প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩ ১২:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৩ ১৪:৪৭ পিএম
স্টিবেল তার গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, জলবায়ু যখন উষ্ণ হয়, গড় মস্তিষ্কের আকার শীতল হওয়ার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়ে যায়। ছবি : সংগৃহীত
জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা। এ কারণে
অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতও হচ্ছে মানুষ। কিন্তু এবার বিজ্ঞানিরা
বলছেন আরও ভয়াবহ কথা। তারা দাবি করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের মস্তিষ্ক
ছোট হয়ে যাচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার
ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের কগনেটিভ সায়েন্টিস্ট জেফ মরগান স্টিবেলের সাম্প্রতিক
এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি ব্রেন, বিহেভিয়ার ও ইভোলিউশন
জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
স্টিবেল
তার গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক বৈশ্বিক উষ্ণায়নে
সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি মানুষের মস্তিষ্কের আকার
ও শেষ পর্যন্ত মানুষের আচরণেও প্রভাব ফেলছে।’
আর
বিষয়টি বোঝার জন্য স্টিবেল বৈশ্বিক তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের প্রাকৃতিক রেকর্ডের
ভিত্তিতে গত ৫০ হাজার বছরে ২৯৮টি হোমো (মানুষ গোত্রীয়) নমুনার মস্তিষ্কের আকারের তুলনামূলক
বিশ্লেষণ করেছেন, যেগুলো ১০টি ভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া। এ নমুনাগুলোর মস্তিষ্কের আকার
বের করতে ৩৭৩টি ভিন্ন পরিমাপের স্কেল ব্যবহার করেছেন তিনি। এ ছাড়া শরীরের আকার অনুমান
করতে লিঙ্গের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া জীবাশ্মগুলো কতদিন আগে বেঁচে ছিল
তার ওপর ভিত্তি করে স্টিবেল ১০০ বছর, ৫ হাজার বছর, ১০ হাজার বছর এবং ৫০ হাজার বছরের ক্ষেত্রে
ভিন্ন জীবাশ্ম বয়সের স্প্যান ব্যবহার করে গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
এর
পরে বুঝতে চেষ্টা করেছেন – কীভাবে এর আকৃতিতে পরিবর্তন
হয়েছে। তিনি দেখতে পেয়েছেন – জলবায়ু যখন উষ্ণ হয়, গড় মস্তিষ্কের আকার শীতল হওয়ার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে
ছোট হয়ে যায়।
তিনি দেখতে পেয়েছেন, গত ১০০ বছর থেকে ১০ হাজার বছর সময়কালে উষ্ণ তাপমাত্রার তুলনায় শীতল তাপমাত্রার সময়ে মস্তিষ্কের আকার বড় ছিল। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রাও মস্তিষ্কের আকৃতিতে প্রভাব ফেলে।
এমনকি
বিদ্যমান মানুষের মস্তিষ্কের আকৃতির সামান্য হ্রাস আমাদের শারীরবৃত্তিক কর্মকাণ্ডকে এমনভাবে প্রভাবিত করে, যা সম্পূর্ণরূপে বোঝা এখনও বিশেষজ্ঞদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ
সংক্রান্ত আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্টিবেল।
তবে
হোমো মস্তিষ্কের আকারে ঠিক কী কারণে তারতম্য ঘটে, তা নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
তবে এ গবেষণার ফলাফল দেখাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মস্তিষ্কের আকারের পার্থক্যের
সম্পর্ক রয়েছে।
স্টিবেলের
মতে, এমনকি সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির মতো অ-জলবায়ু কারণগুলোও মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তনে
অবদান রাখতে পারে।
তিনি
বলেছেন, ‘আমরা জানি (মানব) মস্তিষ্ক গত
কয়েক মিলিয়ন বছরজুড়ে বেড়েছে। কিন্তু আমরা অন্যান্য ম্যাক্রোবিবর্তনীয় প্রবণতা সম্পর্কে
কমই জানি। আর হোমিনিনগুলোতে সময়ের সঙ্গে মস্তিষ্ক কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা বোঝা
গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ইস্যুতে খুব কমই কাজ (বৈজ্ঞানিক গবেষণা) হয়েছে।’
সূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট