প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:২২ পিএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:১৪ পিএম
স্পেনের পিন্ডাল গুহার একটি খোদাই করা স্যালমন মাছ। এটি প্রায় ১৭ হাজার বছর আগের। মাছটির পেটে তিনটি খাড়া লাইন। এগুলো হিসাব করে গুহাচিত্রের পাঠোদ্ধার করেছেন বেন বেকন। ছবি : সংগৃহীত
ইউরোপের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার বছরের পুরোনো অনেক গুহাচিত্র উদ্ধারের কথা আমরা শুনেছি। বাইসন, বলগাহরিণ বা বিভিন্ন মাছের সরল কিন্তু নান্দনিক এসব চিত্র মানুষকে মুগ্ধ করেছে। তবে এগুলোর মধ্যে যে এক ধরনের ‘ভাষা’ লুকিয়ে আছে, তা এতদিন কেউ খেয়াল করেনি। অবশেষে এসব গুহাচিত্রের পাঠোদ্ধার করেছেন যুক্তরাজ্যের এক অপেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিক।
অপেশাদার এই প্রত্নতাত্ত্বিকের নাম বেন বেকন। ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন গুহাচিত্রে ডুবে ছিলেন তিনি। একসময় দুই পেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিকও তার সহায়তায় এগিয়ে আসেন। দীর্ঘ গবেষণার পর তারা যা আবিষ্কার করলেন, তা বিস্ময়কর।
গার্ডিয়ান ও বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ লাইব্রেরিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বরফ যুগের ৬০০-এর বেশি গুহাচিত্র রয়েছে। এসবের মধ্যে ফ্রান্সের লাসকাক্স এবং স্পেনের আলতামিরা গুহাচিত্র বেশ বিখ্যাত। ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে এগুলোর একটা বড় সংগ্রহ রয়েছে। এগুলো নিয়েই কাজ করেছেন বেকন ও তার দল।
বেকন বলেন, ‘এসব গুহাচিত্র অন্তত ২০ হাজার বছরের পুরোনো। বরফ যুগের শিকারি-সংগ্রাহকরা এগুলো এঁকেছেন। এগুলো কেবল শৈল্পিক প্রকাশ নয়, বরং এসব চিত্রের মাধ্যমে শিকারি-সংগ্রাহকরা নানান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে রেখেছেন। বিশেষ করে কোন প্রজাতির প্রাণীর প্রজননচক্র কোন সময়ে শুরু ও শেষ হয় তার তথ্য রয়েছে এসব চিত্রে। এসব চিত্রকে এক ধরনের আদিম লেখার শৈলী বলা যায়, যা চাঁদের হিসাব অনুযায়ী লেখা হয়েছে।’
খানিকটা খেদের সুরে বেকন বলেন, ‘অথচ এগুলো নিয়ে মগ্ন থাকায় লোকে আমাকে টিটকারি দিত, বলত পাগল।’
ব্যক্তিগত গবেষণার একপর্যায়ে ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সহযোগিতা পান বেকন। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক পল পেটিট বলেন, ‘বেকনের গবেষণা এটা প্রমাণ করে যে, বরফ যুগের শিকারি-সংগ্রাহকরা সর্বপ্রথম একটি নিয়মতান্ত্রিক পঞ্জিকা উদ্ভাবন করেন এবং তার আলোকে নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করেন। এর মধ্য দিয়ে আদিম অনেক প্রাকৃতিক ঘটনার রহস্যের দরজা খুলে যাচ্ছে।’
বেকন যে ভাষার পাঠোদ্ধার করেছেন, তা ঠিক কথা বলার ভাষা নয়। কারণ তা কোনো বর্ণের মাধ্যমে লেখা হয়নি। লেখা হয়েছে সংখ্যায়। তা আবার গ্রাফিক চিহ্ন বা পিকটোগ্রাফি এবং লোগো-সিম্বলিক কিউনিফর্মও নয়।
পিকটোগ্রাফি ও কিউনিফর্মের মাধ্যমে প্রথম লিখিত ভাষার উদ্ভব হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার ৪০০ বছর আগে। তৎকালীন সুমের বা বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য ও নিকটপ্রাচ্য অঞ্চলে ওই লিখিত ভাষার উদ্ভব হয়েছিল।