প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৩২ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৫৩ পিএম
‘২০২২ এপি৭’ গ্রহাণুটি শনাক্ত করেছে চিলির সেরো টোলোলো অভজারভেটরির চার মিটারের ভিক্টর এম ব্ল্যাঙ্কো টেলিস্কোপ। ছবি: সংগৃহীত
মহাবিশ্ব এক অন্তহীন মহাজগত। তাই এর বিস্ময়ও শেষ হবার নয়। একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোমবার (৩১ অক্টোবর) একটি অতিকায় গ্রহাণুর সন্ধানের কথা জানিয়েছেন, যেটা গত আট বছরে আবিষ্কৃত গ্রহাণুগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। এটি পৃথিবীকে আাঘাত করলে মহাবিপর্যয় হতে পারে। তবে, নিকট ভবিষ্যতে সে শঙ্কা নেই।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির সেরো টোলোলো অভজারভেটরিতে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালতি হয় চার মিটারের ভিক্টর এম ব্ল্যাঙ্কো টেলিস্কোপ। এটি ব্যবহার করে পৃথিবী ও শুক্রের কক্ষেপথে ঘুরে বেড়ানো মহাশূন্য পাথরের (ডার্ক ম্যাটার) অনুসন্ধান করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি ইনস্টিটিউশন ফর সায়েন্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্কট শেপার্ড ও তার সহযোগীরা। কয়েক বছররের গবেষণা শেষে মার্কিন বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী দ্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নাল তারা একটি প্রবন্ধ লেখেন। এতে তারা তিনটি নতুন গ্রহাণুর সন্ধানের কথা জানান।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, স্কট শেপার্ড ও তার দল তিনটি গ্রণাণুর সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে একটির ব্যাস ১ দশমিক ১ কিলোমিটার থেকে ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার হতে পারে। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘২০২২ এপি৭’। এটি এমন একটি জায়গায় শনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে সূর্যের কিরণ অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। ফলে গ্রহাণুটির সঠিক ব্যাস নির্ণয় করা কঠিন। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে যে সব গ্রহাণু আবিষ্কার হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ২০২২ এপি৭ বৃহত্তম। ব্যাসের কারণে এটিকে ‘সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণু’ (পিএইচএ) বলে ধরা হচ্ছে।
স্কট শেপার্ড বলেন, কোনো গ্রহাণুর ব্যাস এক কিলোমিটারের বেশি হলে সেটা কোনো গ্রহ বা পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারে। আর এগুলোই পিএইচএ নামে পরিচিত। এ ধরনের কোনো গ্রহাণু আঘাত করলে, তার পরিণাম হয় অত্যন্ত ভয়াবহ। এমন আঘাতে বিপুল পরিমাণ ধুলো ও দূষিত পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে। এসব ধুলো ও দূষিত পদার্থ স্বাভাবিক হতে হতে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ ভয়াবহ রকমের শীতল হয়ে পড়তে পারে। ফলে হারিয়ে যেতে পারে নানা ধরনের প্রাণী। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ছয় কোটি বছর পূর্বে একটি গ্রহাণুর আঘাতের ফলে অতিকায় ডায়নোসরের বিলুপ্ত হয় বলে মনে করেন গবেষকেরা।
তবে, অভয় দিয়ে স্কট শেপার্ড বলেন, ২০২২ এপি৭ সহসা পৃথিবীকে আঘাত করার শঙ্কা নেই। কিন্তু, কয়েকশ বছরেও যে করবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ গ্রহাণুটি পৃথিবীর কক্ষপথে ইতিমধ্যে একবার অতিক্রম করেছে। সৌভাগ্যক্রমে তখন পৃথিবী সূর্যের উল্টো দিকে ছিল।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাসের প্রায় ৩০ হাজার গ্রহাণুর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এগুলোর মধ্যে ৮৫০টির বেশির ব্যাস এক কিলোমিটারের বেশি। অর্থাৎ এগুলো পৃথিবীকে আঘাত করলে মহাবিপর্যয় হতে পারে। আর পৃথিবীর সঙ্গে এগুলোর দূরত্ব কম হওয়ায় সেগুলোকে ‘পৃথিবীর নিটকবর্তী বস্তু’ (এনইও) বলা হয়। এ রকম অন্তত ২০ থেকে ৫০টি এনইও এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। এক বছরের মধ্যে এগুলোর কয়েকটির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তবে ১০০ বছরে এগুলোর পৃথিবীকে আঘাত করার শঙ্কা নেই।
মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা গত সেপ্টেম্বরে একটি ছোট্ট গ্রহাণুর গতিপথ বদলাতে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। ‘ডার্ট মিশন’ নামের ওই অভিযানে হাইপারসনিক গতিতে একটি মহাকাশ যান গ্রহাণুটিকে আঘত করে। ফলে সেটির গতিপথ কিছুটা বদলেছে বলে দাবি করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু ২০২২ এপি৭ এর ক্ষেত্রে সে রকম কোনো অভিযান পরিচালনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের ন্যাশনাল নিয়ার আর্থ অবজেক্টস ইনফরমেশন সেন্টারে পরিচালক জে টেট। আকারের কারণেই মূলত এটিকে অসম্ভব বলে মনে করেন তিনি। তবে, ২০২২ এপি৭ এর মতো ব্যাসের গ্রহাণুর গতিপথ বদলাতে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে বিশ্বাস করেন জে টেট।