প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ১১:৫৭ এএম
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ১২:২৯ পিএম
কৃমিটি ৮ সেন্টিমিটার লম্বা। ছবি : এএনইউ
সাধারণত পাকস্থলী থেকে শুরু করে পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অঙ্গ, চোখ
ও মাংসপেশিতেও পরজীবী কৃমি শনাক্তের ঘটনা নিয়মিতই ঘটে। চিকিৎসাশাস্ত্রেও এ ধরনের বহু
নজির লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে যে অঙ্গে পরজীবীর সংক্রমণ ঘটল -তা বিরলই নয়,
এই প্রথম।
দেশটিতে ৬৪ বছর বয়সি এক নারীর মস্তিষ্ক থেকে জীবন্ত পরজীবী কৃমি পাওয়া
গেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ) ও ক্যানবেরা হাসপাতালের
ডাক্তার ও গবেষকরা সেই নারীর মস্তিষ্কে ৮ সেন্টিমিটার (৩.১৫ ইঞ্চি) লম্বা গোলকৃমি রাউন্ডওয়ার্ম
খুঁজে পায়। শুধু তাই নয় ‘ওফিডাসকারিস রবার্টসি রাউন্ডওয়ার্ম’ কৃমির লার্ভাগুলো
তার ফুসফুস, যকৃতসহ অন্য অঙ্গকেও সংক্রমিত করেছিল।
অথচ এটি এমন এক পরজীবী, যার বাসস্থান অজগরের খাদ্যনালি ও পেটে।
এএনইউ ও ক্যানবেরা হাসপাতালের সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় সেনানায়েক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই নয়। তাদের জানামতে স্তন্যপায়ী প্রজাতির মস্তিষ্কে ওফিডাসকারিস শনাক্তের ঘটনা এটিই প্রথম।
সাধারণত এ ধরনের রাউন্ড ওয়ার্ম মার্সুপিয়াল ও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর
মধ্যে পাওয়া যায়। অজগর এই প্রাণীগুলো খেলে, সাপের মধ্যেই কৃমির এই প্রজাতিটি তার জীবনচক্র
সম্পন্ন করে।
মস্তিষ্কের এই পরজীবী কৃমির সংক্রমণ নিয়ে এরই মধ্যে ইমার্জিং ইনফেকশাস
ডিজিজেস জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই নারী সম্ভবত ওয়াররিগাল গ্রিনস থেকে
সংক্রমিত হয়েছেন। এটি এক ধরনের অস্ট্রেলীয় ঘাস, যা খাওয়া যায়। তিনি সম্ভবত বাড়ির কাছ
থেকে এটি সংগ্রহ করেছিলেন এবং রান্না করে খেয়েছিলেন।
এই ঘাসগুলো অজগরদের আবাসস্থল, যারা তাদের মল দিয়ে সেখানে এই পরজীবীর
ডিম ছুড়ে ফেলত।
সেনানায়েকের মতে, এই ঘটনা প্রাণী থেকে মানুষে রোগ ছড়ানোর ক্রমবর্ধমান
ভয়াবহতার ঝুঁকির দিকেই ইঙ্গিত করছে।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম সেই নারীর শরীর খারাপ করতে শুরু করে।
৩ সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি এমন গিয়ে দাঁড়ায় যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। প্রাথমিকভাবে
তার লক্ষণগুলো ছিল পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া। পরে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্টও হওয়া শুরু হয়।
সে বছর আর পরজীবী শনাক্ত করা যায়নি। কারণ নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেও চিকিৎসকদের ভাবনায়ও
আসেনি যে মস্তিষ্কে পরজীবী সংক্রমণ হতে পারে।
২০২২ সালে সেই নারী আবারও ভুলে যাওয়া ও বিষণ্নতাজনিত সমস্যা নিয়ে
হাসপাতালে ভর্তি হলে ডাক্তাররা তার এমআরআই স্ক্যান করেন। এ পরীক্ষায় মস্তিষ্কের ক্ষত
শনাক্ত হয়। পরে একজন নিউরোসার্জন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গেলে তিনিই কৃমির সন্ধান পান।
যা তাকে বেশ হতবাক করে। পরে একজন প্যারাসিটোলজি বিশেষজ্ঞ এটিকে কৃমি হিসেবে নিশ্চিত
করেন।
তার মস্তিষ্ক থেকে কৃমি অপসারণ করা হয়েছে তবে এখনও সেই নারীর অবস্থা
খুব একটা ভালো নয়। তার নিউমোনিয়া সারেনি, ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
সূত্র : আলজাজিরা