প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৬ পিএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৪১ পিএম
ভ্যান্টিলেটরে থাকা রোগীদের ফুসফুসে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে সক্ষম সুপার বাগ সিউডোনোমাস এরুগিনোসার আণুবীক্ষণিক চিত্র। ছবি : ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া পুরো বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থায়
মারাত্মক চাপের সৃষ্টি করছে। উন্নত থেকে অনুন্নত দেশ, সবাই এর ভুক্তভোগী। সাম্প্রতিক
মহামারিতে রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এমন অবস্থাতেও আশার বানী শুনিয়েছেন স্পেনের একদল গবেষক। তারা গবেষণায় দেখতে
পেয়েছেন, জিনগতভাবে পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের
চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এ চিকিৎসা পদ্ধতি গুরুতর ভাবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত,
অথচ প্রচলিত ওষুধ কাজ করছে না, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে কার্যকরী।
যদিও গবেষকেরা এখনও মানবদেহে এ সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাননি। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কাতালোনিয়ার গবেষক
দল এ পরীক্ষার জন্য ইদুরকে ব্যবহার করে ইতিবাচক ফল পেয়েছেন। তারা ল্যাবে ইদুরের ক্ষেত্রে
ড্রাগ প্রতিরোধী সংক্রমনে ‘রি-ইঞ্জিনিয়ার্ড ব্যাকটেরিয়া (জিনগত ভাবে পরিবর্তিত)’ ব্যাকটেরিয়া
প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছেন।
বার্সোলোনার সেন্টার ফর জিনোমিক রেগুলেশনে পরিচালিত গবেষণা অনুসারে জিনগত
ভাবে পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়া-ভিত্তিক চিকিৎসা, কোনো চিকিৎসা ব্যবহার না করার তুলনায়
ইদুরের বেচে থাকার হারকে দ্বিগুণ করেছে।
গবেষকেরা দেখতে পেয়েছেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে উচ্চ ও পূর্ণ ডোজ ব্যবহার করলে
ফুসফুসে সংক্রমণের কোনো লক্ষণই আর থাকে না। একবার চিকিৎসার পূর্ণ কোর্স শেষ হলে শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ৪ দিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য প্রয়োগ করা পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়াগুলোকে
অপসারণ করে।
চমকপ্রদ ও আশাব্যঞ্জক এ গবেষণা নিয়ে লেখা প্রবন্ধ এরই মধ্যে নেচার জার্নালে
প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটির জ্যৈষ্ঠ সহলেখক মারিয়া লুচ এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে অ্যান্টিবায়োটিক
প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াকে ঠেকিয়ে দেওয়ার উপায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এটি একটি প্রতিশ্রুতিশীল নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি
যা হাসপাতালে মৃত্যুর প্রধান কারণকে মোকাবিলা করতে সক্ষম।’
এদিকে এএমআর (অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী) ব্যাকটেরিয়ার বিষয়ে সম্প্রতি সতর্ক
করেছেন খোদ ডব্লিউএইচও’র প্রধান ড. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়সাস।
ড. টেড্রোস আধানম বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ (এএমআর) আধুনিক ওষুধকে দুর্বল
করে দিচ্ছে।’
এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক অবস্থায় কী করা উচিত, সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনাও
দিয়েছেন ডব্লিউএইচও’র প্রধান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী এই হুমকির পরিধিকে সত্যিকার
অর্থে বোঝার জন্য এবং এএমআর-এর জন্য একটি কার্যকর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে আমাদের
অবশ্যই মাইক্রোবায়োলজি টেস্টিং বাড়াতে হবে এবং সব দেশকেই এ সংক্রান্ত ডেটা সরবরাহ করতে
হবে। শুধু ধনী দেশই নয়, গরিব দেশকেও তা সরবরাহ করতে হবে।’
উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই নীতিমালা মেনে অ্যান্টিবায়োটিক মেডিসিন ব্যবহার
করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই অনুন্নত দেশে এই ধরনের নীতিমালা মানা হয় না। এমনকি পিছিয়ে পড়া
জনগোষ্ঠী অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করেন।
আর মাইক্রোবায়োলজি টেস্টিং অনুন্নত দেশে পর্যাপ্ত হয় না বিধায়, এএমআর বোঝার ক্ষেত্রে অনুন্নত দেশে ডেটাস্বল্পতা জটিলতার সৃষ্টি করে।
সূত্র : নেচার