প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৩ পিএম
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫৮ পিএম
স্যামন, সার্ডিনস, ম্যাকেরেলের মতো তৈলাক্ত মাছে বিপুল পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়। ছবি: সংগৃহীত
কিডনি রোগ সারা বিশ্বে রীতিমতো মহামারি আকার ধারণ করেছে। নানান মাত্রার কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। বাংলাদেশেও কিডনি রোগ একটি সাধারণ সমস্যা। এ সমস্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে মাঝারি আকারের অন্তত দুটি তৈলাক্ত মাছ খেলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের (সিকেডি) ঝুঁকি ১৩ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে। সিকেডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিও যদি নিয়ম করে তৈলাক্ত মাছ খান, তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকেজো হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়।
তৈলাক্ত মাছের মধ্যে স্যামন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন বা হেরিংস খাওয়াটাই বেশি উপকারী। তবে কাঁকড়া, ঝিনুকজাতীয় সামুদ্রিক শেলফিসও কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর।
জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ ও ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের একদল গবেষক সিকেডি সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছেন। এতে তারা প্রাথমিক পর্যায়ে সিকেডি শনাক্ত করে কীভাবে তার অগ্রগতি কমানো যায় তার নানান দিক খতিয়ে দেখেন। গবেষণা ফলটি স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী বিএমজেতে প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, তৈলাক্ত মাছ ও অন্য সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে বিপুল পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কিডনি সমস্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমায়।
গবেষণা সংশ্লিষ্ট ম্যাটি মার্কলুন্ড গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে কোন মাছটি সিকেডির ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে, তা আমাদের জানা নেই। তবে ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালনে বিশেষভাবে সহায়তা করে। স্যামন, সার্ডিনস, ম্যাকেরেল এবং হেরিংসে বিপুল পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।’
সপ্তাহে মাঝারি আকারে দুটি তৈলাক্ত মাছ খেলে তা প্রতিদিন প্রায় ২৫০ গ্রাম ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে বলেও জানান ম্যাটি মার্কলুন্ড।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত জমাট বাঁধা, সংকোচন, ধমনী শিথিলকরণ এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষণার অংশ হিসেবে ১২টি দেশ থেকে ১৯টি গবেষণা সংগ্রহ করে যাচাই করা হয়েছে। ওই সব গবেষণাতেও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও সিকেডির ঝুঁকি কমানোর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা হয়েছে।
সম্পূর্ণ গবেষণা প্রকল্পটিতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ অংশ নেন। এসব মানুষের বয়স ৪৯ থেকে ৭৭ বছরের মধ্যে।
নিজেদের গবেষণা নিয়ে সতর্ক করে ম্যাটি মার্কলুন্ড বলেন, ‘আমাদের গবেষণাটি ব্যাপকভাবে করা হয়েছে। তবে তৈলাক্ত মাছ খাওয়া ও কিডনি সমস্যর ঝুঁকি কমানোর বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। তার মানে আমাদের গবেষণাটি ভিত্তিহীন, তাও নয়। তবে, আমরা প্রাপ্ত ফলকে পর্যবেক্ষণমূলক বলতে চাই। অর্থাৎ এ বিষয়ে আরও গবেষণার দরকার আছে। কেবল তখনই পাকা কোনো কথা বলা যাবে।’
বিশ্বে বর্তমানে ৭০ কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে তা প্রায় ২ কোটি। এর মধ্যে ৪০ হাজার রোগীর প্রতি বছরে কিডনি বিকল হয় এবং এদের ৭৫ ভাগই মৃত্যুবরণ করে। ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজনের চিকিৎসার অভাবেই মূলত কিডনি রোগীদের অকালে মরতে হয়। এছাড়া হঠাৎ করে কিডনি বিকল হয়েও আমাদের দেশে প্রতি বছর আরও ২০ হাজারা রোগী মারা যান।
সূত্র: গার্ডিয়ান।