প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৯ পিএম
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫০ পিএম
পাথর দিয়ে বাদাম ভাঙতে পটু ক্যাপুচিন প্রজাতির বানর। ছবি : সংগৃহীত
ঠিক কবে থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় প্রথম মানুষ বসবাস শুরু
করেছিল, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ব্রাজিলে পাওয়া প্রস্তর যুগের সময়কার কিছু পাথুরে সরঞ্জামের
আলোকে গবেষকরা এতদিন বলে এসেছেন, ৩২ থেকে ৫০ হাজার বছর আগে থেকেই দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে
মানুষের অবস্থান। কিন্তু নতুন এক গবেষণা পুরো চিত্রটিকেই উল্টে দিয়েছে।
নতুন করে প্লাইস্টোসিন
যুগের নিদর্শন পরীক্ষার পরে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন, যেসব সরঞ্জাম তৈরির
জন্য মানুষকে এতদিন কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আসলে তৈরি করেছে বানর (ছোট প্রজাতির
প্রাইমেট)। এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রবন্ধটি হলোসিনে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকদের দল ব্রাজিলের পিয়াউই রাজ্যের পেড্রা ফুরাদার প্রত্নতাত্ত্বিক
স্থান থেকে পূর্ববর্তী আবিষ্কৃত লিথিক পাত্রসহ যেসব সরঞ্জাম খতিয়ে দেখেছেন, তা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে প্রস্তর যুগে মানব বসতি থাকার শক্তিশালী ও সুসংহত প্রমাণ হিসেবে
বিবেচনা করা হতো।
গবেষকরা দেখেছেন লিথিক পাত্রগুলো (বাদামের মতো খাবার ভাঙতে ব্যবহৃত) ব্যবহারের
ক্ষেত্রে মানুষ ছাড়াও নিউ ওয়ার্ল্ড ক্যাপুচিন প্রজাতির বানররা খুবই ভালো। আইএফএল সায়েন্সে করা একটি ইমেইলে আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল
(কোনিসেট) থেকে সংক্রান্ত গবেষণার লেখক প্রত্নতাত্ত্বিক অগাস্টিন অ্যাগনোলিন জানান,
ক্যাপুচিন টুলস নুড়ি ও বড় সমতল শিলা দিয়ে গঠিত, যা বাদাম ফাটাতে হাতুড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
বানরদের ব্যবহার করা ক্যাপুচিন টুলস মানবগোষ্ঠীর থেকে খুব
একটা আলাদা নয়। তাই এরই মধ্যে এগুলো মানুষের তৈরি না বানরের- তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে
বিতর্ক শুরু হয়েছে।
যদি অ্যাগনোলিন ও তার সহকর্মীরা কিছু নিদর্শন পুনঃব্যাখ্যা
করেছেন এবং খুঁজে পাওয়া সরঞ্জামগুলোকে মানুষ ও ক্যাপুচিনের বানানো সরঞ্জামের সঙ্গে
তুলনা করেছেন।
এটি করতে গিয়ে তারা দেখতে পেয়েছেন নিদর্শনগুলো ইউনিফেসিয়াল
ফ্লেকিং (এবড়োথেবড়ো) প্রদর্শন করে এর মধ্যে দ্বিমুখী পাতলা আর্টিফ্যাক্ট ও ফ্লেক্সের
(মসৃণ) কোনো প্রমাণ নেই।
গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলো অধিকাংশই মানুষের
সাইটে অস্বাভাবিক কিন্তু ক্যাপুচিন-বানর সাইটে এমন নিদর্শন প্রচুর।
ধ্বংসাবশেষের রূপতত্ত্ব বিবেচনা করে অ্যাগনোলিন বলেছেন, ‘সাইটের
লিথিক প্রযুক্তি বানরের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় থেকে আলাদা করা যায় না।’
অ্যাগনোলিন বলেন, ‘তার ওপরে, পশুর হাড় খাওয়া, কিংবা সাজসজ্জার
মতো প্রতীকী বস্তুসহ কোনো প্রমাণ সাইটে পাওয়া যায়নি, যা মানুষের উপস্থিতির পক্ষে প্রমাণ
হতে পারে।’
গবেষকদের ভাষ্যে, পেড্রা ফুরাদায় উপস্থিত প্রাচীন প্রযুক্তি হাজার হাজার বছর পরেও পরিবর্তিত হয়নি, যা মানুষের বসবাস করা সাইটগুলোর জন্য অস্বাভাবিক। সর্বোপরি এটি আমাদের উদ্ভাবনশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যা আমাদেরকে বানরসহ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। তাই সম্মিলিতভাবে প্রাপ্ত সব ধরনের প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে প্রাথমিক প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলো মানুষের দ্বারা উদ্ভূত নাও হতে পারে, বরঞ্চ এটি ক্যাপুচিন বানরের অন্তর্গত।
সূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট