প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:০৫ পিএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:০৮ পিএম
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ক্রু। ছবি : নাসা
খ্রিস্টের জন্মের বহু আগেই মানুষ তৈরি করেছে পিরামিড। আমাদের উপমহাদেশেই
ষোড়শ শতকে তৈরি করা হয়েছে তাজমহল। এ যুগের ব্যয়বহুল স্থাপনা হিসেবে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুও
ধরা যায়। কিংবা পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে লাগ্রেজিয়ান অঞ্চলে বিচরণ করা জেমস
ওয়েব টেলিস্কোপ। তবে এর কোনোটি মানব জাতির ইতিহাসে নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থাপনা
বা বস্তু নয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানকর্মী হাশিম আল ঘাইলির মতে, এই গ্রহের
এখনও পর্যন্ত মানুষের বানানো সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থাপনা হলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন
(আইএসএস)। এটি নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। পুরো স্টেশনটি
ধাপে ধাপে অরবিটালে নিতে সময় লেগেছে ১৪ বছর (১৯৯৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত)। শুধু
তাই নয়, এই স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নাসাকে প্রতি বছর ব্যয় করতে হয় ৪০০ কোটি ডলার।
এটি এমন এক প্রকল্প যে রাতের আকাশেও এটিকে দেখা যায়। গতিশীল আইএসএসের উজ্জ্বলতা
শুক্র গ্রহের উজ্জ্বলতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
এটি এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে না। সেকেন্ডে ৫ মাইল ও ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৫০০ মাইল বেগে প্রতি ৯০ মিনিটে আইএসএস পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। সেই হিসেবে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে মোট ১৬ বার। প্রতিদিন যেই দূরত্ব আইএসএস অতিক্রম করে, তা পৃথিবী থেকে চাঁদে ঘুরে আসার দূরত্বের সমান।
পুরো প্রকল্পটি এতোই ব্যয়বহুল ছিল যে একক কোনো দেশের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব
হচ্ছিল না। শেষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন নির্মাণে অর্থায়ন করতে হয়েছে ১৫টি দেশকে।
এটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, রাশিয়ার মহাকাশ
সংস্থা রসকসমসসহ ইউরোপ, জাপান ও কানাডার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
অথচ এই ব্যয়বহুল স্থাপনাতে একই সঙ্গে থাকতে পারেন সাধারণত ৭ জন ব্যক্তি।
তবে ক্রু পরিবর্তনের সময় এ সংখ্যার স্বল্পসময়ের জন্য হেরফের হতে পারে। ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ
১৩ জন ক্রু আইএসএসে একসঙ্গে ছিল। এটি ছিল একই সময়ে মহাকাশে থাকা সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তির
রেকর্ড।
এখন পর্যন্ত ২৫৮ জন ব্যক্তি মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের
১৫৮ জন এবং রাশিয়ার ৫৮ জন।
বর্তমানে আইএসএস স্টেশনে গমনের জন্য স্পেসএক্সের রকেট ও ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল
এবং রাশিয়ার সয়ুজ মহাকাশযান ব্যবহার করা হয়।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন মূলত মহাকাশে মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণার
প্ল্যাটফরম। নাসা এটিকে ব্যবহার করে চাঁদ ও মঙ্গলের মতো সৌরজগতের অন্যান্য স্থানে যেতে
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে। এমনকী স্পেসএক্সে চাষাবাদের মতো কার্যকলাপও পরীক্ষামূলকভাবে
চালানো হয়। এ ছাড়া প্রায়ই ক্রুরা স্পেসওয়াকে বের হন।
তবে খুব শিগগির এর আয়ু ফুরাচ্ছে। যদিও নাসা এরই মধ্যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত
এটিকে সার্ভিসে রাখতে অনুমোদন দিয়েছে।
সম্প্রতি চীন তাদের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরি করেছে। মহাকাশকেন্দ্রিক বিভিন্ন মিশনও এরই মধ্যে তারা পরিচালনা করেছে।
সূত্র : স্পেস