাগারে তৈরি রক্ত। ছবি : বিবিসি
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা বলেছেন, বিশ্বে প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেব গবেষণাগারে বৃদ্ধি করা লোহিত রক্ত কণিকা তারা দুজন মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়েছেন। অল্প পরিমাণ রক্ত (কয়েক চামচ) মানবশরীরে ঢোকানোর পর এটি কীভাবে কাজ করে তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রক্তের প্রয়োজন এমন রোগীদের রক্ত সরবরাহের বিষয়টি মূলত রক্তদাতাদের ওপরই নির্ভর করে থাকে। তবে গবেষণাগারে রক্ত তৈরির (বৃদ্ধি) চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো রক্তের বিরল গ্রুপ তৈরি করা, যে রক্ত চাইলেই সবসময় পাওয়া যায় না। তা ছাড়া সিকল সেল অ্যানিমিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। রক্তের সঠিক মিল না হলে শরীর তা প্রত্যাখ্যান করে। কিছু রক্তের গ্রুপ রয়েছে যা বিরল।
গবেষণাগারে রক্ত কীভাবে তৈরি হয়
গবেষণা প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ব্রিস্টল, ক্যামব্রিজ, লন্ডন এবং এনএইচএস (যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা) ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্টের সমন্বয়ে গঠিত দল। দলটি লোহিত রক্ত কণিকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করছে। লোহিত রক্ত কণিকা ফুসফুস থেকে শরীরের বাকি অংশে অক্সিজেন বহন করে।
গবেষকরা এক ব্যাগ (৪৭০মিলি) রক্ত দিয়ে গবেষণাগারে রক্ত তৈরির কাজ শুরু করেন। তারা ওই রক্ত থেকে স্টেম সেল বের করে আনেন। এই স্টেম সেল লোহিত রক্তকণিকায় পরিণত হতে সক্ষম। গবেষণাগারগুলোতে এই স্টেম সেলগুলোকে প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করা হয়। পরবর্তীতে সেসব সেলকে লোহিত রক্তকণিকায় পরিণত হতে সহায়তা করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় সময় লাগে তিন সপ্তাহ। প্রায় ৫০ লাখ স্টেম সেল থেকে ৫০ বিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করা হয়। পরে তা ছেঁকে ১৫ বিলিয়ন প্রতিস্থাপনযোগ্য লোহিত রক্তকণিকা বের করা হয়।
গবেষক টয়ে বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে যতটা সম্ভব রক্ত তৈরি করতে চাই। আমাদের গবেষণায় প্রাথমিকভাবে দুজন লোক অংশ নিয়েছেন। তাদের শরীরে গবেষণাগারে তৈরি রক্ত প্রবেশ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য পর্যায়ক্রমে ১০ জন স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে এই পরীক্ষা চালানো। তাদের শরীরে ৫-১০মিলি রক্ত চার মাসের ব্যবধানে প্রবেশ করানো হবে। একবার দেওয়া হবে স্বাভাবিক রক্ত। আরেকবার দেওয়া হবে গবেষণাগারে তৈরি রক্ত।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে যে রক্ত দেওয়া হবে, তার মধ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ যুক্ত করা হবে। এটি প্রায়ই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহার হয়। এতে করে গবেষকরা এ রক্ত শরীরে কতক্ষণ স্থায়ী হয় তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। আশা করা হচ্ছে গবেষণাগারে তৈরি রক্ত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে।
লোহিত রক্ত কণিকা সাধারণত ১২০ দিন স্থায়ী হয়। মানুষের দান করা রক্তের মধ্যে অল্প বয়স্ক ও বেশি বয়স্ক রক্তকণিকার মিশ্রণ থাকে, যেখানে গবেষণাগারে বৃদ্ধি করা রক্ত সম্পূর্ণ নতুনভাবে তৈরি হয়। তাই এ রক্তের পুরোটাই ১২০ দিনই স্থায়ী হওয়া উচিত। ফলে সিকল সেল অ্যানিমিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘনঘন রক্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে না।
তবে যথেষ্ট আর্থিক ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ রক্তের দাম অনেক বেশি হবে। এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টের ট্রান্সফিউশন বিভাগের পরিচালক ডা. ফাররুখ শাহ বলেন, ‘গবেষণাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গবেষণাগারে তৈরি করা রক্তের মাধ্যমে সিকল সেল অ্যানিমিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।’