প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:২৩ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪৬ পিএম
ফাঙ্গাস সংক্রমণের যে প্রক্রিয়া দ্য লাস্ট অব আসে দেখানো হয়েছে, তা সঠিক নয়। অর্থাৎ ফাঙ্গাস প্রকৃতিতে অবস্থান করে, এটি বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। ফাঙ্গাল মহামারি কামড়ের মাধ্যমে ছড়ানোর বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয়। ছবি : এএমসি
বিশ্বের বিনোদন জগৎ মাতাচ্ছে এইচবিওর জম্বি ঘরানার হরর টিভি সিরিজ ‘দ্য লাস্ট অব আস’। ড্রামাটিক এ সিরিজটিতে দেখানো হয়েছে, মানুষ এক বিশেষ ফাঙ্গাসের সংক্রমণে জম্বিতে পরিণত হচ্ছে এবং অন্যদের কামড়ানোর মাধ্যমে সংক্রমিত করছে। আর এটি পুরো বিশ্বেই মহামারি আকারে ছড়িয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসংবলিত এইচবিওর এ সিরিজটির উপস্থাপনা এতই চমৎকার হয়েছে যে, এখন দর্শকের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ফাঙ্গাসের কারণে জম্বি মহামারি আসলেই কি বাস্তব?
এক কথায় বলতে গেলে সত্যিকারের জীবনে ফাঙ্গাল মহামারি সম্ভব। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের মাইকোলজি বিশেষজ্ঞ নরমান ভ্যান রিহজিন এমনটাই বলেছেন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার আপাতত কিছু নেই। নরমান জানান, এখন পর্যন্ত ফাঙ্গাসের কোনো প্রজাতির মধ্যে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি, যার আলোকে বলা যায় যে এটি মানুষের মধ্যে মহামারির সৃষ্টি করতে পারবে। তবে বিষয়টি একেবারেই অসম্ভব নয়, এ ছাড়া বিশ্বে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
কিন্তু ফাঙ্গাস সংক্রমণের যে প্রক্রিয়া দ্য লাস্ট অব আসে দেখানো হয়েছে, তা সঠিক নয়। অর্থাৎ ফাঙ্গাস প্রকৃতিতে অবস্থান করে, এটি বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। ফাঙ্গাল মহামারি কামড়ের মাধ্যমে ছড়ানোর বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয়।
এ ছাড়া আরেকটা যে প্রশ্ন দেখা দেয়, তা হলো প্রকৃতিতে জম্বি ফাঙ্গাস আছে কি না। সত্যি কথা বলতে, এমন জম্বি ফাঙ্গাসের অস্তিত্ব রয়েছে। ফাঙ্গাসের এক বিশেষ প্রজাতি ‘করডিসিপ্স’ পিঁপড়াকে সংক্রমিত করে জম্বিতে পরিণত করে এবং পিঁপড়ার মস্তিষ্ক তথা মন নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। তবে সেই ফাঙ্গাস মানুষের দেহের তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে না এবং সহসা এর জিনগত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
টেলিভিশন সিরিজটির দর্শকদের মনে আরেকটি যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তা হলো ফাঙ্গাস কি মানুষের মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, এটি কি মানুষের ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে পারে? হ্যাঁ। এমনটা হতেই পারে। যেমন ‘ম্যাজিক মাশরুম’ খেয়ে অনেককেই হ্যালুসিনেশনের জগতে ভাসতে দেখা যায়। প্রকৃতার্থে এর জন্য দায়ী এর মধ্যে থাকা ‘সিলোসাইবিন’ নামের এক ফাঙ্গাস, এটি মানুষের মনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। এ ছাড়া ইরগোট থেকে তৈরি এলএসডি যে হ্যালুসিনেশনের জন্ম দেয়। তার কারণও ফাঙ্গাস। বিয়ারপানে যে আচরণে প্রভাব পড়ে, তার জন্য দায়ী ইথানলে থাকা ফাঙ্গাস। ‘ক্রিপ্টোকসাস’ নামের এক ফাঙ্গাস মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডকে সংক্রমিত করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ক্রিপ্টোকসাস’ মানুষের চরিত্র বদলে দিতে পারে। তাই বলে ফাঙ্গাস সংক্রমণ ছড়ানোয় প্রাণী আচরণে প্রভাব ফেলে, এটি আসলে বলা যাবে না।
আরেকটি বিষয় ‘দ্য লাস্ট অব আস’ টিভি সিরিজে বলা হয়েছে, ফাঙ্গাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কোনো প্রতিষেধক নেই। কথাটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ বাস্তব। একই সঙ্গে ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় যেসব ওষুধ রয়েছে, তার সক্ষমতা নিয়েও গবেষণা মহলে বিতর্ক রয়েছে।
সব মিলিয়ে মূল প্রশ্ন যা ছিল, একজন মানুষ কি আসলে জম্বি হতে পারে, এটি কি সম্ভব? বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারে অসম্ভব নয়। তবে ফাঙ্গাস আক্রান্তরা অন্যকে কামড় দিতে ছুটছে, এ ধরনের জম্বি আসলে সম্ভব নয়।
সূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট